চারুবাক: একজন তুমুল জনপ্রিয় নায়কই নয়, ভালো কমেডি করতেও পারেন, এমন সুনাম আছে 'সুপার' নায়ক জিতের (Jeet)। অধিকাংশ ছবিতে জিৎ অ্যাকশন হিরো হলেও, তাঁর সংলাপ ডেলিভারি ও অভিনয়ের তলায় হালকা কমেডির ছোঁয়া থাকে। এবার তিনি আদ্যন্ত এমন একটি গল্প বেছেছেন, যেখানে কমিক সিচুয়েশনটাই ছবির মেরুদণ্ড। ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়ের দলের নাটক 'পুনরায় রুবি রায়'কে মজারু চিত্রনাট্যে বদলে 'বুমেরাং' (Boomerang) ছবিটি বানিয়েছেন সৌভিক কুণ্ডু। শুধু কমিক দৃশ্যে ভরন্ত নয়, সঙ্গে রয়েছে এক অ্যান্ড্রো-হিউমানোইড রোবটের বিচিত্র কর্মকাণ্ড। সেই রোবট আবার যেকেউ নয়, ছবির নায়ক সমরের (জিৎ) আসল স্ত্রী ইশার(রুক্মিণী) মতো দেখতে। নাম দেওয়া হয়েছে নিশা।
কম্পিউটার বিজ্ঞানে গবেষণা নিয়ে আন্তরিক আগ্রহী সমর নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চায়। ধনী শ্বশুরের(রজতাভ) ব্যবসায়িক লেজুড় হতে চায় না। স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ এটা নিয়েই। স্ত্রী মুখ ফিরিয়ে পিতৃগৃহে যাত্রা করলে শুরু হয় তরুণ সহকারী অয়নকে (সৌরভ) নিয়ে সমরের নতুন জীবন্ত রোবট তৈরির অভিযান। নিজের স্ত্রীর চেহারাতেই রোবট নিশার জন্ম দিয়ে যে কি বিপদ আর ঝকমারির মধ্যে পড়ে! শুধু সমর নয়, ইশা, অয়ন, অয়নের বান্ধবী বৈশাখী (দেবচন্দ্রিমা) - সব্বাই মিলে সে এক 'কেলেংকারিয়াস' জগাখিচুড়ি অবস্থা।
হ্যাঁ, অবশ্যই লাগসই সংলাপ ও সিচুয়েশনে ভরপুর চিত্রনাট্য। দর্শকও পর্দায় সমরের দুরবস্থা দেখে যেমন হেসে ওঠেন, তেমনি সমস্যার সমাধান কীভাবে যে হবে বা হবে কিনা, তা নিয়েও চিন্তায় পড়েন। এখানেই সৌভিক কুণ্ডুর পরিচালনার কেরামতি। এই ছবিতে অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে শুধু এক্কেবারে শুরু ও শেষে। শূন্যে বাইক চালিয়ে এক শিশুকে উদ্ধার করে সমর প্রমাণ করে নিজের তৈরি বাইকটি জ্বালানি ছাড়াও কম্পিউটার বিজ্ঞান দিয়ে আপৎকালীন অবস্থায় চালানো যায়। এবং শেষ পর্যায়ে যে আরও একটি চমক রয়েছে সেটি টিকিট কেটে ছবি দেখে জানাই ভালো।
[আরও পড়ুন: ‘আমার কঙ্গনা প্রীতি নেই, কিন্তু…’ চড় কাণ্ডে সরব শাবানা আজমি]
এই ছবির আরও একটি গুণ হল, প্রযোজক জিৎ টেকনিক্যাল কাজে হলিউডি পারফেকশন আনতে না পারলেও, খুব আনপ্রফেশনাল কাজও করেননি। কম্পিউটার গ্রাফিক্স ও আধুনিক বিজ্ঞানের দৃশ্যগুলো অন্তত দর্শনীয় করার চেষ্টা করেছেন, একেবারেই বোকাবোকা মনে হয়নি। আগেই বলেছি - মজাদার সংলাপে হালকা হাসির মুহূর্ত তৈরিতে জমাট এই ছবি। যেমন "টমাস আলভা এডিসন প্রেম করলে তাঁকে আর ইলেকট্রিক বাল্ব আবিস্কার করতে হত না, হাতে হারিকেন থাকতো", ছবির নায়ক "স্বপ্ন বিক্রি নয়, স্বপ্ন পূরণে বিশ্বাসী" বা নিশা রোবটকে 'চার্জ' দেবার ব্যাপারটা নিয়ে চিনা দালাল চ্যাংয়ের (খরাজ) দ্ব্যর্থবোধক ইঙ্গিত।
আসলে ফুল মস্তির ছবি এই 'বুমেরাং'। বাংলায় হাসি আর বিজ্ঞানকে মিলিয়ে এমন সাইফাই কমেডি ঘরানার ছবির ভাবনা তো নতুন, তাই ক্ষণিকের মজা নিতে মন্দ লাগবে না দর্শকদের। মস্তিষ্ক থেকে সব দুশ্চিন্তা সরিয়ে বোধ-বুদ্ধিহীন আনন্দ নেবার এক ঝুড়ি আনাজ নিয়ে হাজির 'বুমেরাং'! তারও পর রয়েছে নায়ক জিতের ওঁর নিজস্ব ঘরানায় হাততালি পাওয়ার মতো অভিনয়। সঙ্গে রুক্মিণীর যোগ্য সঙ্গত। স্বাভাবিক ইশা হয়ে তিনি যেমন ধনীর দুলালি, তেমনি রোবট নিশা হয়ে যান্ত্রিক শরীর সঞ্চালনে ও সংলাপ উচ্চরণেও বেশ জমাটি। সতীর্থ হয়ে সৌরভ দাস, রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়, বিশ্বনাথ বসু প্রত্যেকেই একই স্বরে-সুরে সাজিয়েছেন আমাদের ঝুড়িখানি। সুতরাং, এই ছবি দেখতে বসে যদি "মাথা ঘোরে বন বন বন বন...", অসুবিধে কোথায়?
ছবি - বুমেরাং
অভিনয়ে- জিৎ, রুক্মিণী মৈত্র, সৌরভ দাস, রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়, বিশ্বনাথ বসু প্রমুখ
পরিচালনায় - সৌভিক কুণ্ডু