shono
Advertisement
Manikbabur Megh

শহুরে ভিড়ের মাঝে একটা মেঘলা প্রেমের গল্প বলে ‘মানিকবাবুর মেঘ’, পড়ুন রিভিউ

শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মিউজিক বহুদিন মনে থেকে যাবে।
Published By: Akash MisraPosted: 11:34 AM Jul 12, 2024Updated: 12:13 PM Jul 12, 2024

শম্পালী মৌলিক: এমন একটা সময়ে বেঁচে আছি যখন প্রায় সারাক্ষণ আমাদের চোখ স্ক্রিনে। কখন দেখব আকাশ? সেই মন বা অবসর কি আছে? কেউ কখনও একা হই? আমরা তো কানেক্টেড সবসময়, ভারচুয়ালি। মুখোমুখি বসি না, তাতে কী? খোলা থাকে জানালা– মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ‌্যাপ, টেলিগ্রাম আরও কত কী! অবিরাম কনভারসেশন। এমন সময়েই পরিচালক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ‌্যায় এক নির্জন মানুষের গল্প বলেছেন। ‘মানিকবাবুর মেঘ’ আশ্চর্য মনকেমন করা ছবি যা আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। ছবির বিষণ্ণতা স্যাঁতসেঁতে স্পর্শের মতো ঘিরে ধরে। দেশে-বিদেশে বহু ফিল্মোৎসবে সমাদৃত হওয়ার পর আজ মুক্তি পাচ্ছে কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, নয়ডা ও গুরগাঁও শহরে। সহজ গল্প। সংলাপ খুব কম। এখনকার দ্রুতি-নিয়ন্ত্রিত জীবনের তুলনায় অনেক ধীরলয়ের। এমনকী, রঙিনও নয়। আর কেন্দ্রচরিত্র মানিকবাবুর (চন্দন সেন) জীবনেই বা রং কোথায়? সাদা-কালো-ধূসর চিত্রকল্পে লোকটার মনের আনাচকানাচ দেখা যায়।

Advertisement

নিজের একাকিত্ব বা অপ্রাপ্তি নিয়ে মানিকবাবুর আর তেমন হেলদোল নেই, ছবির শুরুতেই বোঝা যায়। বৃদ্ধ বাবার (নিমাই ঘোষ) প্রতি রোজকার দায়িত্ব পালন করে। সকালে তার ঘুম ভাঙিয়ে, ব্রাশ করিয়ে, মুখ ধুইয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তারপর বহু পুরনো সংবাদপত্র হাতে ধরিয়ে দেয়, যেন সদ‌্য দিয়ে গেছে কাগজওয়ালা। তারপর বাজার-রান্না। নিজে কাজে বেরনোর আগে বাবাকে ভাত খাওয়ানো। একই থালায় নিজেও খেয়ে নেয়। বাবা খোঁজ নেন নেতাজি ফিরলেন কি না। খাওয়া শেষে বাবার মুখ মুছিয়ে, হিসি করিয়ে শুইয়ে দেয়। বিকেল নামার আগেই মশারির আঁধার ঘরে বাবা-কে রেখে মানিকবাবু বেরয় কাজে।

[আরও পড়ুন: ইউরোপে ভয়াবহ ডাকাতির খপ্পরে দিব্যাঙ্কা, টাকা-পাসপোর্ট সর্বস্ব খুইয়ে বিদেশে আটকে অভিনেত্রী]

গলি থেকে বেরতে গাছে জল দেয়। বাসে ওঠে। প্রায় নির্জন পৃথিবীতে সংলাপহীন যাত্রায় সে অভ‌্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তার অত চাহিদাও নেই এবং জীবনে সম্ভাবনার আলো খেঁাজার তাগিদও দেখি না। সে ছাদের গাছপালা, রাস্তার কুকুর, বাড়ির পিঁপড়ে, টিকটিকিদের সান্নিধ‌্য ভালোবাসে। কাছের লোক বলতে পাড়ার দোকানের কালীদা (দেবেশ রায়চৌধুরি)। আর অসুস্থ বাবা। মানিকবাবু জানত, বাবা চলে যাবেন। তাই মৃত্যুর পরে তাকে একবারও বিচলিত হতে দেখি না। এরপর আল্টিমেট একা। বালিশ, বিছানা, টর্চ, আইড্রপ আর ছোট্ট অ‌্যালার্ম ক্লক– জীবন চলে। আকস্মিক মানিকের আকাশে মেঘ আসে। ছাদে দঁাড়ালে সেই মেঘ তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মেঘ তাকে অনুসরণ করে হরবখত। হঁাটলে, রিকশায় চড়লে, রেললাইন পেরলে, বাসে উঠলে, এমনকী, ছাতার আড়াল নিলেও। নাহ্‌, এড়ানো যাচ্ছে না মেঘকে। যখন সমস্ত মায়া থেকে মুক্ত লোকটা, তুলোর মতো মেঘ এসে দাঁড়াল তার মস্তিষ্কের ছাদজুড়ে। সম্পর্করহিত, ভাঙাচোরা জীবনে এ কেমন অযাচিত উচাটন! ময়দানে শুয়ে মেঘের ছায়া গায়ে নিতে নিতে মানিকবাবু নিশ্চিত হয়ে যায়, এই অস্থিরতার নাম প্রেম।

