অবিশ্বাস্য ভাবে গুজরাত টাইটান্স ম্যাচ জিতে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই শহরে ফিরে এসেছে কেকেআর। মঙ্গলবার কেউ কেউ হালকা প্র্যাকটিস করতে গেলেন সিসিএফসিতে। রাতে আবার একটা টিম ডিনারও রাখা হয়েছিল। তারই ফাঁকে সাক্ষাৎকার দিলেন গুজরাত ম্যাচের নাইট মহানায়ক রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। পরপর পাঁচ ছক্কা মেরে যিনি এখন আইপিএল সেনসেশন। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: গত রবিবারের পর রিঙ্কু সিংয়ের জীবন কতটা বদলে গেল?
রিঙ্কু: (দরাজ হেসে) দেখুন, এত বড় একটা ম্যাচ টিমকে জেতাতে পেরে দারুণ লাগছেই। কত বড় বড় লোক আমাকে মেসেজ করছে! সেই সমস্ত মেসেজ পেয়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে কমছে মেসেজের স্রোত। আবার নিজের পুরনো রুটিনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমি। জিম-টিম করতাম যেমন, সে সমস্ত করা শুরু করেছি।
প্রশ্ন: গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে সে দিন পরপর পাঁচটা ছয় মারার মুহূর্তে কী মনে হচ্ছিল?
রিঙ্কু: আমার জীবনের সেরা ইনিংস বলতে পারেন। বিশ্বাস করুন, আমি ভাবতে পারিনি যে পরপর পাঁচ বলে পাঁচটা ছয় মেরে দেব! কিন্তু কী জানেন, পুরোটাই বিশ্বাস। আপনি যদি নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, তা হলে জীবনে অনেক কিছুই করা সম্ভব। গত বার কেকেআরের (Kolkata Knight Riders) হয়ে আমি প্রায় একই রকম একটা ইনিংস খেলেছিলাম। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে পারিনি টিমকে। এবার জিতিয়ে দিলাম।
প্রশ্ন: কী মনে হয়, এ জীবনে আবার কখনও পরপর পাঁচ বলে পাঁচটা ছয় মারা সম্ভব?
রিঙ্কু: নাহ্। আবারও বলছি, আমি এত ভেবেচিন্তে কিছু করিনি। অত ভেবে পরপর পাঁচ ছক্কা মারা যায় না। বল যে ভাবে এসেছে, আমি সে ভাবে হিট করে গিয়েছি। আমি তো এটাও জানতাম না কত রান দরকার ছিল জিততে!
প্রশ্ন: তাই?
রিঙ্কু: হ্যাঁ। তবে একটা জিনিস মনে হচ্ছিল যে, ম্যাচটা ঘুরলেও ঘুরতে পারে। অন্য রকম কিছু হতে পারে। এটা মানব, ভেতরে ভেতরে একটা বিশ্বাস কাজ করছিল যে, গত বছর তো কেকেআরের হয়ে প্রায় একই রকম ইনিংস খেলেছিলাম আমি। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি এ রকম ইনিংস। তা হলে এবার পারব না কেন? আর আমাকে সবাই বলে যে তুই নিজের উপর বিশ্বাস কখনও হারাবি না। তাই নিজেকে বলেছিলাম যে, যদি আমি চাই, অনেক কিছু করতে পারি।
[আরও পড়ুন: ৯৯ বছরেও ছিলেন ধনকুবেরদের প্রথম সারিতে, প্রয়াত মাহিন্দ্রা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কেশব মাহিন্দ্রা]
প্রশ্ন: রিঙ্কু, জীবন কখনও আপনার জন্য গোলাপ ফুলের তোড়া ছিল না। বরং বিস্তর ঝড়-ঝাপটা, আর্থিক দৈন্যতার বিরুদ্ধে লড়ে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে আপনাকে। আজ মনে হচ্ছে যে, জীবন তার বৃত্তটা সম্পূর্ণ করল?
রিঙ্কু: অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য। আলিগড় থেকে এত দূর আসা সহজ ছিল না আমার পক্ষে। আলিগড়ের আমিই প্রথম ছেলে যে কি না আইপিএল খেলছে। আমাকে এখন ওখানে লোকে জানে, চেনে। খেলা শুরু করি যখন, আমার পরিবার অতটাও আমাকে সাহায্য করতে পারেনি। টাকা ছিল না তো আমাদের। বাবা হকার (গ্যাস ডেলিভারি করতেন) ছিলেন। ক্রিকেট খেলতে, ভাল অ্যাকাডেমি যেতে, অনেক টাকা লাগে।
প্রশ্ন: আর আজ আপনাকে নিয়ে শাহরুখ খান টুইট করছেন। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।
রিঙ্কু: শাহরুখ স্যর আমাকে নিয়ে টুইট করার পর খুব অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল ভেতরে ভেতরে। অসম্ভব ভাল লাগছিল।
প্রশ্ন: আর চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত তো বললেন যে, রবি শাস্ত্রীকে ছ’টা ছয় মারতে তিনি দেখেছিলেন। জাভেদ মিঁয়াদাদকে শেষ বলে ছক্কা মারতে তিনি দেখেছিলেন। তার পর আপনাকে পরপর পাঁচটা ছয় মারতে দেখলেন।
রিঙ্কু: এত নামজাদা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে স্যর (চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত) আমার তুলনা করছেন, সেটা আমার কাছে বিরাট ব্যাপার। নিঃসন্দেহে এই প্রশংসা আমাকে ভবিষ্যতে আরও ভাল খেলতে সাহায্য করবে। স্যর আমার এত প্রশংসা করলেন। কেকেআর পরিবারও আমাকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করেছে, পাশে থেকেছে।
প্রশ্ন: আর আপনার পরিবার? আপনি প্রায়শই আপনার পরিবার নিয়ে বলেন। বলেন, আপনার শৈশবের লড়াইয়ের কথা। গুজরাত টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে মহাজাগতিক ইনিংসের পর আপনার পরিবার কিছু বলেনি আপনাকে?
রিঙ্কু: আমাকে যারা সত্যিকারের ভালবাসে, যারা হৃদয়ে রাখে, তারা সত্যি খুশি হয়েছে আমার এ রকম পারফরম্যান্সে। সে দিন ম্যাচের পর লম্বা সময় আমি বাবা আর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিলাম। আমার ভাইদের সঙ্গে বলেছিলাম। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বলেছিলাম। আসলে কেউ বিশ্বাস করেনি যে, এ রকম কিছু হয়ে যাবে। কেউ ভাবেনি, পরপর পাঁচটা ছয়ও মারা সম্ভব। সে দিন আমার এলাকায় এত বাজি ফেটেছিল যে মনে হবে দিওয়ালি হচ্ছে বুঝি! (হাসি)