সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অগ্ন্যুৎপাত, সুনামি-র জোড় ধাক্কায় বিশ্বের একাংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গায় (Tonga) বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে ত্রাণ পৌঁছল। এক্ষেত্রে ত্রাতা নিউজিল্যান্ড (New Zealand)এবং অস্ট্রেলিয়া (Australia)। নিজেদের সামরিক বাহিনীর সাহায্যে পানীয় জল, ওষুধপত্র, অস্থায়ী তাঁবু-সহ জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার টোঙ্গার মূল বিমানবন্দরে নেমেছে বিমান। অগ্ন্যুৎপাতের জেরে ছাইতে ঢেকে যাওয়া বিমানবন্দর এখনও সাফ করা সম্ভব হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার তরফে বাড়তি সাহায্যের জন্য পাঠানো হয়েছে সাফাইকর্মীদেরও। তাঁরাই আপাতত ছাই-ভস্মে ঢাকা বিমানবন্দরটির সাফসুতরোর দায়িত্ব নিচ্ছেন।
গত শনিবার উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছিল প্রশান্ত মহাসাগর লাগোয়া ছোট্ট দ্বীপদেশের ভয়াবহ ছবি। দেখা গিয়েছিল, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে গর্ভে থাকা হাঙ্গা টোঙ্গা হাঙ্গা হোপাই নামে আগ্নেয়গিরি (Tonga volcano eruption) জেগে উঠেছে। শুরু হয় অগ্ন্যুৎপাত। এলাকা ঢেকে যায় কালো ছাই ও ধোঁয়ায়। এই লাভা উদগীরণের জেরে আশপাশের সমুদ্রতলে বিশাল আলোড়নের জেরে সুনামির উৎপত্তি। টোঙ্গা উপকূলে আছড়ে পড়তে থাকে অতিকায় সব ঢেউ। রাতারাতি সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতি। জোড়া বিপর্যয়ের জেরে কেবল, ইন্টারনেট পরিষেবা – সমস্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কার্যত একলা হয়ে যায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ টোঙ্গা। প্রতিবেশী দ্বীপ ফিজির সঙ্গে টোঙ্গার সংযোগকারী ৮২৭ কিমি দীর্ঘ কেবল লাইন ধ্বংস হওয়ায় চটজলদি ত্রাণও পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না।
[আরও পড়ুন: ওমিক্রন থেকে ‘মুক্তি’! ব্রিটেনে থাকছে না বিধিনিষেধ, বাধ্যতামূলক নয় মাস্কও, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর]
অবশেষে পাঁচদিন পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের তরফে পাঠানো ত্রাণ পৌঁছল আকাশপথে। যদিও ধোঁয়ার কারণে বিমানবন্দরে তা অবতরণে খানিক সমস্যা হয়েছে। তবে সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়েই সাহায্যের হাত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য টোঙ্গা প্রশাসন অতি সতর্ক ছিল। কোভিডমুক্ত দেশটিতে বিদেশ থেকে ত্রাণের সঙ্গে যদি ফের জীবাণুও ঢুকে পড়ে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে এই সংক্রান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও বজায় রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে টোঙ্গার কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক বা কর্মী ছিলেন না। জানা গিয়েছে, দুই বিমান সমস্ত ত্রাণসামগ্রী বিমানবন্দরে রেখে এসেছে। পরে তা যথাযথ সুরক্ষার সঙ্গে গ্রহণ করবেন টোঙ্গাবাসী। নিউজিল্যান্ডের নৌসেনার তরফে একটি জাহাজে আড়াই লক্ষ লিটার জল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে জল পরিশুদ্ধ করারও ব্যবস্থা আছে। যা এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজনীয়।
[আরও পড়ুন: করোনা ছড়াতে পারে ইঁদুর! ২ হাজার হ্যামস্টার মারার নির্দেশ হংকংয়ে]
বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে জাপানও (Japan) টোঙ্গার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নোবুও কিশি জানিয়েছেন, “বিপর্যস্ত টোঙ্গাবাসীর জন্য যা যা প্রয়োজন, সব করতে প্রস্তুত আমরা।” অগ্ন্যুৎপাতের জেরে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া, ছাইয়ে ঢাকা এলাকা পরিষ্কারের জন্য সরঞ্জামে জোর দিচ্ছে জাপান। জানা গিয়েছে, দুটি C-130 হারকিউলিস বিমান এবং দুটি CH-47 চিনুক কপ্টারে এসব পাঠানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, সবরকম কেবল লাইন না থাকায় ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না এতদিন। তবে ‘ডিজিসেল’ নামে একটি সংস্থা জানিয়েছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্তরে ফোনে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে বৃহস্পতিবারই। কারণ, এই মুহূর্তে সেটাই বেশি জরুরি। অন্তত পরিস্থিতি সম্পর্কে খবরাখবর দিয়ে সাহায্য চাইতে পারবে প্রশাসন।