shono
Advertisement

সঠিক পদ্ধতিতে কাঁঠাল চারা রোপণে বাড়বে ফলন, জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

জেনে নিন জল দেওয়ার পদ্ধতি ও সময়।
Posted: 01:45 PM Mar 26, 2023Updated: 01:45 PM Mar 26, 2023

কাঁঠাল একটি বহুমুখী প্রজাতির খাদ্য, কাঠ, জ্বালানি, পশুখাদ্য, ঔষধি ও শিল্পজাত পণ্য। এই ফলের আঠা বার্ড লাইম হিসাবে, গাছের ছাল দড়ি ও কাপড় তৈরিতে, কাষ্ঠল অংশ দিয়ে আসবাবপত্র ও সংগীতের সরঞ্জাম প্রস্তুত হয়। কাঁচা ফল (এঁচোড়) রান্না করে ও আচার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। পাকা অবস্থায় সরাসরি ফল হিসাবে খাওয়া যায়। পাকা ফলের শাঁস থেকে জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, মার্মালেড এবং আইসক্রিম তৈরি হয়। বীজ শুকিয়ে ভেজে বা রান্নায় সবজি হিসাবেও খাওয়া যায়। ফল, পাতা এবং বাকল-সহ গাছের বিভিন্ন অংশ ওষুধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক তন্ময় মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. ফটিককুমার বাউরি।

Advertisement

প্রথম পর্বের পর

দো-রসা/ আদারসা (Intermediate flake)
রসা ও খাজার মাঝামাঝি হয়। এছাড়াও নিম্নলিখিত জাতগুলিও পাওয়া যায়। সম্প্রতি গবেষণায় কিছু ভাল জাতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যেমন- হাজারী, পদ্মরাজ।

মুত্তান ভারিক্কা (Muttan Varikka)
বড় আকারের, কোয়া ভরতি থাকে, কচি ফল খুব ভাল সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

আঠা বিহীন কাঁঠাল (Gumless jack)
বেঙ্গালুরু জাতটি উদ্ভাবন করেছে, আঁঠা খুবই কম, হাল্কা হলুদ।

পালুর-১ (Palur-1)
তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ সালে পনরুটির পানিক্কানকুপ্পান এলাকা থেকে ক্লোনাল সিলেকশন করে জাতটি উদ্ভাবন করেছে। উচ্চফলণশীল, দোফলা এবং কম দূরত্বে লাগানো যায়।

পালুর-২ (Palur-2)
তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে পার্থিরাক্কোট্টাই এলাকা থেকে ক্লোনাল সিলেকশন করে জাতটি উদ্ভাবন করেছে। উচ্চফলণশীল, দোফলা এবং কম দূরত্বে লাগানো যায়।

পেচিপেরাই (Pechiparai)
এটিও তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৬ সালে ক্লোনাল সিলেকশন করে জাতটি উদ্ভাবন করেছে। উচ্চফলণশীল, দোফলা, খাজা, সুন্দর গন্ধ যুক্ত। জাতটি বাণিজ্যিক ও ঘরোয়া বাগানের পক্ষে উপযুক্ত।

স্বর্ণ (Swarna)
কৃষি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যাপিঠ, বেঙ্গালুরু ২০১০ সালে জাতটি উদ্ভাবন করেছে। গুচ্ছাকারে ফল ধরে, এর কোয়া সোনালি হলুদ। এছাড়া সিঙ্গাপুর কাঁঠাল (Singapore jack) একটি ভাল জাত। এর বীজের গাছে ২-৩ বছর পর থেকেই ফলন পওয়া যায়।

রুদ্রাক্ষী
ফলটি ছোট, কম কাঁটাযুক্ত, মসৃন।সর্বভারতীয় সমন্বিত ফল গবেষণা প্রকল্প, মোহনপুর কেন্দ্র, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কঁাঠালের এই সমস্ত জাত সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বংশবিস্তার পদ্ধতি

