সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: দিন বদলেছে। একদা পুলিশি ‘সন্ত্রাস’-এর বিরোধিতায় যিনি অরণ্যে গা ঢাকা দিয়ে গেরিলা যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন, গড়েছিলেন বাহিনী, সময়ের চাকায় ঘুরে তিনিই এখন প্রশাসনের উপর ভরসা রাখছেন। ছত্রধর মাহাতো (Chhatradhar Mahato)। একদা মাওবাদী প্রভাবিত জনসাধারণ কমিটির নেতা, বর্তমানে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক। তিনি আজ ভোটের লাইনে। একুশে বঙ্গের ভোটের প্রথম দফায়, জঙ্গলমহলে ভোটের দিন সপরিবারে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন ছত্রধর মাহাতো। লালগড়ের বীরকাঁড় গ্রামের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ভোট দিলেন সপরিবারে। বললেন, ”১০ বছর পর ভোট দিয়ে নতুন ভোটার মনে হচ্ছে নিজেকে।”
নয়ের দশকে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের উত্থানের সময়ে লালগড় (Lalgarh) এলাকায় অন্যতম জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন ছত্রধর মাহাতো। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় নেমে প্রশাসনকে মূল শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দল। তৎকালীন বাম শাসকের বিরোধিতায় জঙ্গলমহলের মানুষজনকে একজোট করে নেমেছিলেন লড়াইয়ে। যদিও তাঁদের আদর্শে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক থাকলেও, স্রেফ প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলার মতো অভিযোগও উঠেছিল সেসময়ের ছত্রধরদের বিরুদ্ধে। একাধিক অপরাধে ছত্রধর বেশ কয়েক বছর জেলবন্দি ছিলেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে কারাগারমুক্ত হন তিনি। তবে মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। NIA’র আদালতে তাঁকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়।
[আরও পডুন: পটাশপুরে পুলিশকে বোমা মেরেছে পাকিস্তানিরা! ভোটের দিন বিস্ফোরক শুভেন্দু]
কারামুক্ত হয়ে আবার নতুন জীবনে ফিরেছেন ছত্রধর মাহাতো। সমাজের মূল স্রোতে ফিরেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়। তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের পর বড় পদও পেয়েছেন। তারপর অবশ্য তাঁর উপর কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির চাপ বেড়েছে। মাঝখান থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় এক দশক। পুরনো আন্দোলনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন ছত্রধরদের মতো মাওবাদী ভাবধারায় প্রভাবিত আরও অনেকেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে ভরসা ফিরেছে তাঁদের। তাই আজ ভোটের লাইনে ছত্রধর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেই পরবর্তী সরকার গড়ায় আর পাঁচজন নাগরিকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন।
[আরও পডুন: নিজেদের গড় কাঁথিতেই আক্রান্ত সৌমেন্দু অধিকারী, ভাঙা হল গাড়ি, আহত চালক]
এই মুহূর্তে ছত্রধর মাহাতো তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক। জঙ্গলমহল এলাকায় নিজের পূর্ব পরিচিতি, প্রভাবের জোরে শাসকশিবিরের জনসমর্থন পুনরুদ্ধার করার গুরুভার তাঁর উপর। সেই দায়িত্ব সামলে, পরিস্থিতি বুঝে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করছেন ছ্ত্রধর মাহাতো। ভোটের লাইন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলছেন, ”আমার পছন্দের দল মমতার দল। সেকথা মাথায় রেখে ভোট দিচ্ছি। জয় অবশ্যম্ভাবী।” এভাবেই বোধহয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ছত্রধররা ফের গণতন্ত্রের প্রতি আশ্বাস ফিরে পেয়েছেন।