অর্ণব আইচ: সাত ঘণ্টা ধরে বিপজ্জনক বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রাণপণ লড়াই চালিয়েছিল একরত্তি। বাইরে দাঁড়িয়ে ততক্ষণে চোখের জলে ভাসছিলেন তার বাবা-মা। সাত ঘণ্টা পর উদ্ধারও হল শিশু। তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতাল। বাবা-মায়ের আশা ছিল সন্তান হয়তো বেঁচে যাবে। তবে ঘটল তার বিপরীত। হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে হার মানল খুদে। প্রাণ গিয়েছে তার ঠাকুমারও। এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন একই পরিবারের আরও ৩ জন। পুরসভার সতর্কতা আগে শুনলে আহিরীটোলায় এমন ঘটনা ঘটতই না বলে দাবি পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim)।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ভেঙে পড়া বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিস ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। পুরসভার কর্মীরা বারবার বাসিন্দাদের বলেছেন। তবে তাঁরা উঠতে চাননি।” বসবাসকারীরা নোটিস পাওয়ার পরই উঠে গেলে এমন বিপত্তি ঘটত না বলেই মনে করছেন ফিরহাদ হাকিম। বর্তমানে আহিরীটোলার (Ahiritola) ১০ নম্বর স্ট্রিটের ওই দোতলা বাড়িটিকে ভেঙে ফেলা হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। ওই বাড়ির বসবাসকারীদের প্রাথমিকভাবে ত্রিপল দেওয়া হবে। পরে চাইলে পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা হবে। বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটের অশান্তিতে অনেক সময় বিপজ্জনক বাড়িগুলি সংস্কারের কাজ থমকে থাকে। তার ফলে পুরসভা বিপাকে পড়ছে বলেও দাবি পুরপ্রশাসকের।
[আরও পড়ুন: ভোর থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি, রাজ্যের একাধিক জেলায় ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস]
বুধবার ভোর চারটে নাগাদ দোতলা ওই বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে (Building Collapse)। ভিতরে ছিল দু’টি পরিবার। একটি পরিবারের সদস্যরা দেওয়ালে ছিদ্র তৈরি করে বেরিয়ে যায়। তবে আরেক পরিবারের গৃহকর্ত্রী ও শিশু-সহ মোট ৯ জন আটকে পড়েন। শব্দ পেয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয়রা। তাঁরাই দেখেন বাড়িটি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয়রা খবর দেয় পুলিশে। তারপর ধীরে ধীরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দমকলও যায় ঘটনাস্থলে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ঘটনাস্থলে যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজা।
প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় মোট চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলে তাঁদের। তবে শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতাল সূ্ত্রে খবর, শিশুরও মৃত্যু হয়েছে। তার ঠাকুমারও প্রাণহানি হয়েছে। এই ঘটনার পরই এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া।