কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক (লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): মেঘবৃষ্টিকে সঙ্গী করে লন্ডনে (London) এসে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দীর্ঘ বিমান যাত্রার ধকলের মধ্যেও চোখ রেখেছিলেন ফাইলে। সময় কম, অথচ পর পর কর্মসূচি। ভারতীয় হাই কমিশনে আমন্ত্রণ থেকে ব্রিটিশ বণিকসভার সঙ্গে লগ্নি বৈঠক, শেষে অক্সফোর্ডে বক্তৃতা। টানা ব্যস্ততা। এয়ারপোর্ট-লাউঞ্জ বা বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী দোতলা বিমান, প্রতি মুহূর্তে সর্বত্র মানুষের উৎসাহ মনে করিয়ে দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর এবারের সফরের গুরুত্ব। অক্সফোর্ডে বাঙালি বা ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও তা অনেকটাই।

রবিবার দুবাই থেকে বিমান এ৩৮০ হিথরো এয়ারপোর্টের মাটি যখন ছুঁল, বাইরে তাপমাত্রা ৮-৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করছে। লন্ডনের ঘড়ি দেখাচ্ছে, সকাল ১১টা ১০ মিনিট। মেঘলা আবহাওয়া। বেরিয়েই বোঝা গেল, সবে বৃষ্টি হয়েছে। শীত শীত রয়েছে। বসন্ত আগতপ্রায়। আর মুখ্যমন্ত্রী নেমেই সোজা বাকিংহ্যাম প্যালেসের কাছে সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেল। আগেও যখন লন্ডন এসেছেন, এখানেই থেকেছেন তিনি। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়েই এসেছিলেন বাকিংহ্যাম প্যালেসের আমন্ত্রণে। পরে আরও একবার ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ব্লু প্লাগ লাগানোর অনুষ্ঠানে। মাঝে অবশ্য লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-সহ আরও কিছু সংস্থার আমন্ত্রণ ছিল। এবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ভাষণ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়, সামাজিক উন্নয়ন। আসলে এই সামাজিক উন্নয়নে মমতার মডেল বিশ্বে বন্দিত এখন। সেই জনপ্রিয়তা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি হচ্ছে।
এদিন সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সরকারের পক্ষ থেকে দুবাই এয়ারপোর্টে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানেই গুজরাটি একটি দল ইউরোপে বিয়ের আসরে যাওয়ার আগে মেহেন্দি অনুষ্ঠানের জন্য নাচ প্র্যাকটিস করছিল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'ডান্ডিয়া জানো তো?' ওরা তখন আহ্লাদিত। মমতার কথায় নাচলেন। ভবনীপুরে তো তিনিও ডান্ডিয়া নৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন। বাঙালি ছাড়াও বহু মানুষ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এভাবে সামনে পেয়ে সেলফি মোবাইলবন্দি করে নিয়েছেন। মমতাও সবার সঙ্গেই আন্তরিক। অনেকে আবার অক্সফোর্ডের ভাষণের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়ে গেলেন। তেমনটাই হয়েছে দুবাই থেকে লন্ডনের দীর্ঘযাত্রার উড়ানেও। বোঝা যাচ্ছিল, ভারতের কোনও সফল রাজনীতিবিদ-প্রশাসকের কাছে অক্সফোর্ডের এই ভাষণ-আমন্ত্রণ কতটা সাড়া ফেলেছে। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর চোখ ফাইলে। পরপর যে ঠাসা কর্মসূচি। হোটেলে এসেও একপ্রস্থ বৈঠক মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব বা তাঁর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের সঙ্গে।
আগামিকাল, সোমবার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মসূচি। সেখানে বাংলার জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীকে (Mamata Banerjee) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২৫ তারিখ শিল্প সম্মেলন। ব্রিটিশ শিল্পপতিরাও আসবেন। ভারত থেকে সত্যম রায়চৌধুরী, উমেশ চৌধুরী ছিলেন। দুবাইতে যোগ দিয়েছেন উজ্জ্বল সিনহা, মেহুল মোহানকা। ওইদিনই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সঙ্গে টেকনো ইন্ডিয়ার চুক্তি সই হবে। বুধবার অর্থাৎ ২৬ মার্চ শিল্প সম্মেলনের পরবর্তী প্রক্রিয়া চলবে। দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক শিল্প বৈঠক হওয়ার কথা। আর ২৭ তারিখ অক্সফোর্ডের সেই ভাষণ। বিজেপি বা সিপিএম যে আমন্ত্রণ নিয়ে আগে থেকে কুৎসা করেছে, সেই কুৎসার জবাবও যেন মিলে গিয়েছে। অক্সফোর্ডের ভারতীয় ও বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই নিয়ে প্রবল আগ্রহ। তাঁরা তাকিয়ে কন্যাশ্রী-রূপশ্রী-লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই প্রশাসনিক কর্ত্রীর ভাষণের দিকে। জানেন, সামাজিক উন্নয়নের মিলতে পারে নতুন দিশা।