স্টাফ রিপোর্টার: 'বাবুমশাই...'। কিংবদন্তী এই ডাক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের 'আনন্দ' সিনেমার। চরিত্রে রাজেশ খান্না। আর সেই 'বাবুমশাই' চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন, যাঁর সিনেমায় নাম ডাক্তার ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আনন্দ-কে নাটকে রূপায়িত করে জনপ্রিয় করে তুলেছেন নাট্যকর্মী সাংসদ পার্থ ভৌমিক। অদ্ভুতভাবে, পার্থ করেছেন ডাক্তার ভাস্করের রোল। অন্যদিকে, আনন্দর ভূমিকায় অন্য ভাস্কর, ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। আর এই যুগলবন্দিতে হিট নাটকের আনন্দ। গিরিশ মঞ্চের পর মধুসূদন মঞ্চ। সেখান থেকে আবার বারাকপুর সুকান্ত সদন। একের পর এক কল শো পাচ্ছে আনন্দ। কিন্তু এই নাটকেই তো রয়েছেন সাংসদ। জনপ্রিয় এই সাংসদ আবার রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের উন্নয়নের কর্মসূচি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দেরি করছেন না। সেই কোন কালে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, "থিয়েটারে লোকশিক্ষে হয়।" সেই আপ্তবাক্য এখন যাত্রা বা নাটকের মতো মাধ্যমের ক্ষেত্রে সত্যি। সেটারই পুরো সদ্ব্যবহার করতে ছাড়তে চাইছেন না পার্থ।

নাটকের সঙ্গে বা অভিনয়ে অবশ্য কোনও আপোস নয়। তবে সংলাপের মাঝে মাঝেই জানিয়ে দিচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড কীভাবে মিলবে? জানানো হচ্ছে, হাসপাতালে এখন চিকিৎসায় খরচ লাগে না। কখনও বা জানিয়ে দিচ্ছেন, বাংলা মানেই তো
মমতা। বোঝাচ্ছেন, কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের রূপকার তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। কোনও অংশে অভিনয়ে খামতি নেই ভাস্করের। গোটা মঞ্চ মাতিয়ে দুরন্ত অভিনয়। 'আনন্দ' ভাস্করের আনন্দে দর্শক হেসেছেন। আর ভাস্কর কাঁদলে দর্শকও কেঁদেছেন। এই ভাস্করই 'বসন্ত বিলাপ'-এর রবি ঘোষের চরিত্রে অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি এবারও অনবদ্য। ডাক্তার ভাস্করে পার্থ শেষ দৃশ্যে একশোয় দুশো। আরও যাঁরা রয়েছেন, দেবযানী সিংহ বা কস্তুরি চক্রবর্তী, সবাই যথাযথ। আলোড়ন ফেলে দেওয়া আনন্দ নাটকের নির্দেশনা অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রনাট্য পদ্মনাভ দাশগুপ্তর। মঞ্চ, আলো ও পরিকল্পনা দেবাশিস রায়ের। সহ-নির্দেশনায় ঋক দেব।
নৈহাটি ব্রাত্যজন অবশ্য আগেও সফল নাটক মঞ্চস্থ করেছে। 'আনন্দ'সব রেকর্ড ভেঙে নতুন পথে চলছে। নেতাজি ইন্ডোর থেকে সোদপুরের লোকসংস্কৃতি মঞ্চ। সর্বত্রই অবশ্য জীবন দীর্ঘায়ত হোক না হোক, যেন সফল হয়, সেই আকুতিই ধরা পড়েছে। সিনেমার মতো নাটকেও 'আনন্দ' আসলে উত্তরণেরই গল্প। মৃত্যুর আগেও জীবনে সঠিকভাবে বেঁচে থাকার রসদ।