অর্ক দে, বর্ধমান: ছোট থেকেই দারিদ্রতা নিত্যসঙ্গী। এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পড়াশোনার খরচ। কী উপায়? নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ‘রসভারী’ নিয়ে হাজির বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of Burdwan) পড়ুয়া। ব্যাপারটা কী?
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র অনির্বাণ মজুমদার। পড়াশোনার খরচ চালানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর পরিবারের কাছে। কিন্তু হেরে যেতে রাজি নন অনির্বাণ। তাই পড়াশোনা চালাতে নিজেই উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন তিনি। শুরু করেছেন গুড় বিক্রি। অনির্বাণ জানান, শীতকালে বাড়িতে গুড় তৈরি করে বর্ধমান নিয়ে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অদূরে গোলাপবাগ মোড়ের কাছে রাস্তার পাশে একটি ছোট্ট অস্থায়ী দোকান তৈরি করেছেন অনির্বাণ। দোকানের নাম দিয়েছেন ‘রসভারী’। সেখানে খেজুরের গুড় বিক্রি করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: শীতের আমেজে বাধা নিম্নচাপ! ডিসেম্বরের শুরুতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রাজ্যে]
এই গুড় বিক্রি করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই সারাবছরের পড়াশোনার খরচ সম্পূর্ণ না উঠলেও কিছুটা মেটানো সম্ভব হয় বলেই জানিয়েছেন অনির্বাণ মজুমদার। তিনি বলেন, “পরিবারের এক দাদা গুড়ের ব্যবসা করেন। পড়াশোনার জন্য রোজগার করতে তাঁরই সাহায্য নিই। দেশের বাড়ি থেকে গুড় নিয়ে এসে বিক্রি শুরু করি বর্ধমান শহরে।” বাড়িতে তৈরি গুড় স্বাদে ও গন্ধে আলাদা। তাই অনেকেই গুণগত মান বিচার করে তা কিনতে আগ্রহী হবেন বলে তাঁর ধারণা। পারিবারিক প্রতিকুলতার কাছে হার না মেনে উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অনির্বাণের সহপাঠীরাই। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কেবলমাত্র শিক্ষা অর্জনের তাগিদে ভিন জেলায় এসে উপার্জন করে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া অনেকের কাছেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন অনির্বাণ।
জানা গিয়েছে, অনির্বাণের বাড়ি বাঁকুড়া জেলায়। ছোট থেকেই জেলারই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছেন। বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৮ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। বাবা না থাকায় ছোট থেকেই দারিদ্রতা তাঁর নিত্যসঙ্গী। জেলার বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে খরচ। তাই উচ্চশিক্ষা চালানোর জন্য এই পথ বেছে নিয়েছেন অনির্বাণ।