রণবীর সিং ডাকতেন বিশেষ নামে। করণ জোহর কীভাবে স্বাগত জানান ধর্মা প্রোডাকশনের অফিসে? ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবির শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
করণ জোহরের ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ (Rocky Aur Rani Ki Prem Kahani) ছবিতে কাজ করে ফেললেন। অফারটা আসে কীভাবে?
এখনও কিছুটা শুটিং বাকি আছে (হাসি)। ধর্মা প্রোডাকশনের অফিস থেকে প্রথমে আমাকে যোগাযোগ করে। সেটা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস হবে। ওরা আমাকে একটা অডিশন পাঠাতে বলে। সেই সময় আমি বাড়ি শিফটিংয়ের কাজে ব্যস্ত। সময় পাচ্ছিলাম না। এদিকে ওরা ফোন করে তাগাদা দিচ্ছিল। বললাম যে, হাউস শিফটিংয়ের মধ্যে আছি। আমি তো ভালভাবে কিছু দিতে পারব না। ওরা বলে, যেভাবে হোক একটা কিছু রেকর্ডিং করে পাঠান। প্রায় দিন সাতেক এরকম ফোন করার পর, আমি একদিন বললাম যে, ‘ট্রায়াল রেকর্ড করে পাঠাচ্ছি। এটা চূড়ান্ত নয়। কোনওমতে আপনাদের জন্য করে পাঠাচ্ছি’। তখন ওরা কী লুক চাইছে সেটাও পাঠায়।
তারপর?
ওমা! তারপর আমি দেখি আমারই একটা ছবি পাঠিয়েছে (হাসি)! ওদের বললাম যে, আমার এখনকার চুল বড়। ওরা বলল, কোনও অসুবিধে নেই। রেকর্ডিং করে পাঠালেই হল। আমি উজানকে ধরলাম, যে রেকর্ড করে দে। সন্ধেবেলা সেটা পাঠানোর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফোন এল। যে প্লিজ, ডেট ফাঁকা রাখুন, খুব পছন্দ হয়েছে করণ জোহর স্যরের।
দিনের দিন চূড়ান্ত হয় তাহলে?
হ্যাঁ, আর ওরা জানতে চায় সেই সপ্তাহেই মুম্বই গিয়ে করণের সঙ্গে দেখা করতে পারব কিনা, আমার বাড়ির শিফটিংয়ের কারণে চাপ ছিল। তো দিন দশেক পর মুম্বই গেলাম। এবং রোল সম্বন্ধে কথাবার্তা বলে চূড়ান্ত হয় বিষয়টা।
তখন করণ জোহরকে মিট করলেন?
করণ নিজেই আমাকে রোলের ডিটেল, সিন ইত্যাদি বুঝিয়ে দেয়। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা! আমাকে নিয়ে ঢুকবে বলে অফিসে রীতিমতো অপেক্ষা করেছিল করণ। খুব সুন্দর সম্মান দিয়ে ওয়েলকাম জানিয়েছিল আমাকে। বললাম, ‘ভেরি সরি, খুবই খারাপ একটা রেকর্ডিং পাঠিয়েছিলাম তোমাকে।’ করণ বলে, ‘না, না। তোমার কথা বলার শুরুটুকু দেখেই বুঝে গিয়েছি তোমাকেই আমার প্রয়োজন।’
কী ধরনের আপনার চরিত্রটা?