বীজ ও কলমের সাহায্যে কাঁঠালের বংশবিস্তার হয়। সাধারণত কাঁঠালের বীজ থেকেই চারা তৈরি করা হয়, ফলে প্রকৃতিতে কাঁঠালে প্রচুর বৈচিত্র দেখা যায়। ভাল পাকা কাঁঠাল থেকে পুষ্ট বড় বীজ বের করে ছাই মাখিয়ে ২/৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে বীজতলায় বপন করলে ২০-২৫ দিনে চারা গজাবে। চারা সতর্কতার সাথে তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজ- Recalcitrant প্রকৃতির। বীজের কার্যক্ষমতা (Seed viability) কম। বীজের গাছে ফলন পেতে ৭-৮ বছর এবং কলমের গাছে ৫-৬ বছর সময় লাগে। গাছের মাতৃগুণ বজায় রাখতে অঙ্গজ জনন বা কলম করে বংশ বিস্তার করা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন অঙ্গজ জনন পদ্ধতির মধ্যে গুটি কলম (Layering), জোরা কলম (Inarching) এবং চোখ কলম (Budding) পদ্ধতিতে সাফল্য বেশি। যদিও গুটি কলমে সাফল্য অনেক বেশি (৮০-১০০ ভাগ)। কিন্তু প্রধান মূল না থাকার জন্য শুষ্ক, পাথুরে, অনুর্বর জমিতে, গাছের নিজস্ব বৃদ্ধি ও উৎপাদন ক্ষমতা ব্যহত হয়। কলমের জন্য ইনডোল ব্যুটিরিক অ্যাসিড (IBA) ৫০০০-১০০০০ পিপিএম ব্যবহার করলে প্রচুর শিকড় বের হতে সাহায্য করে। ক্লেপট এবং ভিনিয়ার কলম পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করার উপযুক্ত সময় হল মাঘ-ফাল্গুন এবং আশ্বিন-কার্ত্তিক মাস। পরশাখীর পাতা ৭-১০ দিন আগে হেঁটে রেখে কলম করলে সাফল্য বাড়ে।

রোপণের সময়

ষড়ভূজী পদ্ধতিতে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা বা কলম মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাসে রোপণ করতে হয়। সেচের সুযোগ আছে এমন অঞ্চলে ফাল্গুণ মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। অন্যথায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে লাগাতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি
রোপণের আগে ১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর গর্ত খুঁড়ে বেশ কিছুদিন রোদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। খোঁড়ার সময় গর্তের উপরের ও নীচের মাটি আলাদা রাখতে হবে। রোপণের দশদিন আগে ২০-৩০ কেজি গোবর কম্পোষ্ট সার এবং ৫০-১০০ গ্রাম ক্লোরোপাইরিফস গুঁড়ো ২% বা ২৫-৫০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি গর্তের উপরের মাটির সঙ্গে ভাল ভাবে মিশিয়ে উঁচু করে (৬-১২ ইঞ্চি) গর্ত ভর্তি করতে হবে।গাছ ও লাইনের দূরত্ব ১২ মিটার করে রাখা দরকার। রোপণের সময় প্রতি গর্তে গোবর ৩৫ কেজি, টিএসপি সার ২১০ গ্রাম, এমওপি সার ২১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি গাছের জন্য সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা দরকার। চারা/ কলমের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পরিমিত ও সময় মতো সেচ প্রদান করা দরকার। গাছের সংখ্যা ৩০-৩৫ টি গাছ / একর।এক বছরের চারা বা কলমের গাছ গর্তের ঠিক মাঝখানে এমন ভাবে বসাতে হবে, যাতে শিকড়ের কোনও ক্ষতি না হয় বা আঘাত না লাগে। গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব সাধারণতঃ জাত, মাটির উর্বরতা এবং কিসের জন্য লাগানো হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। লাগানোর পরই গাছের চারদিকের জল দিতে হবে।

জলসেচ (Irrigation )
চারা/ কলমের তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি হওয়ার জন্য পরিমিত ও সময় মতো সেচ প্রদান করা দরকার। কম বয়সের বাগানে প্রতিবছর দুই থেকে তিনবার জল দেওয়াই যথেষ্ট। গাছে মুচি আসা থেকে ফল বড় হওয়া পর্যন্ত জল সেচ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় ১৫ দিন অন্তর সেচ দিতে হয় বিশেষ করে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement