shono
Advertisement
Dev

'আমি বলব উৎসবে ফিরুন এবং প্রতিবাদও রাখুন': দেব

পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে দেবের 'টেক্কা'।
Published By: Akash MisraPosted: 12:35 PM Sep 27, 2024Updated: 02:03 PM Sep 27, 2024

পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে দেবের 'টেক্কা'। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই ছবিতে একেবারে নতুন অবতারে দেব। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা? বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেব, শুনলেন শম্পালী মৌলিক। 

Advertisement

এ বছর মায়ের কাছে কী চাহিদা?
দেব: শান্তি, স্বাধীনতা, সম্মান এবং ন‌্যায়।

এমন একটা পরিস্থিতিতে পুজোর ছবি আসছে, যখন শহরের মন কিছুটা ভারাক্রান্ত।
দেব: সিনেমা সবসময় মানুষের মন ভালো রাখারই কারণ ছিল। সেখানে সিনেমা, প্রতিবাদের ভাষার থেকে আলাদা নয় বলব। সিনেমা আনা মানে, কাউকে বলছি না প্রতিবাদ করবেন না। অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের এই পুজোটা রোজগারের সময়। হকাররা, ঢাকিরা, এছাড়া পুজোর সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষ। ঢাকিরা গ্রাম ছেড়ে পোঁটলা বেঁধে চলে আসে, কেউ বাচ্চা নিয়েও শহরে আসে। তাদের কোন ক্লাব নেবে তারও নিশ্চয়তা থাকে না সবসময়। তাদের পুজোই শুরু হয় দশমীর পর, বাড়ি ফেরার সময় যখন নতুন জামাকাপড় কিনে নিয়ে যায়। আমার মনে হয়, পুজোর অনেকগুলো দিক, উৎসবের অনেক ভাষা আছে। সিনেমাও তার মধ্যে একটা ভাষা। যে ঢাকিরা দশদিনের রোজগারের জন‌্য এখানে আসছে, তাদের তো কোনও দোষ নেই। সেও জাস্টিস চায়। অনেক ছোট ব‌্যবসায়ীর কাছে এই পঁাচ-ছদিনের ব‌্যবসাটাই পাঁচ-ছমাসের রোজগার, সে-ও জাস্টিস চায়। আমার একটা সিনেমা রিলিজ হলে, মিনিমাম কুড়ি-পঁচিশজন কাজ পায়। যদি ১০০টা হলে রিলিজ করে, তার প্রভাব সরাসরি পড়ে ছয়-সাত হাজার মানুষের ওপর। মনখারাপ ঠিকই। কিন্তু সিনেমা হলে ছবি চললে এরাই দুটো বেশি টাকা রোজগার করবে। ওরাই তখন সিসিটিভি লাগাবে নিরাপত্তার জন‌্য। সিকিউরিটি বাড়াবে নারীর সুরক্ষার জন‌্য। পুরোটাই একটা সিস্টেম। একটা জাস্টিস পাওয়ার জন‌্য, অনেকের সঙ্গে ইনজাস্টিস করা যায় না।

ঠিকই...
দেব: আমি বলব উৎসবে ফিরুন এবং প্রতিবাদও রাখুন। আমার লড়াই শুধু একটা তিলোত্তমাকে নিয়ে নয়। সারা ভারতে আর কোনও মেয়ের নাম যেন তিলোত্তমা, নির্ভয়া বা অভয়া রাখতে না হয়, সেইটা নিয়ে। এই যে কনস্টিটিউশনাল ল, এটাকে রিফর্ম করতে হবে। যারা রেপিস্ট, প‌্যারোলে যেন বেরতে না পারে। এই যে অভিযুক্ত হলেও, তার ফাঁসির প্রক্রিয়ায় তিন-চার বছর লেগে যায়, সেটাকে বদলাতে হবে। ফঁাসি-ই যদি ন‌্যায় হয়, সেই সময়টা কমাতেই হবে। ধর্ষণের সংখ‌্যা বছরে নব্বই হাজার, সেটা কী করে শূন‌্যতে নিয়ে আসা যায় দেখতেই হবে। সে জন‌্য একটা নবান্ন অভিযান করে লাভ নেই। সমস্ত দল, সব মুখ‌্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বসে নতুন কনস্টিটিউশনাল ল আনার কথা ভাবতে হবে। যা নারীকে আরও সুরক্ষা দেবে।


পুজো এসেই গেল। আগে ‘জুলফিকার’-এ সৃজিতের সঙ্গে কাজ করেছেন। এই প্রথমবার আপনি প্রযোজক-নায়ক সৃজিত পরিচালকের ভূমিকায়। কেমন অভিজ্ঞতা?
দেব: সৃজিতের বিষয়ে আমি যেটা পছন্দ করি– ওর প‌্যাশন। শেষ পর্যন্ত লেগে থাকে একটা কাজ নিয়ে। আমি প্রযোজক হিসাবে অনেক ছবি করে ফেললাম, অনেক নতুন ট‌্যালেন্ট লঞ্চ করেছি। কিন্তু তাদের যেন এই ওনারশিপ অতটা নেই, যতটা সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের আছে। তার মানে এই নয়, অন‌্যরা খারাপ। তাদের হয়তো ওই জ্ঞান নেই, কীভাবে প্রোমোশন করতে হবে, বা কতটা তার থাকা উচিত। হয়তো সেই কারণে ওরা পিছনে থাকে। কিন্তু সৃজিতকে রাত দুটো-তিনটের সময়ও পাওয়া যায় এবং সবকিছুতে লেগে থাকে। এটা ওর সেরা।
একটা সময় পর্যন্ত ‘নিশ’ অডিয়েন্স ভাবতেই পারত না সৃজিত মুখোপাধ‌্যায় এবং দেব জুটি বেঁধে পুজোর ছবি আনবে। কী বলবেন?
দেব: একটা টাইম অবধি কমার্শিয়াল ছবির দর্শকও ভাবতে পারত না যে দেব, সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে জুটি বাঁধবে, এটাও সত্যি (হাসি)। কাউকে ছোট বড় করে লাভ নেই। বলব সিনেমার দর্শক কমেছে এবং বেড়েছে একইসঙ্গে। নতুন দর্শক যোগ হয়েছে, আবার কিছু পুরনো দর্শক ছেড়ে গেছে। এখন যেটা দরকার ভালো সিনেমা এনে দর্শককে বিনোদন দেওয়া। ভারতজুড়ে সিনেমা যতটা লার্জার দ‌্যান লাইফ হচ্ছে, যে ধরনের কনটেন্ট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে, বাংলা ছবি যেন পিছিয়ে না থাকে।

এবারে ছবির বক্স অফিস নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে এবং পুজো রিলিজের উদ্দীপনা অনেক কম। এটা কি চিন্তায় রেখেছে?
দেব: অফকোর্স চিন্তায় রেখেছে। যতদিন যাবে বিষয়টা আরও বুঝতে পারব। এই উৎসবটা শুধুমাত্র আন্দোলনে জয়ী হওয়ার উৎসব নয়, এই উৎসব অনেকগুলো মানুষের জীবিকার সম্বল। তিলোত্তমা যেন ন‌্যায় পায়, সেটা যেমন একটা অঙ্গীকার। তেমন অনেক মানুষের অর্থনীতি এর সঙ্গে জড়িয়ে। আমি, শিবু, মিঠুনদার এবারের ছবি যদি কম চলে, আমাদের রুজিরুটিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু অনেক মানুষের রুজিরুটিতে এফেক্ট করবে। তাদের ইকো সিস্টেম বা সাপোর্ট সিস্টেম ভেঙে যেতে পারে। যাদের এফেক্ট করে না তারাও ধীরে-ধীরে বুঝতে পারছে।
‘টেক্কা’ ছবির মাধ‌্যমে চাকরিপ্রার্থীদের সমস‌্যাও উঠে আসবে।
দেব: আমি বলব, সিস্টেমের কথা উঠে আসবে। সিস্টেম মানে সরকার নয়, নিয়ম। এই যে বছরের পর বছর যে নিয়মে সরকার চলে, এটা শুধু বাংলার নয়, ভারতের সিস্টেম। কীভাবে চাকরি আসে, আর কীভাবে একটা মানুষের চাকরি চলে যায়। এবং একটা গরিব মানুষের চাকরি চলে গেলে হয়তো কোনও প্রশ্ন ওঠে না কিন্তু একজন বড়লোকের চাকরি চলে গেলে, তাকে নিয়ে হইচই হয়। আমাদের দেশের হায়ার্কির বিরুদ্ধে ছবিটা প্রতিবাদ করছে। এই সিস্টেমটা আমাদের বদলাতে হবে।