সেটা বলা বারণ (হাসি)। দেখলেই বুঝবে, আমার সম্বন্ধে খোঁজখবর করেই ওরা আমাকে ডেকেছে।
রণবীর সিংয়ের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ও বাবা সে অসাধারণ! প্রথমে ও গ্রিট করে দারুণ উষ্ণতার সঙ্গে। সকলকে জড়িয়ে ধরে এসেই। সিন রিহার্সালে তার কোনও ধৈর্যচ্যুতি হয় না। আমরা বারবার রিহার্সাল করে নিতাম। করণ সেরকমভাবেই টেক করে। রণবীরের তো সাংঘাতিক এনার্জি, সারাক্ষণ শটের ফাঁকে ফাঁকে নিজের গল্প বলত। তার সঙ্গে ও যেটা করে, খুবই রেয়ার কোয়ালিটি বলতে পারো। সহ-অভিনেতাদের প্রশংসা করে দারুণ। ওর সঙ্গে শুট করার পরেরদিন থেকে এসে যেমন, আমাকে বলত, তোমার এই ডেলিভারিটা অসাধারণ ছিল। শুধু তাই নয়, আমারটা আবার করেও দেখাত (হাসি)। আমাকে রণবীর সেটে ‘চুন্নু’ বলে ডাকত। হঠাৎ একদিন এসে বলে, “আমি তোমাকে ‘চুন্নু’ বলে ডাকব। ‘চুন্নু’ মানে ‘স্মল’।” ওর বোধহয় আমাকে সাংঘাতিক ছোটখাটো কিছু মনে হয়েছে। আমি অবশ্য ওকে নাম ধরেই ডাকতাম (হাসি)।
আলিয়া ভাটের সঙ্গেও তো শট ছিল আপনার?
হ্যাঁ, আলিয়া ছাড়াও শাবানা আজমি, জয়া বচ্চন, ধর্মেন্দ্র সকলের সঙ্গে শট ছিল।
কার সঙ্গে শট দিয়ে সবচেয়ে উপভোগ করলেন?
রণবীরের সঙ্গে খুব এনজয় করেছি। ইনফ্যাক্ট সবার সঙ্গেই এনজয় করেছি। আসলে রণবীরের এনার্জিটা আলাদা! এবং সারাক্ষণ সহ-অভিনেতাকে অবজার্ভ করে। আমাকে এমনও বলেছে যে, কী কী শিখেছে আমার থেকে। এটা ওর মতো কোনও অ্যাক্টরের পক্ষে বলা অনেকটা বড় বিষয়। একদিন তো আমার একটা সিন শেষে রণবীর, করণ সকলে মিলে হাততালি দিয়ে উঠল সজোরে!
বাংলা থেকে তো আরও কয়েকজন রয়েছেন এই ছবিতে?
হ্যাঁ, টোটা (রায়চৌধুরি) রয়েছেন।
পার্টি হল একদিনও?
একদিন পার্টিতে সবাইকে টা টা করে বেরিয়ে আসছি, রণবীর বেরবার আগে আমাকে আটকাল। জড়িয়ে ধরল, গালে চুমু দিল। আধঘণ্টা ধরে কথা বলল, ‘তুমি জানো না কী ভাল করছ!’ এই সব আর কী। তখন ‘৮৩’ ছবির শুটিং হয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়েও কথা হয়েছিল। বলল যে, কপিল দেবের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটিয়েছে।
আপনার নিশ্চয়ই এবার ‘৮৩’ দেখা হয়ে গিয়েছে?
হ্যাঁ, গত পরশু দেখলাম।
রণবীরকে কিছু জানানোর সুযোগ হল?
আমি ফোন নম্বর ইচ্ছে করেই চাইনি ওর থেকে। তবে আমি টুইটারে লিখেছিলাম। দেখলাম রণবীর সেটা রিটুইট করেছে।
সব মিলিয়ে আতিথেয়তা কেমন মুম্বইয়ের?
ভীষণ উষ্ণ। বিশেষ করে বলব, যেদিন প্রথম কাজ করতে গেলাম আমরা, জয়া বচ্চন সেটে এসে বললেন, “এরা কিন্তু কলকাতার খুব নাম করা অভিনেতা।” (হাসি)
মোট কতদিনের শুটিং ছিল?
প্রায় দিন কুড়ি তো বটেই। জানুয়ারিতে আবার যাব।
টলিউডের সঙ্গে তফাত কী বুঝলেন?
প্রথমত, স্কেলের একটা তফাত তো রয়েইছে। আমরা যে সিনটা একদিনে শেষ করব, সেটা ওরা হয়তো তিন-চার দিনে শেষ করবে। কাজেই তার ফলে মনোসংযোগ, রিহার্সাল বেশি হয়। করণ যতক্ষণ না পারফেক্ট শট পাচ্ছে টেক নিয়েই যায়। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা বলতে পারো (হাসি)।