সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড়দিনের আনন্দের মাঝেও মনখারাপ প্যারিসের। দু’শো বছরের প্রথা ভেঙে এই প্রথম নোতর দামে শোনা গেল না ক্রিসমাসের ঘণ্টাধ্বনি। জ্বলল না ঝলমলে বাতি। তাই আলোকমালায় সাজলেও, মন খারাপের ছায়ায় ম্লান আলোর শহর প্যারিস।
উৎসবের দিন ক্যাথিড্রালটির রেক্টর প্যাট্রিক শোভে নোতর দামের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নোতর দামকে বাঁচানোর সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ।’ তিনি আরও জানান, ২০২১-এর আগে পুনর্নির্মাণ শুরু হবে না। আগুনে বিল্ডিংটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। যে কোনও মুহূর্তে সেটির ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ স্থানীয় বসিন্দা ড্যানিয়েলির কথায়, ‘ঐতিহাসিক ক্যাথিড্রালটির দশায় আমাদের কান্না অগ্নিকাণ্ডের দিন থেকে থামেনি। বড়দিনে সেই হাহাকার আরও বেড়েছে।’
গত এপ্রিল মাসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে ৮৫৫ বছরের প্রাচীন এই গির্জাটির। যদিও গির্জার রেক্টর জানিয়েছিলেন, নোতর দামের ‘আত্মা’কে বাঁচিয়ে রাখতে বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন তাঁরা। এ বারের জমায়েত হয় নোতর দামের এক মাইলের মধ্যে অন্য একটি চার্চে। ফরাসি বিপ্লবের পরে এই প্রথম বড়দিনের রাতে কোনও প্রার্থনা হয়নি গির্জাটিতে। বহু ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও গত দুই শতাব্দীর ইতিহাসে বড়দিনের প্রার্থনা কখনও বন্ধ থাকেনি নোতর দামে। শুধুমাত্র ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময়ে ক্যাথলিক বিরোধী শক্তির তাণ্ডবে বন্ধ হয়েছিল বড়দিনের জমায়েত।
[আরও পড়ুন: সান্তাক্লজ নাকি রবিনহুড! ব্যাংকের টাকা লুট করে হাওয়ায় ওড়াল দুষ্কৃতী]
১১৬৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা লুইয়ের আমলে শুরু হয়েছিল নোতর দাম গির্জা তৈরির কাজ। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বানানো এই বিশাল ঐতিহ্যমণ্ডিত গির্জাটি প্রকৃত অর্থেই পৃথিবীর স্থাপত্যের ইতিহাসের এক অনিবার্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে শতকের পর শতক ধরে বহু বিপদেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে ৬৯ মিটার অর্থাৎ ২২৬ ফুট উচ্চতার এই গির্জাকে। ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় এই গির্জার ভিতরে থাকা বহু স্থাপত্য ও চারুকলা একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফরাসি ‘গথিক’ স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয় এই গির্জাকে। প্রতি বছর অন্তত ১.৩ কোটি মানুষ এই গির্জা দেখতে আসতেন। এখন নোতর দামের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ নতুন করে গড়ে ওঠার অপেক্ষায় অগণিত মানুষ৷
The post বড়দিনে নিঝুম নোতর দাম, মনখারাপের ছায়ায় ম্লান আলোর শহর appeared first on Sangbad Pratidin.