৪৮ ঘণ্টার হোস্টেজ ড্রামা এটা। অপহরণের গল্প, ভাস্কর চট্টোপাধ‌্যায়ের লেখা। যেখানে আপনি একজন সাফাইকর্মীর ভূমিকায়। নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন কীভাবে? জমাদারকে কি ওভাবে কাছ থেকে দেখেছেন?
দেব: আমি নিজে ঘর পরিষ্কার করি। নিজের বাবার কেটারিং করতাম। দেবকে একটা সংখ‌্যক মানুষ ভালোবাসে, একটা সংখ‌্যক ট্রোলও করে কিন্তু সেলিব্রেট করে। ট্রোলিং করা মানেও সে তোমাকে নিয়ে ভাবছে। অবার কেউ কেউ আমাকে এত ভালোবাসে আমার জন‌্য পুজো দেয়। সেখান থেকে নিজেকে বিশ্বাস করাতে হত, ‘প্রধান’ বা ‘বাঘাযতীন’-এর ছেলেটা কিন্তু ‘টেক্কা’-র ‘ইকলাখ’ নয়। একদম আলাদা। সেটা ভাঙার জন‌্য একটা প্রস্তুতি ছিল আমার। দেবের ফ‌্যানেরা তাকে যেমন দেখতে চায়, ইকলাখ কিন্তু তেমন নয়। এটা আমার অন‌্যতম সাহসী চরিত্র। এই ধরনের মানুষের রাগ, হতাশা, অ‌্যাগ্রেশন তোমার-আমার মতো নয়। সেটা বিশ্বাসযোগ‌্য করতে হত। প্রথমেই দেব-কে বাদ দিতে হত। না হলে ওই কথাগুলো বলতে পারতাম না। তারপর শরীরী ভাষা বদলাতে হয়েছে। যে সমাজে অবহেলিত-অত‌্যাচারিত, তাকে অন‌্যরকম দেখতে। এদের মুখ কেউ মনে রাখে না। সাধারণ দেখতে একটা মানুষ, কিন্তু অসাধারণ কিছু করতে চলেছে। ভালনারেবল, কতটা লড়তে পারবে জানে না, কিন্তু শুরু করেছে। হয় নিজের জীবন দেবে, নয় কারও জীবন নেবে, এমন মরিয়া। ‘ইকলাখ’-কে ঠিক করে দেখাতে পারলে সবাই ছবিটা দেখবে, জানতাম। চরিত্রটা গ্রহণ করা এবং ফুটিয়ে তোলা সবচেয়ে শক্ত ছিল।


পুজোর বাংলা ছবির সংখ‌্যা তিনটে। আর একটি ইংরেজি ছবি, দুটি হিন্দি ছবি। সেখানে লড়াইটা বাংলা ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, না কি হিন্দি ছবির সঙ্গেও লড়াই হবে?
দেব: আমার মনে হয়, সব বারই পুজোয় বাংলা ছবি এগিয়ে থাকে। এবারও যতটুকুই ব‌্যবসা হোক, মনে হয় বাংলা ছবিই এগিয়ে থাকবে।
‘টেক্কা’-য় মনে হচ্ছে রুক্মিণী আর দেবের ডুয়েল দেখা যাবে।
দেব: এটা সৃজিত বেশি ভালো বলতে পারে। ওই চরিত্রটায় সৃজিতই রুক্মিণীকে নিতে চেয়েছে। মনে হয় রুক্মিণী দেখার মতো ছবি করেছে। এটা ওর সেরা।
অন‌্যদিকে স্বস্তিকা মুখোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলেন। যার বাচ্চাকে ইকলাখ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
দেব: ঠিকই। অনেকবার দেখা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে, একসঙ্গে কাজের। আমি খুশি আমাদের প্রথম কাজটা এইভাবে শুরু করলাম। স্বস্তিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন। শি ইজ ব্রিলিয়ান্ট অ‌্যাক্টর।
নায়ক-প্রযোজক দুটো ভূমিকাতেই আপনাকে পেয়েছে দর্শক। এবার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসাবে আপনাকে পাওয়া যাবে পরবর্তী ছবি ‘খাদান’-এ।
দেব: (হাসি) ‘খাদান’ ইজ লাইক আ বেবি টু মি। ‘খাদান’-এর আদত পরিচালক রিনো। সব ছবিতেই ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর থাকে। অনেক সময়ই জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত দেখতে হয়। এটা বড় ক‌্যানভাসের ছবি। নতুন পরিচালক এসে এত বড় অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করেছেন, আসানসোলের শক্ত আউটডোর সামলেছেন। সেখানে আমার মনে হয়েছিল, আমাকে পুরো থাকতেই হবে। টিমই বলে, আমার নামটা যেতে হবে। রিনো-ও সেটাই চেয়েছিল। শীতে আসছে ‘খাদান’ (হাসি)।

শেষ প্রশ্ন, সাম্প্রতিক কালে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকটা যৌন হেনস্তার খবর উঠে এসেছে। একজন প্রতিষ্ঠিত নায়ক, সিনিয়র হিসাবে নারীসুরক্ষা প্রসঙ্গে কী বলবেন?
দেব: যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে এই ধরনের এক্সপ্লয়টেশন বা ঘটনা হওয়া উচিত নয়, ফিল্টারেশন দরকার। যে মানুষগুলো কুপ্রস্তাব দিচ্ছে, এক্সপ্লয়েট করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। আইনি পথে যেতে হবে, পাবলিকলি কল আউট করতে হবে। যাতে অন‌্য মেয়েদের সঙ্গে আর এটা না করতে পারে। কল আউট করাকে সমর্থন করি। কারণ, নইলে দোষীরা এমনি ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু প্রতিহিংসা বশে বা ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে কিছু করা ঠিক নয়। আমি চাই সত্যিটা যেন সামনে আসে। আর শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেরাও এক্সপ্লয়টেশনের শিকার হয়। যারা সত্যি এই কুকর্ম করে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতেই হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আর শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেরাও এক্সপ্লয়টেশনের শিকার হয়।
  • ওই চরিত্রটায় সৃজিতই রুক্মিণীকে নিতে চেয়েছে। মনে হয় রুক্মিণী দেখার মতো ছবি করেছে।
Advertisement