shono
Advertisement
North Bengal

অপেক্ষার অবসান, অবশেষে বৃষ্টি পেয়ে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা উত্তরের চা বলয়

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মতো কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সেকেন্ড ফ্লাশে গুণমানে উন্নত ভালো পরিমাণ চা পাতা মিলবে।
Published By: Paramita PaulPosted: 08:35 PM Mar 12, 2025Updated: 08:35 PM Mar 12, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও শান্তনু কর: অবশেষে বৃষ্টি এল উত্তরের চা বলয়ে। বুধবার সকাল থেকে পাহাড়-সমতলের জেলাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হতে উচ্ছ্বাস জেগেছে ক্ষুদ্র চা চাষি মহলে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং অসমের উপর ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে পারে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার হোলিতে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। তিন জেলায় 'হলুদ' সতর্কতা রয়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের আশা, অনাবৃষ্টিতে ফার্স্ট ফ্লাশের চা উৎপাদন মার খেলেও আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মতো কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সেকেন্ড ফ্লাশে গুণমানে উন্নত ভালো পরিমাণ চা পাতা মিলবে। সেচের বাড়তি খরচ থেকে রেহাই মিলবে।

Advertisement

এবারও অক্টোবরের শেষ থেকে অনাবৃষ্টি কবলে পড়ে ধুকতে শুরু করে উত্তরের চা বলয়। দার্জিলিং পাহাড়ে চায়ের মরশুম শুরু হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় দু'টি পাতা একটি কুড়ি মুখ তোলেনি। পাতা না মেলায় ৮৭টি কারখানার বেশিরভাগ মার্চ মাসের গোড়াতেও চা তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরের সমতলের মতো পাহাড়ের আবহাওয়া দ্রুত পালটাচ্ছে। কমছে বৃষ্টিপাত। গত দু'দশকে প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টি কমেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। গত বছর ২২ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮ ইঞ্চি। এবার আরও কমেছে। পরিণতিতে কাচা পাতার উৎপাদন ও গুণগতমান কমেছে। দার্জিলিং পাহাড়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দু'মাস 'ফার্স্ট ফ্লাশ'-এর পাতা তোলার কথা। ওই পাতা থেকে অন্তত দুই মিলিয়ন কেজি চা তৈরি হয়। এটা মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ। এটাই মরশুমের সেরা দার্জিলিং চা। সেটা জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়। এবার বৃষ্টির অভাবে এখনও পাতা মেলেনি। ওই কারণে ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন মার খাবে। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিত্রুকা জানান, প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ক্রমশ কমছে। ২০২৩ সালে দার্জিলিং পাহাড়ে চা পাতা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬.১ মিলিয়ন কেজি। ২০২৪ সালে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৫.১ মিলিয়ন কেজি। এবার উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমতে পারে। বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু না হলে উৎপাদনের পরিমাণ আরও কম হতো।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাত ধরে উত্তরে শীতের সূচনা হয়। শীতের মরশুমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। ওই বৃষ্টির জল মিলতে ছেটে দেওয়া চা গাছে নতুন পাতার দেখা মেলে। কিন্তু তিনবছর থেকে শীতে বৃষ্টি মিলছে না। উলটে লাফিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। পরিণতিতে চা শিল্প সামগ্রিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগেও দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ছিল। অথচ রোদের দেখা মেলেনি। রাতের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ভোরে কুয়াশা মিলেছে। গাছ ছেটে দেওয়ার পর ওই আবহাওয়ায় নতুন পাতার দেখা না মেলায় চাষিরা ডিজেলে পাম্প চালিয়ে কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করে পাতা উৎপাদনের মরিয়া চেষ্টায় নেমেছিলেন। এটা করতে গিয়ে চা চাষিদের একাংশ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, চা গাছ রক্ষা করতে মাসে দু'বার সেচ দিতে হয়। এক একর আয়তনের চা বাগানে সেচ দিতে মাসে বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সব চাষিদের পক্ষে টানা চারমাস ওই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে অনেকেই ঋণ করেছেন। বুধবার বৃষ্টি পেয়ে তিনি বলেন, "এটা কত বড় আশীর্বাদ বলে বোঝাতে পারব না। আমরা মিষ্টিমুখ করে প্রকৃতির কাছে কয়েকদিন বৃষ্টির প্রার্থনা করেছি।" বুধবার সকাল থেকে ২০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফার্স্ট ফ্লাশের সময়ে এই বৃষ্টি আশীর্বাদ বলে মনে করছে চা শিল্প মহল। জলপাইগুড়ি ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের ম্যানেজার সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বৃষ্টির অভাবে পাতার গুণগত মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এই বৃষ্টি চা বাগানের কাছে আশীর্বাদ। দোলের আগে বোনাস প্রাপ্তিও বলা যায়।জলপাইগুড়ি আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক স্বপনকুমার রায় জানান, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এই মুহুর্তে হিমালয়ের উপর দিয়ে অসমের দিকে সরে যাচ্ছে। জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে আসার কারণে বৃষ্টিপাত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • অবশেষে বৃষ্টি এল উত্তরের চা বলয়ে।
  • বুধবার সকাল থেকে পাহাড়-সমতলের জেলাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হতে উচ্ছ্বাস জেগেছে ক্ষুদ্র চা চাষি মহলে।
  • আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং অসমের উপর ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে পারে।
Advertisement