বিশ্ব ক্রিকেটে জিওফ মার্শ এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। প্রাক্তন এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার প্লেয়ার এবং কোচ- দুই ভূমিকাতেই বিশ্বজয় করেছেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় জিওফের ডেরা পারথেই বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। যে টেস্টে খেলতে পারেন তাঁর ছোট ছেলে মিচেলও। তার আগে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মার ফর্ম থেকে সিরিজের ভবিষ্যৎ- সব বিষয়েই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রশ্নের জবাব দিলেন তিনি। পারথ থেকে শুনলেন দেবাশিস সেন।
প্রশ্ন : পারথের বাউন্সি উইকেটে ওপেনার হিসাবে সাফল্য পাওয়ার জন্য ঠিক কী কী করতে হয়?
জিওফ : সফরে আসা দল, বিশেষত যদি তা উপমহাদেশের হয়, তবে এই প্রশ্নটা ওঠেই। ওরা সবসময় ওয়াকার পেস-বাউন্স নিয়ে কথা বলে। তবে আমি বলব, একবার মানিয়ে নিতে পারলে এর থেকে ভালো ব্যাটিং উইকেট আর হয় না। আপনি বিরাট-রোহিতের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, ওরাও একই কথা বলবে। ওয়াকায় সাফল্য পেতে ধৈর্য্য দেখাতে হবে, একটার পর একটা বল ছাড়তে হবে। এখানে পেস ধারাবাহিক হওয়ায় লেংথ অনুযায়ী খেলতে হয়। প্রথমে অন্তত ২০টা বল সামলাতে হবে। সেটা করতে পারলে পেস-বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। সেটা করতে পেরে অনেক ব্যাটারই এখানে অবিস্মরণীয় সব ইনিংস খেলেছে!
প্রশ্ন : অপ্টাস স্টেডিয়ামের উইকেটও কি ওয়াকার মতোই হবে?
জিওফ : অবশ্যই। আমার মনে হয়, আরও ভালো হবে। যদি তা নাও হয়, তবে সমতুল্য তো হবেই। দেখুন, ওয়াকা হোক বা অপ্টাস, ব্যাট করতে নেমে বেশি ভাবনাচিন্তা করলে চলবে না। অনেকেই এখানের পেস-বাউন্স নিয়ে নানা কথা বলে। তবে একজন ভালো ব্যাটার কখনই পরিবেশ নিয়ে বেশি ভাবে না। তারা মাঠে নামে আর বল অনুযায়ী শট বেছে নেয়।
প্রশ্ন : শুরুতে আপনি বিরাট-রোহিতের কথা উল্লেখ করলেন। দু’জনেই বিশেষ ভালো ফর্মে নেই। এই সিরিজে ওঁরা কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন বলে আপনি মনে করছেন?
জিওফ : দেখুন, এখন দুই তরফেই এমন ছবি দেখা যাবে। অস্ট্রেলিয়ার সবাই যে ভালো ফর্মে রয়েছে, এমন নয়। বিরাট-রোহিত দু’জনেই চমৎকার প্লেয়ার। প্রয়োজনের সময় দু’জনেই দলের পাশে দাঁড়াবে। সেটা সামলানো অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় কাজ হতে চলেছে। বিরাটকে আটকে রাখলে, রোহিতকে দ্রুত ফেরাতে পারলে আমরা ভারতের বাকি ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারব। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আমরা জানি, আমাদের বোলারদের জন্য কাজটা খুবই কঠিন হতে চলেছে।
প্রশ্ন : বিরাটের কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে?
জিওফ : বিরাট যেভাবে খেলে, সেটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়! নিজের কাজে সবসময় একাগ্র। লড়াইয়ের জন্য তৈরি। ওর কিলার ইন্সটিংক্ট দুর্দান্ত। আশা করছি, বিরাট বড় রান করবে, কিন্তু সিরিজে অস্ট্রেলিয়াই জয়ী হবে।
প্রশ্ন : এবার চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রাহানে নেই দলে। তাঁদের অনুপস্থিতি কী ভারতকে সিরিজে সমস্যায় ফেলবে?
জিওফ : এক্ষেত্রেও বলব, দুই শিবিরই সিরিজের বিভিন্ন সময়ে কিছু প্লেয়ারকে ছাড়া খেলতে বাধ্য হবে। যেমন ধরুন ক্যামেরন গ্রিনকে অস্ট্রেলিয়া পাবে না। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিন্তু দুর্দান্ত খেলেছে গ্রিন। তবে পরিবর্ত হিসাবে যারা এসেছে তারাও ভালো। আশা করছি, তারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। আসলে দু’টো দলেই প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে।
প্রশ্ন : প্রথম টেস্টে আপনি দর্শক হিসাবে মাঠে থাকবেন। মিচেলের খেলা দেখার জন্য নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছেন?
জিওফ : সে আর বলতে! সন্তানকে খেলতে দেখা যে কোনও বাবার কাছেই গর্বের, তাও আবার ঘরের মাঠে। আমি উত্তেজিত। আসলে দু’টো সেরা দল মুখোমুখি হচ্ছে। সেটা সব অস্ট্রেলিয়ানের জন্যই দারুণ বিষয়। প্লেয়াররাও মুখিয়ে রয়েছে। ভারত খুবই ভালো দল। মিচের জন্য দারুণ মুহূর্ত হতে চলেছে।
প্রশ্ন : সবশেষে একটা প্রশ্ন। সিরিজের ভবিষ্যৎ কী হবে বলে আপনি মনে করছেন?
জিওফ : আমার ভোট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। যে দল আগে মোমেন্টাম পাবে এবং তা ধরে রাখতে পারবে, সিরিজ তাদের। আমার দেশে অস্ট্রেলিয়া। তাছাড়া আমার ছেলেও সেদলে খেলছে। ফলে আমি অস্ট্রেলিয়াকেই সমর্থন করব। তবে ভালো লড়াই হবে। কারণ বিশ্বের সেরা দু’টো দেশ মুখোমুখি হচ্ছে।