সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চকোলেট খেতে কে না ভালোবাসে। আট থেকে আশি-চকোলেট পেলেই মুখে একগাল হাসি। এই চকোলেট তৈরির মূল উপাদান যে কোকোফলের বীজ, তা সকলেই জানেন। কোকোগাছের দেখা মেলে মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের জঙ্গলের মতো ঘন চিরহরিৎ অরণ্যেই। এবার সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসিরহাটে কোকো চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের মধ্যমপুরের বেশ কিছু কৃষক। পরীক্ষামূলকভাবে এই গাছের চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তাঁরা। তা দিয়ে অচিরেই লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। দক্ষিণ আমেরিকার পাশাপাশি আফ্রিকার ঘানা, আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনেও কোকো ফলের চাষ হয়। কোকো গাছে ফুল ও ফল ধরতে সময় লাগে তিন-চার বছর। ফুল ফলে পরিণত হয় ছয় মাসে।

প্রতিটি কোকো ফলের পাঁচটি সারিতে ৩০-৪০টি বীজ থাকে। এই গাছের বীজ সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। শুকানো কোকো বীজ সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে শাঁস পাওয়া যায়, যাকে বলে কোকো বিনস। এই কোকো বিন রোস্ট করার পর গুঁড়ো করে পাওয়া যায় অতি মূল্যবান কোকো পাউডার। যা উৎকৃষ্ট মানের চকোলেট, কেক, আইসক্রিম ও রুটি-সহ প্রসাধনী সামগ্রী ও পানীয় তৈরির মূল উপাদান। মধ্যমপুরের কৃষক শাহরুখ ইসলাম বলেন, "দুবছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে কোকো গাছ রোপণ করেছিলাম। ভালো ফলন হওয়ায় এবার এর থেকে চারাগাছ তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। এই গাছের যথেষ্ট বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও আছে।” কোকো চিরসবুজ গাছ, দেখতে অনেকটা গুল্মঝোপের মতো। উচ্চতায় ৭-৮ মিটার।
এই গাছ এমন একটি জায়গায় লাগানো দরকার, যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে না। সাথী ফসল হিসাবে কোকো গাছ লাগানো যেতে পারে। এরাজ্যের জলবায়ু কোকো চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। ছাদের বাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়। কোকো গাছ ছাঁটাই করে গাছকে ছোট করে রাখা যায় এবং বড় বড় ছায়াযুক্ত গাছের নিচে এরা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
কেবল চকোলেট তৈরিই নয়, কোকো ফলের ওষধিগুণও প্রচুর। এই ফল রক্তচাপ কমায়। ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ কোকো ফল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি স্নায়ুতন্ত্রের জরাঘটিত (নিউরো ডিজেনারেটিভ) রোগ প্রতিরোধ করে, কাশি কমায়। হার্টের জন্য ভালো। মস্তিষ্কের উন্নয়ন করে। সব মিলিয়ে চকোলেট প্রস্তুতকারক এবং একাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই গাছ চাষ করে ভালো মুনাফা লাভের আশায় মুখে হাসি ফুটেছে বসিরহাটের কৃষকদের।