অভিষেক চৌধুরী, কালনা: অপরাধের হাতে হস্তশিল্প! কেউ বানাল পেনদানি। কেও তৈরি করলেন চাবির রিং, পেপার ওয়েট। নারকেলের খোলে ফুটে উঠল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারুকার্য। ঘটল সৃজনশীলতার প্রকাশ। সেই কারুকার্য দেখে চক্ষু ছানাবড়া বিশিষ্টজনদের। শুধু প্রশংসা করলেন না, তা কিনলেনও। যা থেকে প্রায় ২৩ হাজারেরও বেশি আয় হয়েছে।
জেলবন্দিদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর পাশাপাশি ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছিল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ছিলেন সাব-জেলার অর্পণ চক্রবর্তী, সমাজসেবী সুব্রত পাল, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ দেবাশিস নাগ-সহ প্রমুখ।
[আরও পড়ুন: বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে কিশোরীকে ‘গণধর্ষণ’, শিলিগুড়ির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২]
কারাদপ্তর ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কালনা মহকুমা উপ-সংশোধনাগারে থাকা ১৩ জন বন্দিকে নিয়ে মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ দেন কালনা মহকুমাশাসক দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও হস্তশিল্পে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শিল্পী তাপস পাল। মূলত নারকেলের মালা অর্থাৎ শক্ত খোল দিয়ে কিভাবে পেনদানি, লবণদানি, চাবির রিং, পেপার ওয়েটের মতো বিভিন্ন জিনিস হাতেকলমে তৈরি করা শেখানো হয়। এই কাজে কাঁচামালেরও জোগান দেন তাঁর সহযোগী পরিতোষ চক্রবর্তী।
৯ জন জেলবন্দি তৈরিও করেন জিনিসগুলি। তার পরই সেগুলিকে নিয়ে একটি প্রদর্শনী ও বিকিকিনির আয়োজনের কথা মাথায় আসে তাপসবাবুর। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। সংশোধনাগারের কর্তাদের বলে আয়োজন করা হয় প্রদর্শনীর। শিল্পী তাপস পাল বলেন, "জেলবন্দিদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতেই প্রথমে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিই। আইজি স্যরের সাথে দেখা করে সংশোধনাগারে একটি প্রদর্শনী ও বিকিকিনির জন্য আবেদন জানাই। এর পরই তিনি কালনা মহকুমাশাসককে সরকারিভাবে এই কর্মসূচিটি করার জন্য জানান। এদিন ২৩ হাজারেরও বেশি টাকায় হস্তশিল্পগুলি কিনে নেন কালনার বিশিষ্টজনেরা।" যে টাকা আয় হয়েছে তা ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিজনার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ডে জমা হবে।কালনার সমাজসেবী সুব্রত পাল, অবসরপ্রাপ্ত সাব মেজর নরেশচন্দ্র দাস, জেলবন্দিদের এই কাজ দেখে বলেন, "শিল্পী তাপস পালের এই উদ্যোগ কারাদপ্তর সফল করেছে। এর ফলে বিচারাধীন জেলবন্দিরা একদিকে যেমন হস্তশিল্প তৈরিতে পারদর্শী হলেন, তেমনই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটল।"