আইপিএলে নাকি আগামীদিনে সৌদি-বিনিয়োগ ঘটতে চলেছে? এমন খবরই ডালাপালা মেলেছে বেশ কিছুদিন ধরে। তাহলে কি দেশ গণ্ডি ছাপিয়ে এবার বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে পা রাখবে আইপিএল? প্রকৃত সত্য কি? সৌদি (Saudi Arabia)-যোগে আরও কি ‘লক্ষ্মীলাভ’ ঘটবে আইপিএলে? তিনি কী ভাবছেন। তিনি, অর্থাৎ ললিত মোদি (Lalit Modi)। আইপিএলের (IPL) স্রষ্টা। সেসব যাবতীয় প্রশ্ন নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ললিত মোদি। শুনলেন বোরিয়া মজুমদার।
প্রশ্ন: সৌদি-সংযোগ আইপিএলকে কতটা শক্তিশালী করবে বলে মনে হয়? যদি সৌদি আরবে লিগের একটা পর্ব আয়োজিত হয় কিংবা এক-তৃতীয়াংশ। কেমন হবে?
ললিত: বহির্বিশ্ব থেকে আইপিএল বিনিয়োগের প্রস্তাব আসছে, লগ্নিকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। এরচেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাবটা বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে যায়নি। বরং বিনিয়োগকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে, আমি জানি না। তবে সত্যি যদি এই বিনিয়োগ ঘটে আইপিএলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। শুধুমাত্র ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসাবে নয়, আইপিএলকে গোটা বিশ্ব চিনবে গ্লোবাল টুর্নামেন্ট রূপে। আর সেই ধাপে পৌঁছনোর জন্য থার্ড পার্টি ইনভেস্টমেন্ট ভীষণভাবে দরকার।
[আরও পড়ুন: ICC ODI World Cup: চতুর্থ স্থানের জন্য লড়াইয়ে তিন দল, সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ কে?]
প্রশ্ন: আইপিএলে বিনিয়োগের প্রশ্নে টুইট করে নিজের বিস্ময় প্রকাশ করেছেন? এমনটা যে হতে পারে, আশা করেছিলেন?
ললিত: বিশ্বের দরবারে আইপিএলের একটা মার্কেট তৈরি হচ্ছে, সেটা কারও অজানা নয়। তবে আইপিএলে বিদেশি বিনিয়োগের কথা কখনও কল্পনা করিনি। আইপিএলে প্রায় ৩০ বিলিয়নের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন সৌদির লগ্নিকারীরা, সেটাও বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই। এমনটা অন্য কোনও ক্রীড়াক্ষেত্রে হয়েছে কি? আমার মনে হয় না। ব্যাপারটা অভূতপূর্ব বললেও কম বলা হবে। বিনিয়োগের অঙ্কটা এরপর আর কমবে না, বরং আরও বাড়বে। এই মুহূর্তে আইপিএলের মিডিয়া রাইটস থেকে বোর্ডের আয় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফেও রেভেনিউ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ রয়েছে। এর উপর রয়েছে আইপিএলে স্পনসরশিপ রেভেনিউ। সবমিলিয়ে আইপিএল থেকে বোর্ডের লাভের অঙ্কটা বিপুল। বিশ্বের অন্য কোনও লিগে কিন্তু এভাবে আয়ের বিন্দুমাত্র উপায় নেই। সেদিক থেকে আইপিএল আয়োজনের বোর্ডের খরচ নামমাত্র। অর্থাৎ আইপিএল আয়োজনে বোর্ডকে নতুন করে বিনিয়োগ করতে হয় না। অতীতেও হয়নি, আজও না। আইপিএল যখন শুরু করেছিলাম, পরিকল্পনাই ছিল খরচের অর্থ উঠে আসবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো থেকে পাওয়া রেভিনিউর মাধ্যমে। সম্প্রচার স্বত্ব আইপিএল থেকে অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটাই চলত আমার অফিস থেকে। তবে অবশ্যই সে সময় সহযোগিতা পেয়েছি বোর্ডের অন্যান্য সদস্য এবং রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলোর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, বিশেষ করে ওয়ান ডে কিংবা টেস্ট, এমনকী দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া চালানো কখনও সম্ভব নয়। সেই কারণে আইপিএলকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের এমন উত্তুঙ্গ আগ্রহ। আইপিএল থেকে লাভের পরিমাণটা কয়েক গুণ। লোকসানের প্রশ্নই নেই। ডিজিটাল মিডিয়া আসার পর লাভের অঙ্কটা সবসময় ঊর্ধ্বগামী থেকেছে। এই বিবর্তনে ভারতীয় উদ্যোগপতিদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই মুহূর্তে টিভি রাইটসের চেয়েও বেশি দামী আইপিএলের অনলাইন স্বত্ব। সেটাই আইপিএলের ঊর্ধ্বগামী চাহিদা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আইপিএলের সেই অনলাইন মার্কেটটাকে দখল করাটাই এখন লক্ষ্য লগ্নিকারীদের। অনলাইনের ক্ষেত্রে সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা ও ভিউআরশিপ নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতে যারা এই অনলাইন পরিষেবা অধিক ব্যবহার করে থাকেন, তাদের বয়সের সিংহভাগ ২৫ বছরের নিচে। এবং সমীক্ষা করলে দেখা যাবে, তাদের হয়তো নিজস্ব টিভি সেট নেই। ফলে স্ট্রিমিংয়ের জন্য মোবাইল তাদের প্রধান ভরসা। ডিজিটাল-দুনিয়া আইপিএলে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বৈকি। ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও বাড়বে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটীয় পরিগণ্ডির বাইরে আইপিএলের এই উত্তরণটা আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেয়?
ললিত: অবশ্যই তৃপ্তি দেয়। দেখুন, শুরুর দিকে আইপিএল আয়োজনের সময় কখনও ভাবিনি ভবিষ্যতে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে আগ্রহ দেখাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও সত্যি, আইপিএলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ে ছিলাম না। টুর্নামেন্টের আর্থিক দিকটা সবসময় আমার ভাবনায় ছিল। কীভাবে এটাকে (আইপিএল) ভারতীয় স্টক-মার্কেটে অঙ্গীভূত করা যায়, সে পরিকল্পনাও আমার মাথায় ছিল। যদি সেটা হত, তাহলে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আইপিএল হত, স্টক মার্কেটের জেম ট্রেডিং। আইপিএল থেকে আরও বিপুলভাবে লাভবান হত বিবিসিআই। শুধু বোর্ড নয়, লাভের ভাণ্ডার উপচে পড়ত ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদেরও। সৌদি-বিনিয়োগ সেদিক থেকে বেঞ্চমার্ক হয়ে উঠতে পারে আইপিএল ইতিহাসে।