সরোজ দরবার: ‘ঐতিহাসিক ভুল!’ মাত্র দু’টি শব্দেই ‘বাঙালি প্রধানমন্ত্রী’র সমস্ত সম্ভাবনার সলিল সমাধি। জ্যোতিবাবু হলেন না প্রধানমন্ত্রী। বহু বাঙালির মন থেকে সেই ক্ষোভ আজও মোছেনি। আর, ইতিহাসের এমন মার যে, বাঙালির সেই আশা আজ পর্যন্ত পূরণও হয়নি। তবে সম্ভাবনা জেগে উঠেছে বারেবারেই। এদিকে সিনেমা তো বলে স্বপ্নপূরণের কথা। খানিকটা যেন সেই কাজটাই করল ‘ফ্যামিলি ম্যান’ (Family Man 2) সিরিজের দ্বিতীয় সিজন। বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি, বাঙালি জনমানসের অবচেতনের সেই আশাটিই এখানে সত্যি হয়ে উঠল। কাহিনিকারের কলমে একজন বাঙালি মহিলাই বসলেন প্রধানমন্ত্রীর কুরশিতে। আর তাতেই আপামর দর্শকের মনে একটা সমীকরণ এখন খেলা করছে- তবে কি এই চরিত্রের অনুপ্রেরণা হিসেবে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই!
এই ক’দিন আগের কথা। সদ্য তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বশক্তি দিয়ে জয় পেতে ঝাঁপানো বিজেপির রথচক্র থামিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই সময়ই বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। নানা সমীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) জনপ্রিয়তা যত কমছে, তত বিকল্প মুখের সন্ধান বাড়ছে। অবিজেপি দলগুলির বরিষ্ঠ নেতাদের কে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে, তা নিয়ে তুল্যমূল্য সমীক্ষা এখন চালাচ্ছেন অনেকেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই রাজ্যে বড় জয় হাসিল করে জনপ্রিয়তার সেই হাওয়া অনেকটাই নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি অনেক রাজ্যেই ক্ষমতায় আসতে পারেনি, তা ঠিক। কিন্তু বাংলা দখলের জন্য তারা যে মরিয়া চেষ্টা করেছিল, তার তুলনা মেলা ভার। সেই প্রয়াস পুরোটা রুখে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দেশের কাছেই আরও গ্রহণযোগ্য নেত্রী হয়ে উঠেছেন। অনেকেই আজকাল বলাবলি করে থাকেন, মোদি-শাহ জুটিকে রাজনীতির চালে যদি কেউ মাত দিতে পারেন, তবে তিনি মমতাই।
[আরও পড়ুন: ‘ভালবাসা ভালবাসাই’, প্রেমের সমানাধিকার উদযাপনের পক্ষে সোচ্চার মিমি]
এই ধারণা অবশ্য আজকের নয়। বেশ কয়েকবছর ধরেই বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হিসেবে মমতার (Mamata Banerjee) নাম উঠে এসেছে বারেবারে। সমষ্টিগত সেই বাসনাই সম্ভবত রূপ পেয়েছে এই ওয়েব সিরিজে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রে একজন বাঙালি মহিলা। সিরিজের পিএম বসুর চরিত্রগত কাঠিন্য মনে করিয়ে দিচ্ছে মমতাকেই। কর্তব্যে একনিষ্ঠ, সিদ্ধান্তে অবিচল। কোনও পরিস্থিতির ভয়ে সহজে পিছপা হবার পাত্রী নন তিনি। একসঙ্গে তিনি ‘মায়ের মতোই ভাল’। ইতিমধ্যে যাঁরা দেখে ফেলেছেন ফ্যামিলি ম্যানের দ্বিতীয় সিজন, তাঁরা বলছেন, এই চরিত্রের উপর নিশ্চিতই আছে মমতার ছায়া। অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস চরিত্রটিকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে অবশ্য মমতার চালচলনের হুবহু সাদৃশ্য নেই; যদিও বয়স, কাঠিন্য, সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা ইত্যাদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনীতির বৈশিষ্ট্যকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এই চরিত্র মমতার অনুকরণে তৈরি এমনটা মোটেও বলা যায় না। তবে, মমতার অনুপ্রেরণায় তৈরি, এ কথা বললে অবশ্য মন্দ বলা হয় না। যে সময় বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য বহুজন উদগ্রীব, সেই সময় একজন মহিলা বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর চরিত্র নির্মাণে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া থাকবে তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এতেই আবার দর্শকমনে জমে উঠেছে সেই সমীকরণের খেলা। যখন বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে দেখার হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়নি, যখন রাজ্যে মমতার তৃতীয়বারের জন্য এত বড় জয় হয়নি, তখন, তাঁরই ছায়ায় বাঙালি প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজের চরিত্র হয়ে উঠেছে; মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে তাই এই নিয়ে যে চর্চা জমবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিমধ্যে জমেওছে।
[আরও পড়ুন: করোনাকালে দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে অনলাইনে কনসার্ট শান ও সোনু নিগম-সহ ৩৫ শিল্পীর]
২০২৪-এ দেশের রাজনীতির সমীকরণ কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন। জনতা জনর্দনই বলবে শেষ কথা। তবে, তার আগে অনেক কথা যেন বলে দিচ্ছে একটা ওয়েব সিরিজ। যদিও তা কল্পনায়। যদিও তা সত্যি নয়। তবু বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দেখার বাসনা যে সম্মিলিত ভাবে এই সময়টায় সত্যি হয়ে উঠেছে, এই ওয়েব সিরিজ অন্তত তার সাক্ষীই হয়ে থাকল।