গৌতম ব্রহ্ম: নিঃশব্দ বিপ্লব! বছর তিনেক আগেই পরীক্ষামূলকভাবে আলুবীজ উৎপাদন শুরু হয়েছে বাংলায়। এবার নজির গড়ে সেই আলুবীজ থেকে উৎপাদিত হল ৪২ টন আলু। যা দেশের কৃষি মানচিত্রে কয়েক ক্রোশ এগিয়ে দিল বাংলাকে।
আলু উৎপাদনে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয়। ফি মরশুমে এখানে ১৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়, ৫.১ লক্ষ হেক্টর জমি থেকে। সেই হিসাবে ৪২ টন কিছুই নয়। কিন্তু তাৎপর্যের বিষয় হল, এই আলুর পুরোটাই বাংলায় উৎপাদিত আলুবীজ থেকে। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের ল্যাবরেটরিতে তৈরি সাড়ে তিন লক্ষ আলুচারা থেকে এই উৎপাদন। যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর আলুর জন্ম দিয়েছে বলেই দাবি করেছেন কৃষি আধিকারিকরা। আর এই আলু বিপ্লবে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছে ‘উদয়’ ও ‘সুখ্যাতি’। হিমাচলের কুফ্রি এলাকার এই প্রজাতি এবার দুর্দান্ত ফলন দিয়েছে। মাঠ আলো করেছে লালচে রঙের উদয় আর সোনালি রঙের সুখ্যাতি। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলুবীজ উৎপাদনে রাজ্যকে স্বাবলম্বী করার জন্য পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনেই ‘ইন্টারন্যাশনাল পোট্যাটো সেন্টার’-এর বিশ্ববরেণ্য কৃষিবিজ্ঞানী সমরেন্দু মহান্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অর্থদপ্তর বরাদ্দ করে প্রায় ৩৬.৯ কোটি টাকা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হয়েছে।’’ শোভনদেববাবুর আরও দাবি, ‘‘নতুন ‘এপিক্যাল রুট কাটিং’ (এআরসি) পদ্ধতিতে চার বছরের মধ্যেই ২৫ শতাংশ বীজ উৎপাদনে সক্ষম হবে রাজ্য। পাঁচ বছরের মাথায় উৎপাদিত হবে একশো শতাংশ বীজই।’’ উল্লেখ্য, রাজ্যে এখন জ্যোতি, চন্দ্রমুখী, লিমা, হিমালিনী, মোহন, সূর্য, উদয়, সুখ্যাতি-সহ প্রায় পনেরো প্রজাতির আলু চাষ হয়। কিন্তু এবার বাজিমাত করেছে উদয় ও সুখ্যাতি।
[আরও পড়ুন: দোলে রঙিন সৌমিত্র, বাইকে সঙ্গী নববিবাহিত স্ত্রী, পরনে হলুদ-লাল রংমিলান্তি পোশাক]
রাজ্যের তেরোটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে রাজ্যে উৎপাদিত আলুচারা ব্যবহার করে চাষ শুরু হয়েছে। ১০৭টি ফার্মারস প্রোডিউসারস অর্গানাইজেশনের (এফপিও) সঙ্গে জোট বেঁধে এই অসাধ্যসাধন করেছে কৃষি দপ্তর। জানা গিয়েছে, রাজ্যের সরকারি ২৮টি খামারে আলুচারা তৈরির জন্য ১১০টি পতঙ্গরোধক ‘নেট হাউজ’ তৈরি করা হয়েছে। আর বেসরকারি তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে ৩৫৬টি ‘নেট হাউজ’। এই ৪৬৬টি নেট হাউজেই আলু চাষের নেট প্র্যাকটিস চলছে। যা চূড়ান্ত সফল হয়েছে বলেই দাবি করলেন শোভনদেববাবু। একই বক্তব্য রাজ্যের কৃষিসচিব ওঙ্কার সিং মিনার। আলুবীজের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ড. হিমাদ্রিশেখর দাস জানিয়েছেন, শুধু সরকারি খামার নয়, এফপিও-রাও এখন আলুবীজ উৎপাদন করতে শুরু করেছে। পরের মরশুমে ২৫ লক্ষ আলুচারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আলুচারা উৎপাদনে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বনির্ভর হবে বাংলা। এই লক্ষ্যেই পেরুর ভুবনবিখ্যাত ‘ইন্টারন্যাশনাল পোট্যাটো সেন্টার’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রাজ্যের কৃষি দপ্তর।
উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বাংলায় আলুবীজ উৎপাদনে টিস্যু কালচার ল্যাব তৈরি করা হয়। প্রথমে মেদিনীপুর ও পরে কৃষ্ণনগরে। সমরেন্দুবাবুদের পর্যবেক্ষণ, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ির পরিবেশ রোগমুক্ত আলুবীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। উল্লেখ্য, এখন বেশিরভাগ বীজই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে আলুচাষের খরচ অনেক বেড়ে যায়। নতুন পদ্ধতি সবদিক থেকেই বিপ্লব আনবে আলুচাষে।