রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্যের মৎস্য দপ্তর। কাঁথির জুনপুট এলাকার বিশালাকার দিঘি সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। মৎস্য দপ্তরের আওতায় থাকা জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানো এবং পুরনো পরিকাঠামো নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য একটি দোতলা ভবন গড়ে তোলা হবে বলে মৎস্য দপ্তর সূত্রে খবর। সবমিলিয়ে, এই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে সাড়ে ছ'কোটি টাকা খরচ হবে। দপ্তরের ফিশারি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (এফআইডিএফ) বরাদ্দ টাকায় এই কাজ হবে।
সমুদ্র তীরবর্তী জুনপুট এলাকা ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সমৃদ্ধ। জুনপুট বিখ্যাত মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র বলেও পরিচিত। বহু ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। সেকথা মাথায় রেখে আগামিদিনে ওই দিঘি ঘিরে পর্যটনের পরিকল্পনাও রয়েছে দপ্তরের। পর্যটকদের আকর্ষণের লক্ষ্যে তাতে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করতে চলেছে মৎস্য দপ্তর। দিঘির চারদিকে বাহারি গাছ ও ফুলের
বাগান তৈরি করে সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত দিঘি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। জুনপুটে ঢোকার মুখে বামদিকে বিশালাকার দিঘিটি রয়েছে। ১৫ হেক্টরের দিঘিটি ৫০ বছরের বেশি পুরনো। মিষ্টি জলের এই দিঘিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। তাই এই দিঘি ঘিরে এলাকার মানুষের আলাদা আবেগ রয়েছে। স্বচ্ছ জলে কখনও হাঁস, কখনও উড়ে বেড়ায় সাদা বকের সারি দেখা যায়। কখনও বা ডানা মেলে পরিযায়ী পাখির দল। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তা মজে গিয়েছে।
বর্তমানে দিঘির অর্ধেক অংশ কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে। দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমে সেটি শুকিয়ে ফেলা হবে। যাবতীয় কচুরিপানা সরিয়ে তিন ফুট গভীরে খনন করা হবে। যেখানে পাড় বাঁধানো প্রয়োজন, সেখানে ইউক্যালিপটাস গাছের গুঁড়ি দিয়ে পাইলিং করা হবে। মাছ চুরি ঠেকাতে সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হবে দিঘির চারদিক। পাশাপাশি নজরদারির জন্য বেশ কয়েকটি ওয়াটার শেড তৈরি করা হবে। জলাশয়ের চারদিকে কিছু জায়গায় বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে এই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে প্রায় চার কোটি টাকা খরচ হবে।
ট্রেনিং সেন্টার কাম রেসিডেন্সিয়াল হাউস গড়ে তোলার জন্যও উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বর্তমানে একটি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। কিন্তু সেখানে ট্রেনিংয়ের সময় চাষি, শিক্ষার্থী এবং আধিকারিকরা একসঙ্গে অংশ নেন। এবার নতুন ভবনে, শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও আধিকারিকরা অংশ নেবেন। এখানে শিক্ষার্থীরা যাঁরা ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে আসবেন, তাঁরা আবাসিক হিসাবে থাকতেও পারবেন। এই পরিকল্পনা রূপায়ণে আড়াই কোটি টাকা খরচ হবে। এই ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠলে শিক্ষার্থী ও আধিকারিকদের সবদিক দিয়ে সুবিধা হবে। জুনপুট ফিশ টেকনোলজিক্যাল সেন্টারের সহ-মৎস্য অধিকর্তা নীলোৎপল কয়াল বলেন, "দিঘিটি সংস্কারের কাজ হবে। তৈরি হবে ট্রেনিংয়ের জন্য ভবন। এর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।"
