বক্স অফিস ঝড় তুলতে আসছে মির্জা। ইতিমধ্যেই ট্রেলারে চমক দিয়েছেন এই অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা জুটি। ছবি মুক্তির আগে ছবি নিয়ে বিশেষ আড্ডা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
ইদের মুখে, ভোটের মরশুম এবং আইপিএল– এমন সময় ‘মির্জা’ আসছে
(৯ এপ্রিল)। চিন্তা রয়েছে?
অঙ্কুশ: না, সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না। এই দুটো বড় ইভেন্টের নাম যেমন করলেন, তার মধ্যে তৃতীয় বড় ইভেন্ট হচ্ছে ‘মির্জা’। কারণ, ‘মির্জা’র স্পেশালিটি ইজ অ্যাট পার। যদি ছোটখাটো কিছু হত, তাহলে টেনশন হত। মির্জা ইটসেলফ ইজ অ্যান ইভেন্ট।
রিলিজের ক্ষেত্রে গরম একটা ফ্যাক্টর হতে পারে?
অঙ্কুশ: ছবির মুড ঠিক থাকলে, আর মানুষের মনে উত্তেজনা থাকলে কোনও কিছুই আটকাতে পারে না মানুষকে হলমুখী হতে। গরমটা তো খুবই সামান্য একটা অজুহাত।
অঙ্কুশের সাহস দেখে ঐন্দ্রিলা কী বলবেন?
ঐন্দ্রিলা : সাহসটা কোথা থেকে পেয়েছে একটু জিজ্ঞেস করুন তো!
অঙ্কুশ : অনেস্টলি, ঐন্দ্রিলার থেকেই পাওয়া। আর সত্যি বলতে, কলকাতার ম্যাচ হলে তবে আইপিএল নিয়ে এখানে উন্মাদনা থাকে। মানে যখন যে স্টেটের খেলা থাকে। আর ভোট আমাদের রিলিজের প্রায় দশদিন পরে। এই চত্বরে তো আরও পরে। তাই অসুবিধা নেই।
[আরও পড়ুন: ‘আমি জয়ার মতো নই’, নিজেকে ‘ভালো মানুষ’ বলে মিসেস বচ্চনকে খোঁটা মৌসুমীর]
প্রথমবার প্রযোজক হিসাবে অঙ্কুশের আত্মপ্রকাশ ‘মির্জা’ দিয়ে। কেমন লাগছে?
অঙ্কুশ : অনেকরকম মিক্সড ফিলিংস চলছে। প্রযোজক হওয়া আমার খুব পরিকল্পনা মাফিক নয়, হঠাৎ করে হওয়া। এমন একটা সময়ে হলাম যখন আমি প্রস্তুত না। আমি এখনও প্রস্তুত না। নিজের জমানো টাকা দিয়ে সিনেমা করলাম। যারা শুনছে, তারা হাসছে। আমি প্রচুর ঠকেছি। আমার প্যাশন, ডেডিকেশনের সঙ্গে যদি কেউ ম্যাচ না করে তাকে আমি আমার পার্টনার বানাব না। সেটাই প্রত্যেকবার হয়েছে। অর্ধেকই তো ব্ল্যাক মানি হোয়াইট করতে আসে। একসময় আমি ঠিক করলাম, নিজের টাকা থেকেই বানাব, কিন্তু বানাতে আমাকে হবেই। আমি জানতাম, প্রথমত আমাকে দুর্ধর্ষ কোয়ালিটির প্রোডাক্ট বানাতে হবে। পরে ভাবব বিজনেসের কথা।
ঐন্দ্রিলার কাস্টিং কীভাবে? প্রযোজক ঐন্দ্রিলার কাছে এসেছিল, নাকি উল্টোটা?
ঐন্দ্রিলা : আমি এত বছর অপেক্ষা করেছি যে, একবার ও প্রযোজক হোক, তারপর আমি কী করি (হাসি)। সত্যি বলতে, ভালো লেগেছিল অঙ্কুশ খুব রেসপেক্ট নিয়ে বলেছিল, ‘তুমি আগে দ্যাখো, চরিত্রটা যদি ভালো লাগে তবেই তুমি করবে। না হলে, মুখের ওপর না বলবে, যেমন সবাইকে বলো।’ চরিত্রটা ভালো লেগেছিল। তাও কিছু জায়গায় মনে হয়েছিল, এরকম হলে ভালো। পরে দেখলাম ও আরও অনেককিছু ভেবে রেখেছে। তখন মনে হল, এতটা ভরসা কী করে আমার ওপর আছে!
অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা জুটি ছবির বড় ইউএসপি। আর কী মানুষকে টানতে পারে?
অঙ্কুশ : সবথেকে বড় ইউএসপি ‘জনার’। এটাই মানুষ চাইছে। কিন্তু মেকিংয়ের অভাব বলে ভরসা করতে পারছে না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, ‘মির্জা’-কে দেখতে যেন ওয়ান অফ দ্য মোস্ট প্রিমিয়াম লুকিং ফিল্ম বলে মনে হয়। কমার্শিয়াল ছবিকে বাঁচানোর জন্য, কমার্শিয়াল ছবি করলাম বলা খুব সোজা। কিন্তু বানানো শক্ত। সাউথের ছবি এসে এমন খেঁাচা দিয়েছে যে দেখো, কমার্শিয়াল ফিল্ম কী করে বানাতে হয়। দেখো সেলিব্রেটেড ফিল্ম কী। সবাই এখন ওটাই করছে। বাংলা এবং আরও রিজিওনাল ইন্ডাস্ট্রি সেখানে পিছিয়ে। কেন পিছিয়ে, সেটা সংশোধন করার একটা বেবি স্টেপ ‘মির্জা’। সবার জন্য এই ছবি। মাস অডিয়েন্স কিন্তু এখন অনেক সেন্সিবল। অনেকে আছে বলে, ‘আমি তো রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালাদের জন্য ছবি বানিয়েছি’। এটা বলে ‘ভুসি’ বানিয়ে দেয়। যেন এদের যা দেখাব তাই দেখবে। এটা ভাবা ভুল। তাঁদের জন্যও সেন্সিবল সিনেমা বানাতে হবে।
প্রযোজক হিসাবে আত্মপ্রকাশের সময় অনেককে যেমন পাশে পেয়েছেন, তেমন কোথাও কি ইন্ডাস্ট্রির পলিটিক্স ফেস করেছেন?
অঙ্কুশ : একদমই না। যারা ছবির সঙ্গে জড়িয়ে, তাদের কাছে এটা ‘বেবি’র মতো স্বাভাবিকভাবে। যারা জড়িয়ে নেই তারাও সমর্থন করেছে। ভেন্ডর্স, এগজিবিটর, ডিস্ট্রিবিউটর প্রত্যেকে।
ঐন্দ্রিলা : যবে থেকে লোকজন জানতে পেরেছে অঙ্কুশ একা দায়িত্ব নিয়ে ‘মির্জা’ করছে, পয়সাটাও ওর পুরো লাগিয়েছে। তবে থেকে জেনুইন সাপোর্ট, ভালোবাসা পেয়েছে সবার কাছে।
ছবিতে খুব বড় মাপের একটা নাচের সিকোয়েন্স রয়েছে। প্রায় আটশো-হাজারজন তাতে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ঐন্দ্রিলা পা মিলিয়েছেন, চাপ কীভাবে নিলেন?