এদিকে ভাড়া বাড়ি, ছাড়তে হবে। বাড়িওয়ালা তার (অরুণ গুহঠাকুরতা) স্ত্রীয়ের চাপে রোজই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। কী করবে লোকটা? নতুন বাড়ি, ছাদওলা বাড়ি, কোথায় পাবে? আকাশ পানে মুখ তুলে সে ভাবে– ‘তোমার আমার একটা ছাদ না হলে হয়? বলো?’ অশরীরী সোহাগের অপূর্ব সংলাপ রচিত হয় মুহূর্তে! এতদিন কেউ ছিল না। এবার সে এসেছে– আধমরা লোকটা বেঁচে ওঠে ভালোবাসার ধারাস্নানে। বুকভরে সে ঘ্রাণ নেয় আকাশ-ফেরত ঘুড়ির–ছবির অন‌্যতম তীব্র মুহূর্ত এটা। ছাদে উঠলে লোকটার চোখে ‘ক্লাউড নাইন’-এর ঝিলমিল লেগে যায়। প্রেম তো শেষ পর্যন্ত তিষ্ঠোতে দেয় না, যতক্ষণ না পূর্ণগ্রাস ঘটে, একদা নির্লিপ্ত মানিকবাবুরও তাই হয়। অবশেষে একদিন রাতে তার বিষাদ-বিছানায় মেঘের ল‌্যান্ডফল, অপেক্ষার বারিষ। প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্ক চমৎকার বুনেছেন পরিচালক।

এবার আসি অভিনয় প্রসঙ্গে। নিঃসঙ্গ, অন্তর্মুখী মানুষের চরিত্রে চন্দন সেন অনবদ‌্য। বাড়িওলার চরিত্রে অরুণ গুহঠাকুরতা বেশ ভালো। স্বল্প পরিসরে দেবেশ রায়চৌধুরিও চমৎকার। ক‌্যামিও চরিত্রে ব্রাত‌্য বসু যথাযথ। শুধু একটাই খটকা, যে মানুষটার জীবনে এত অপ্রাপ্তি, অভাব তার চেহারা কি আরও জীর্ণ হবে না?

এই ছবির নিবেদনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তাঁর কণ্ঠে শেষভাগে ‘তোমার আমার গল্প হত’ গানটা বিস্তীর্ণ চরাচরে নরম জ্যোৎস্নার মতো। এমন নিচু তারে বাঁধা অন্তর্লীন আবেগের ছবি প্রযোজনা করার জন‌্য কুর্নিশ বৌদ্ধায়ন ও মোনালিসা মুখোপাধ‌্যায়কে। ডেবিউ পরিচালক অভিনন্দনের সংবেদনশীল মন সুন্দর চিত্ররূপ দিয়েছে এ গল্পের। অনুপ সিংয়ের ক‌্যামেরায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শুভজিৎ মুখোপাধ‌্যায়ের মিউজিক বহুদিন মনে থেকে যাবে। আর উল্লেখ‌্য মোনালিসার প্রোডাকশন ডিজাইন ও কস্টিউমে এতটুকু খামতি চোখে পড়ে না। ছবিটা দেখার অনেকদিন পরেও রেশ থেকে যায়।

[আরও পড়ুন: ব্লকবাস্টার পারফরম্যান্স দিয়েও ‘কল্কি’ সিক্যুয়েল থেকে ছাঁটাই দীপিকা! মনখারাপ করা খবর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মেঘ তাকে অনুসরণ করে হরবখত।
  • বিকেল নামার আগেই মশারির আঁধার ঘরে বাবা-কে রেখে মানিকবাবু বেরয় কাজে।
Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার