shono
Advertisement

মরদেহ গ্রামে এলেও মিলল না স্নেহের পরশ, করোনা আতঙ্কে দূরেই রইলেন পরিজনরা

উত্তরপ্রদেশে পথ দু্র্ঘটনায় পুরুলিয়ার ছয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। The post মরদেহ গ্রামে এলেও মিলল না স্নেহের পরশ, করোনা আতঙ্কে দূরেই রইলেন পরিজনরা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:35 PM May 18, 2020Updated: 09:02 PM May 18, 2020

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দু’দিনের অপেক্ষার অবসান। মরদেহ এল গ্রামে। কিন্তু মিলল না স্নেহের পরশ। করোনা ভীতিতে স্বজনকে স্পর্শ না করার যন্ত্রনাতেই চিরবিদায় নিল বাংলার ছয় পরিযায়ী শ্রমিক। পুরুলিয়া মফস্বলের ছররা-দুমদুমী থেকে জয়পুরের ঝালমামরো হয়ে
কোটশিলার উপরবাটরি। সোমবার দুপুর থেকে বিকেল। সর্বত্রই ছিল এক ছবি। তবে এই ছবি অচেনা। চেনা মানুষও যেন পরিযায়ীদের দাহ কাজে অচেনা হয়ে গেলেন। তবে স্বজন ছুঁতে না পারার ক্ষত যেন থেকেই গেল পুরুলিয়ার এই গ্রামগুলির গায়ে।

Advertisement

গত শনিবার ভোররাতে উত্তরপ্রদেশের কানপুর–অরাইয়া হাইওয়ের দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় পুরুলিয়ার ছয় পরিযায়ী শ্রমিকের। দীর্ঘ লকডাউনে রাজস্থানের জয়পুরে আটকে প্রথমে হাঁটা পথ। তারপর লরিতে বাড়ি ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান পুরুলিয়ার এই ছয় শ্রমিক। এদিন ছয়-ছয়টি মৃতদেহ দেবেন মাহাতো গর্ভনমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছুঁয়ে দুপুরের দিকে এক-এক করে এসে পৌঁছয় পুরুলিয়া মফস্বলের ছররা-দুমদুমী। জয়পুরের ঝালমামরো। কিন্তু কোটশিলার উপরবাটরি গেল না তিন–তিনটি দেহ।গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্ত মত ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই সোজা তিনটি দেহ এল গ্রাম থেকে প্রায় চার কিমি দূরে আড়শার দেউলঘাটার শশ্মানে। বাড়ির পরিজন থেকে গ্রামের মানুষ
সকলেই যেন কান্না চেপে দেহ থেকে নিজেদের দূরে– দূরেই রাখলেন। করোনা যেন বদলে দিয়েছে স্নেহের পরশ। বদলে গিয়েছে গ্রাম বাংলার আচার–আচরণ। তবে অপঘাতে মৃত্যুতে রীতিতে বদল ঘটেনি। ছররা-দুমদুমীর মৃত পরিযায়ী মিলন বাদ্যকারের দেহ তাদের পরিবারের নিয়ম মত হয়েছে সমাধিস্থ। একইভাবে কোটশিলার উপরবাটরি গ্রামের তিন শ্রমিক অজিত চন্দ্র মাহাতো, ধীরেন মাহতো ও স্বপন রাজোয়াড়ের মৃতদেহ দাহ হয় আড়শার ওই দেউলঘাটার শশ্মানে। জয়পুরের ঝালমামরো গ্রামের মৃত গনেশ রাজোয়াড় ও ছররা–দুমদুমীর চন্দন রাজোয়াড়ের মুখাগ্নি করলেন তার পরিজনরা। তবে গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে!

[আরও পড়ুন : জোটেনি খাবার-জল, টানা ১৫ দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা]

পরিযায়ীদের এই তিনটি গ্রামে এখন শুধুই কান্নার রোল। স্বজনকে ছুঁতে না পারার যন্ত্রনা যেন আরও কুরে কুরে খাচ্ছিল পরিযায়ীদের আত্মীয়–স্বজন থেকে গ্রামের বাসিন্দাদেরও। তাই গাড়িতে থাকা ত্রিপলে মোড়ানো অবস্হাতেই মিলনের মৃতদেহ দেখে কাঁদতে কাঁদতে ভিটে
বাড়িতে চলে যান মা সুবাষী বাদ্যকার। মৃত ছেলেকে বুকে না জড়ানোর যন্ত্রনা যেন সামলাতেই পারছিলেন না তিনি। তাই বড় ছেলে দেবাশিসের কাঁধে মাথা দিয়ে বলছিলেন, “এই ক্ষত চিরদিন থেকে যাবে। ওকে তো ছুঁতেই পারলাম না।” সেই কালীপুজোর আগে বাবার যক্ষ্মা রোগ সারাতে রাজস্থানে কাজে যান মার্বেল কারখানায়। দাদা দেবাশিস ফিরলেও ভাই মিলন ফেরেননি। তবে সাত মাস পর ফিরলেন। নিথর দেহ হয়ে। কালো প্লাস্টিকে মুড়ে। কিন্তু স্পর্শ করল না স্বজনও!

[আরও পড়ুন : জোটেনি খাবার-জল, টানা ১৫ দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা]

ছবি ও ভিডিও : সুনীতা সিং

দেখুন ভিডিও: 

The post মরদেহ গ্রামে এলেও মিলল না স্নেহের পরশ, করোনা আতঙ্কে দূরেই রইলেন পরিজনরা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement