সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আকারে সাধারণ আমের থেকে অনেকটাই বড়। স্বাদেও মিষ্টি। আর বাইরের আবরণের রং গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির মিশ্রণ। খুচরো বাজারে দাম কম হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি আমের মূল্য ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা! হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) এক দম্পতির এই আমের চাষ করার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকী টাকা দিয়ে পাহারাদারও রেখেছেন তাঁরা। আর শুধু ভারতে নয়, আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এবার বাংলাদেশে (Bangladesh) শুরু হয়েছে এই মিয়াজাকি আমের চাষ।
জাপানের কিয়শুর মিয়াজাকি প্রিফেকচারের রাজধানী মিয়াজাকিতে উৎপন্ন হয় এই আম। আর ওই শহরের নামেই হয়েছে এই আমের নামকরণ। আমটি দেখতে অনেকটা ডায়নোসরের ডিমের মতো। তাই এই আমকে জাপানি ভাষায় “তাইয়ো-নো-তামাগো” বলেও ডাকা হয়। অর্থ- ‘এগ অব দ্য সান’ বা সূর্যডিম। বিশ্ববাজারে এটি আবার ‘রেড ম্যাঙ্গো’ নামেও পরিচিত। আকারে বড় হওয়ার পাশাপাশি এক একেকটি আমের ওজন হয় প্রায় ৩৫০ গ্রাম হয়। অন্য আমের তুলনায় এতে শর্করার পরিমাণ ১৫ শতাংশ বেশি। যে কারণে, এটি বেশ মিষ্টি। এছাড়া এই আমগুলি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন ও ফলিক অ্যাসিড। দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় এই আম ভীষণ উপকারী। আর এই কারণে এই আমের চাহিদাও গোটা বিশ্বে অনেক বেশি। আর দামও আকাশছোঁয়া।
[আরও পড়ুন: খাঁচায় মাছচাষ করেই হতে পারে বিপুল লক্ষ্মীলাভ, জেনে নিন পদ্ধতি]
তবে শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেও সাড়া ফেলেছে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে চাষ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই আমের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে কৃষিকাজকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির কৃষক হ্ল্যাশিংমং চৌধুরী। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মহলছড়ি উপজেলা। ওই উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ১২০০ ফুট উঁচুতে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে বাগান তৈরি করেছেন হ্ল্যাশিংমং। সেই বাগানের একটি অংশেই চাষ করছেন ‘সূর্যডিম’ আম। ২০১৭ সালে তিনি প্রথম ভারত থেকে এই আমের ১০-১৫টি চারা কিনে নিজের বাগানে রোপণ করেছিলেন। দুই বছরে সেই গাছ বড় হয়ে ওঠে এবং ২০১৯ সাল তাতে আম ধরে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিনি বাগানের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন তার বাগানে সূর্যডিমের ১২০টির মতো গাছ রয়েছে। যেগুলোর উচ্চতা ৬-৭ ফুটের মতো। চারাগুলি যত্ন করে পালন করায় এর মধ্যে প্রায় ৫০টি গাছে তিন-চার বছর ধরে ফলন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি আম হয় বলে জানিয়েছেন হ্ল্যাশিংমং। যদিও খারাপ আবহাওয়া এবং জলের অভাবে এই আমচাষে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
সূর্যডিম আম সাধারণত মে মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখে পাকতে শুরু করে এবং জুনের ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া যায়। চলতি বছরে খরার মরশুম থাকায় এবার আম চলে এসেছে সময়ের আগেই। তিনি বলেন, এই আম চাষে নিতে হয় বিশেষ যত্ন। পরিমিত আলো, জল, ছায়ার বন্দোবস্ত করতে হয়। পাশাপাশি প্রতিটি আম প্যাকেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। আম তোলার পর গরমের কারণে সেগুলো বেশিক্ষণ নিজের কাছে রাখাও যায় না। দ্রুত বিক্রি করে দিতে হয়। এখনও এই আমের ক্রেতা খুব হাতে গোনা কিছু শৌখিন আমপ্রিয় মানুষ। হ্ল্যাশিংমং কিছু আম উপহার হিসেবে দিয়ে দেন এবং কিছু আম অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রিও করেন। সরকারের কাছ থেকে পুরষ্কৃত হ্ল্যাশিংমং-এর পরিকল্পনা রয়েছে এই আমের ফলনকে গোটা বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তোলা। যাতে চাষিদের আয় আরও বাড়তে পারে। তাঁর কথায়, “আমি চাই এই আমের ফলন সারা বাংলাদেশে হোক। আমি কৃষকদের বিনা পয়সায় বা নামমাত্র দামে চারা দিচ্ছি। সবাই যদি চাষ করে এই আমের ফলন বাড়ায়, তাহলেই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে তা রপ্তানিও করা যাবে। যা আমার একার পক্ষে সম্ভব না।” তবে তার বাগানে যে আমের ফলন হচ্ছে সেটা বিশ্বমানের কিনা, এর স্বাদ জাপানের উৎপাদিত মিয়াজাকি আমের মতো কিনা, সেটা তিনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে ফলাফল এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তিনি জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়া মিয়াজাকির ফলনের জন্য উপযোগী। এই আম আরও কয়েকটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ফলানো হচ্ছে। এই আমের বাণিজ্যিক ফলন হলে কৃষকদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে পাহাড়ি এলাকার প্রচলিত আম আম্রপালির ফলন ও বাণিজ্যিক প্রসারের দিকেই এখন বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহম্মদ রেজাউল করিম।