সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: বালিকার মৃতদেহ! তা ভেসে চলেছে মুড়িগঙ্গা নদীতে। সাপের কামড়ে প্রাণ হারানো বালিকার পরিবারের বিশ্বাস, ‘নদীর নোনা জলে সাপে কামড়ানো বালিকার শরীরে আবার প্রাণ ফিরবে।’ কুসংস্কারে নিমজ্জিত এলাকার বাসিন্দাদের এমন কীর্তিতে হতবাক বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরাও। মঙ্গলবার রাতে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় বালিকার দেহ। বুধবার দুপুরে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের (Sundarban) সাগর ব্লকের মৃত্যুঞ্জয়নগরে।
মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় কেউটে ছোবল দেয় আট বছরের শ্রাবণী মালাকারকে। শ্রাবণীর বাবা সুব্রত মালাকার জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ তিনি স্ত্রী এবং মেয়ে শ্রাবণীকে নিয়ে ঘরের মেঝেয় মাদুর পেতে শুয়ে ছিলেন। তখনই তাঁর মেয়েকে সাপে কামড়ায়। মেয়েকে বাঁচানোর আশায় ছোটেন প্রতিবেশী এক ওঝার কাছে। সেখানে শ্রাবণী আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সাগর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। এরপর দেহ ফিরিয়ে আনা হয় বাড়িতে।
[আরও পড়ুন: হনুমানের জন্ম কোথায়, ধর্মসভায় সাধুদের মধ্যে লেগে গেল হাতাহাতি]
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মুড়িগঙ্গা নদীতে কলার ভেলায় শ্রাবণীর দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার ভোরে বালিকার দেহ-সহ ওই কলার ভেলা বাসিন্দারা নদীর পাড়ে দেখতে পান। স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য সৌম্যকান্তি জানা বলেন, “বালিকাটিকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়াতেই তার মৃত্যু হয়।” সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, বুধবার দুপুরে মৃত্যুঞ্জয়নগর ঘাট থেকে ওই বালিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রাণ ফেরানোর আশায় সাপে কাটা স্বামীর দেহ কলার ভেলায় চাপিয়ে নদীতে ভেসেছিলেন বেহুলা। স্বর্গে গিয়ে স্বামী লখিন্দরের প্রাণ ও শ্বশুরবাড়ির মান দুই-ই ফিরিয়ে এনেছিলেন মনসামঙ্গল কাব্যের মুখ্য চরিত্র বেহুলা। সেই লোককাহিনীতেই ভরসা রেখে সাপের কামড়ে মৃত মেয়ের দেহ নদীতে ভাসিয়ে দিল পরিবার। সুন্দরবন এলাকার এই ঘটনায় ফের একবার প্রত্যন্ত এলাকা মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা, সরকারি প্রচারের সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। জানা গিয়েছে, সাপে কাটার পরই চিকিৎসকের বদলে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর হাসপাতাল। কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ।