shono
Advertisement
Hoichoi Web Series

টানটান চিত্রনাট্যে সমাজের 'ডাইনি' প্রথাকে কড়া জবাব মিমির! কেমন হল নয়া ওয়েব সিরিজ?

উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রেক্ষাপটে এগিয়েছে গল্প।
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:31 PM Mar 15, 2025Updated: 07:05 PM Mar 15, 2025

বিশ্বদীপ দে: ডাইনি। শব্দটির সঙ্গে মিশে রয়েছে অমানুষিক নির্যাতন, অত্যাচারের করুণ ইতিহাস। সারা বিশ্বজুড়েই ডাইনিদের অস্তিত্ব মিলেছে কোনও না কোনও সময়। কিন্তু মধ্যযুগে ক্যাথলিক চার্চের নির্দেশে যেভাবে শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে নারীকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল 'উইচক্র্যাফট' তথা ডাইনি-হত্যার কারণে, সেটাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি চর্চিত। মিথ, কল্পনার জগতে আটকে না থেকে ডাইনিরা এভাবেই রক্তমাংসের হয়ে উঠেছে। আজও যা রয়ে গিয়েছে। থেকে থেকেই খবরের কাগজের পাতায় 'ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা'র খবর ফিরে ফিরে আসে। এই তো ক'দিন আগেই উত্তর দিনাজপুরে ডাইনি সন্দেহে বাড়ি ঘিরে হামলার সংবাদে শিউরে উঠতে হয়েছিল। 'মর্মান্তিক বেদনা ছিল তার। নিজের‌ও তার বিশ্বাস ছিল সে ডাইনি।' তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ডাইনী' গল্পের সেই আর্তি আজও কেমন যেন প্রাসঙ্গিক। 'হইচই'-এর সাম্প্রতিক ওয়েব সিরিজ আলো ফেলেছে এমনই সব অনভিপ্রেত ঘটনার দিকে। আতঙ্কের পাশাপাশি এখানে একই ভাবে রয়েছে বিষণ্ণতাও। কেমন হল মিমি চক্রবর্তী অভিনীত নতুন এই সিরিজ?

Advertisement

নির্ঝর মিত্র পরিচালিত এই সিরিজটি আসলে দুই বোনের গল্প। লতা ও পাতা। পাতার ভূমিকায় রয়েছে মিমি। লতার ভূমিকায় কৌশানী মুখোপাধ্যায়। দুই বোন হয়েও তাদের মধ্যে আগাগোড়াই ছিল দূরত্ব। আসলে তারা 'বায়োলজিক্যাল' অর্থাৎ সহোদরা নয়। লতা ছিল পালিতা কন্যা। মা-বাবার স্নেহে ভাগ বসাতে আসা মেয়েটিকে তাই সহ্য করতে পারত না পাতা। একসময় জীবনের সড়কে যে যার মতো করে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে বোনের খোঁজ করতে এসে পাতা দেখতে পায় তারই বোনকে মেরে ফেলা হচ্ছে 'ডাইনি' সন্দেহে! এরপর বোনকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাতা। দূরত্বের নৈরাশ্য পেরিয়ে স্নেহের পথে হেঁটেও শেষপর্যন্ত কি সে পারবে বোনকে বাঁচাতে? এটাই এই সিরিজের উপজীব্য। যা ৬ এপিসোড ধরে দর্শককে বসিয়ে রাখবে স্ক্রিনের সামনে।

উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে এগিয়েছে গল্প। পাহাড়ের কোলে ঘন জঙ্গলের ফাঁকেই খুনিয়াবাড়ি গ্রাম। সেখানকার 'ঈশ্বর' জানগুরু। এই জানগুরুর নিদানেই লতা আজ ডাইনি। গোটা সিরিজের প্রধান খলনায়ক এই চরিত্রটি। যার সঙ্গে ব্রিটেন থেকে আসা পাতার দ্বৈরথ। যাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য চরিত্রেরা। চিত্রনাট্যের বুনোট এমনই যে প্রত্যেকেই গুরুত্ব পেয়েছে। জানগুরুর ছেলে মাইঠাল কিংবা গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা হাসপাতালের বয়স্কা নার্সের চরিত্রটিও ভেবেচিন্তে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গল্পটি ক্রমেই দর্শককে পেড়ে ফেলতে থাকে।
অভিনয়ে সবচেয়ে আগে যাঁর কথা বলার তিনি বিশ্বজিৎ দাস। জানগুরুর চরিত্রটি বহুদিন মনে থেকে যাবে। নির্দয়তা ও ক্রুর শয়তানি শরীরী ভাষায় তিনি চমকে দিতে থাকেন শুরু থেকেই। গ্রুপ থিয়েটার থেকে আসা এই অভিনেতা আশা জাগান, বাংলার রুপোলি পর্দায় বোধহয় নতুন এক খলনায়ক তথা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতার জন্ম হল। আর তাঁর সঙ্গে জোর টক্কর দিয়েছেন মিমিও। বিশেষত ক্লাইম্যাক্সে তাঁর অ্যাকশন, রক্তাক্ত মুখে সংলাপ বলার মুহূর্তগুলি অনবদ্য। জানগুরুর ছেলে মাইঠাল, থানার অফিসারও দুর্দান্ত কাজ করেছেন। তবে লতার ভূমিকায় থাকা অভিনেত্রীর থেকে আরও একটু সপ্রতিভ অভিনয় পাওয়া গেলে ভালো হত।

