সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নভেম্বর ২০১৬। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোটবাতিল ঘোষণার পর দেশজুড়ে হইচই। পুরনো নোট বদলে নতুন নিতে ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইন। এই সময় গোয়ালিয়রে নোটবদলের একটি লাইনে দেখা গেল তাঁকে। লম্বা ঘন কালো দাড়ি। ঘাড় ছাপিয়ে নামা চুল। কাঁধে বন্দুক। কপালে লাল টিকা। পরনে ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। এই লোকটি তাঁর এলাকায় রীতিমতো ‘সেলিব্রিটি’। নাম মালখান সিং। একদা চম্বলের ‘ডাকু’। চার দশক আগে অস্ত্রকে বাই বাই করেছেন। সেই প্রাক্তন দস্যুকে নোট বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে নাকাল হতে দেখলে অবাক হওয়ারই কথা।
কিন্তু, তিন বছর পর আরও অবাক কাণ্ড যে ঘটবে, তখন তা কে জানত! সাতের দশকে চম্বলের দস্যুসম্রাট এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন! উত্তরপ্রদেশের বান্দা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চেয়ে কংগ্রেসের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের চিত্রকূট অঞ্চলে ডাকাত-রাজের বিনাশ করতেই নাকি ৭৪ বছর বয়সী মালখান লোকসভায় যেতে চান। মালখান সিংয়ের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মধ্যে কোনও নতুনত্ব নেই। ১৯৯৯ সালে প্রাক্তন দস্যুরানি ফুলন মাল্লা ওরফে ফুলনদেবী সমাজবাদী পার্টির টিকিটে লোকসভায় প্রার্থী হয়ে জিতেও ছিলেন।
[‘নামের আগে পাপ্পু যোগ করুন’, রাহুলকে কটাক্ষ বিজেপি নেতার]
এপ্রসঙ্গে মালখান একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, “বান্দা লোকসভা আসনে আমাকে প্রার্থী করার জন্য কংগ্রেসের কাছে আবেদন জানিয়েছি। ওই কেন্দ্রে আমার খাঙ্গর রাজপুত সম্প্রদায়ের একটি ভোট শক্তি রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ ডাকাত-রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কারণ, তারা এর কারণে নানা অকথিত নির্যাতনের শিকার হয়। অমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই এলাকা থেকে নির্বাচিত হলে দাগি দস্যুদের কায়েম রাখা সন্ত্রাস চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেব।”
[বিশেষ সক্ষম ভোটারদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা কমিশনের, বীরভূম পিছিয়ে থাকায় ক্ষোভ]
১৯৮২ সালে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন সিংয়ের কাছে আত্মসমর্পণের আগে জেলা সদর শিবপুরীতে থাকতেন মালখান। তাঁর দাবি, বান্দায় ২.৩৩ লাখ খাঙ্গর রাজপুত সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। তিনি বলেন, “এছাড়া উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন লোকসভা এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরও ৫৫ লাখ খাঙ্গর রাজপুত আছে। বান্দায় আমাকে প্রার্থী করা হলে অন্যান্য কেন্দ্রেও কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য আমি আমার সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করব।”
[প্রার্থীর ছবি দিয়ে দেওয়াল লিখন, লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে কমরেডদের লাইন বদল]
আত্মসমর্পণের সময় চম্বলের ত্রাস মালখানের বিরুদ্ধে ৯৪টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ১৭টি খুনের, ১৯টি খুনের চেষ্টা, ২৮টি অপহরণ, ১৮টি ডাকাতির মামলা। এখন মালখান ধার্মিক জীবনযাপন করেন। এখন কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হতে চাইলেও দু’দশক বিজেপির সঙ্গে যোগ রেখেছেন মালখান। কিন্তু কংগ্রেস কী তাঁকে প্রার্থী করতে রাজি হবে? চিরাচরিত ‘বেপরোয়া’ চরিত্রের মালখানের জবাব, “কংগ্রেস, বিজেপির মতো বড় দল, বা ছোট কোন দল থেকে আমাকে টিকিট না দেওয়া হলেও আমি মোটেই ক্ষুণ্ণ হব না।”
The post লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কংগ্রেসের দ্বারস্থ ‘দস্যু সর্দার’ appeared first on Sangbad Pratidin.