ঐন্দ্রিলা : টাইটেল ট্র্যাক বলতে সবাই জানে, হিরো একা নাচবে। আর মেল ভয়েস হলে তো আরওই। অঙ্কুশ আমাকেই করতে বলে। বলেছিলাম, ‘টাইটেল ট্র্যাক তোমার হওয়া উচিত। আমরা দুজনেই করব?’ খুব খুশি হয়েছিলাম আমাকে বলায়। আমার কেরিয়ারের সব থেকে বড় গান এবং প্রথম কমার্শিয়াল গান এটা। খুশি হব না? পুরো সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। সাত-আটদিন ধরে প্রাকটিস করেছি। খুব ভালো কোরিওগ্রাফার পেয়েছি– রাহুল। আমাকে ও পুরো তৈরি করে দিয়েছিল। গোটা টিমের ইন্সট্রাকশন ফলো করেছি। তারপরেও অঙ্কুশকে পঞ্চাশবার প্রশ্ন করেছি যে, সত্যি ভালো লাগছে কি না। (হাসি)
এরপরে তো লোকে বলবে, বয়ফ্রেন্ড প্রযোজক অতএব ঐন্দ্রিলা বেশি সুযোগ পাবে।
অঙ্কুশ : আমাদের ১৩ বছরের সম্পর্ক। তার মধ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করলাম ‘ম্যাজিক’-এ, সেটা ২০২০ সাল। তাই বলব, গত আট বছরে কিন্তু কিছুই করিনি। আমার লজ্জা লাগে ওর ব্যাপারে রেকমেন্ড করতে। ‘ম্যাজিক’ প্রথম ওর কাছে আসে, তারপর আমার কাছে। ‘লাভ ম্যারেজ’-এও আগে ওকে লক করা হয়েছে, পরে আমাকে। ‘মির্জা’-তে ওকে নেওয়ার প্রধান কারণ, অনেক টাকা লগ্নি করেছি। ইনসিকিওরড হয়ে আছি। সেখানে একজন তুখড় অভিনেত্রীকে চেয়েছিলাম।
এমন একটা সময় ‘মির্জা’ আসছে, যখন নির্বাচনের প্রসঙ্গ বার বার উঠে আসছে। আপনাদের কাছে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব আসেনি?
অঙ্কুশ : ডিরেক্টলি-ইনডিরেক্টলি টুকটাক আসে না, তা নয়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পলিটিক্স নিয়ে এমন কিছু বলেছি, তাতে আর আমাকে খুব একটা বলতে আসে না। যে বেফাঁস কিছু বলে দেবে, ওকে আর দলে নিস-ই না (হাসি) যে দলই হোক। আমি কাজ, শুটিং, বাড়ি নিয়েই থাকি। রাজনীতি বুঝি না। আর মানুষের পাশে দাঁড়ানো– আমি আমফান, কোভিডের সময়েও করেছি। অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর যতটুকু পেরেছি করেছি। ওতেই শান্তির ঘুম।
আপনাদের সহকর্মীরা অনেকেই প্রার্থী। তাঁদের কী বলবেন?
ঐন্দ্রিলা : আমার কাছে অনেকবারই অফার এসেছে। ভেবে দেখেছি আমার ভালোবাসার জিনিসটা কী? অভিনয়। আমার কাছে যদি চয়েস আসে ‘মির্জা’ ছবির পার্ট করবে, না ইলেকশনের প্রচারে যাবে? আমি পার্ট-ই করব। কিন্তু লোভের চক্করে ইলেকশনে হ্যাঁ বললাম, এটা আমি জীবনে পারব না।
অঙ্কুশ : লোভের চেয়েও বড় কথা, ইনসিকিওরিটি চলে আসে যে, মানুষ কী বলবে, যে তুমি গেলে না, হাজিরা দিলে না। এদিকে আমার মন ফিল্মের দিকে। এতে
অন্যায় নেই। কিন্তু ইউ আর নট মেন্ট ফর দিস। ফেলো কলিগদের কী বলব? কিছুই বলতে চাই না। শুধু হাতজোড় করে বলব, যারা বোঝো না রাজনীতি, তারা যেও না। বুঝলে, আত্মবিশ্বাস থাকলে যাও। এবং তারা করছেও। দেব-এর কথা আমি সবসময় বলি। মিমি, ট্রায়েড আ লট। মিমি অনেক অনেস্ট। আমাদের মতো
ভাবে, অনেকটা ভাবে। আননেসেসারি ট্রোলিংয়ে কষ্ট পায়। সরে এসেছে ঠিকই, তবে সততার সঙ্গে ছিল। আরও অনেকে আছে। তবু বলব, যারা বোঝো না, যেও না এই পেশায়। এটা পয়সা কামাবার জায়গা নয়। পাওয়ারের লোভ কোরো না। রাজ্যটা আর নষ্ট কোরো না।
ঐন্দ্রিলা : কারণ, এটা দেশের ব্যাপার। মানুষের জীবনের বিষয়। একটা বাজে ছবি দিলে মানুষের জীবনে অত ক্ষতি হবে না। কিন্তু যে দায়িত্ব নেব বলে নিতে পারছি না, মানুষের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সেটা না করাই ভালো।