গতিময় এই ওয়েব সিরিজের গল্প দ্রুত এগোয়। কিন্তু গল্পের গতি কোথাও কোথাও কিছুটা বোধহয় রুদ্ধ হয় নন-লিনিয়ার ভঙ্গিতে গল্প বলার কারণে। তীব্র সাসপেন্সের মুহূর্তে আচমকাই ফ্ল্যাশব্যাক খানিক রসহানি ঘটায়। তবে সেটা সবক্ষেত্রে নয়। তাই সব মিলিয়ে দর্শককে টেনে রাখতে কেবল সক্ষমই নয় এই ওয়েব সিরিজ, বরং তা প্রতি মুহূর্তে ভাবতে বাধ্য করে এরপর কী হতে চলেছে।

তবে... একটা 'কিন্তু' থেকেই যায়। নিখাদ জান্তব ক্রুরতা এই সিরিজের প্রধান সুর। সেটাকে স্থাপন করতে গিয়ে যেন একটু বেশিই রক্তক্ষরণ দেখাতে হয়েছে। এতগুলি বীভৎস খুনের দৃশ্য কিছুটা বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়। আসলে রক্তপাতের পাশাপাশি অভিনয়, সংলাপ দিয়েও ক্রুরতাকে নির্মাণ করা যায়। জানগুরুর শরীরী ভাষা, কখনও জিভ বের করে অঙ্গভঙ্গি করা, দাঁতের কালচে ছোপ, হিসহিসে শাসানির ভঙ্গিতেই তা দিব্যি ফুটে ওঠে। ফলে হত্যাদৃশ্যের ক্ষেত্রে একটু সংযম দেখানোই যেত।

তবুও হইচই-এর সাম্প্রতিক বহু সিরিজের থেকে এগিয়ে থাকবে 'ডাইনি'। প্রতিটি দৃশ্যের পিছনে রয়েছে পরিচালকের চিন্তাভাবনার ছাপ। জ্বলন্ত চিতার উপরে আকাশে গোল চাঁদের দৃশ্যসৌন্দর্য কিংবা জানগুরুর মাথার পিছনে দুটি বেঁকানো টিউবলাইটের অবস্থানে শিংয়ের রেফারেন্স তারই প্রমাণ। আবহসঙ্গীতের ব্যবহারেও সেই ছাপ। কাহিনি যখন তরতরিয়ে এগোয়, তখনও সংশয় থাকে ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত সেই গতি বজায় থাকবে না। এক্ষেত্রেও হতাশ হতে হয় না। যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেভাবেই শেষ হয় সিরিজটি। দ্বিতীয় পর্বের সম্ভাবনা কোনওভাবে জিইয়ে রাখতে গল্পকে আচমকা থামিয়ে দেওয়ার মতো কিছু না ঘটিয়েই। 'শিকারপুর'-এর পরিচালক এই সিরিজেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁর পরের কাজ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা জাগতে বাধ্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ক'দিন আগেই উত্তর দিনাজপুরে ডাইনি সন্দেহে বাড়ি ঘিরে হামলার সংবাদে শিউরে উঠতে হয়েছিল। 'হইচই'-এর সাম্প্রতিক ওয়েব সিরিজ আলো ফেলেছে এমনই সব অনভিপ্রেত ঘটনার দিকে।
  • উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে এগিয়েছে গল্প। পাহাড়ের কোলে ঘন জঙ্গলের ফাঁকেই খুনিয়াবাড়ি গ্রামকে ঘিরে লিখিত হয়েছে চিত্রনাট্য।
  • টানটান চিত্রনাট্য ৬ এপিসোড ধরে দর্শককে বসিয়ে রাখবে স্ক্রিনের সামনে।
Advertisement