সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্বল্প জলে, স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে, স্বল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন। এই ভাবেই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ চাষ করে রুখাশুখা পুরুলিয়ায় তাক লাগিয়েছে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ বা সিএডিসি। চাষ হচ্ছে কই, পাবদা, চিতল, গলদা চিংড়িও। আর এই মাছ চাষের মধ্য দিয়ে সিএডিসি-র অধীনে থাকা স্বনির্ভর দল গুলি লাভের মুখ দেখছে। মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে কলকাতাতেও।সিএডিসির পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্প বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের কুমারিকানন ফার্মে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা মাছ চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এবার তা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে।
সকল লুপ্তপ্রায় মাছ চাষ হচ্ছে কুমারীকাননের ওই ফার্মে। সেই মাছগুলি হল শিঙি, মাগুর, কই, পাবদা, ট্যাংরা, চিতল, ভেটকি, পাঙ্গাস, গলদা চিংড়ি, শোলাবাটা, গ্রাসকাপ, রুপচাঁদ, গলসে ট্যাংরা, দেশি মাগুর এই মাছগুলি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চার রকম ভাবে চাষ করছে সিএডিসি। সিমেন্টের গোল ট্যাঙ্ক, ছোট ছোট হাপা, হাপার সঙ্গে পলি লাইলিং, এমনকি বাড়ির উঠোনে মাটির কোন আকৃতি পরিবর্তন না করে বস্তা দিয়ে এই মাছ চাষ হচ্ছে। এবং ফলনও মিলছে ব্যাপক। তিন মাসেই পাবদা, ট্যাংরা বিক্রির জায়গায় চলে আসছে। দেড় বছরের চিতল প্রায় পাঁচ কেজির চেহারা নিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: TET পাশ না করেই মানিকের আমলে নিয়োগ! ৯৪ শিক্ষকের চাকরি বাতিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের]
দেড় বছরে ভেটকি মিলছে প্রায় দু’কেজি আকৃতির। রুই, কাতলা, মৃগেল দেড় বছরে আড়াই থেকে তিন কেজি হয়ে যাচ্ছে । অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্পের আধিকারিক সুশান্ত খাটুয়া বলেন, ” বায়োফ্লক পদ্ধতিতে আমরা পুরুলিয়ার মতো জায়গায় লুপ্তপ্রায় মাছের যেভাবে চাষ করছি তা অতীতে ভাবা যেত না। এই কাজে আমরা পুরুলিয়ার মতো জায়গায় আক্ষরিক অর্থেই অগ্রণী। মাছ চাষের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী যেমন আয়ের মুখ দেখছে তেমনই এই মাছ আমরা কলকাতাতেও রপ্তানি করতে পারছি।”
রুখাশুখা পুরুলিয়ায় মাছ চাষ এই ধারণাটাই ছিল না এই জেলার মানুষজনদের। কারণ এই জেলায় সেভাবে বৃষ্টিপাত হয় না, মাটিতে জল ধরে রাখা যায় না। এছাড়া মাটিতে পাঁক পড়ে না। প্রচুর পরিমাণে কাঁকর থাকে। এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়েই সিএডিসি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছে। মোট ১০ টা স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই কাজে যুক্ত রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলোকেই সাইকেল এবং মাছ রাখার বাক্স বিতরণ করে তারা উৎপাদিত মাছ বাজারজাত করে আয়ের মুখ দেখছে। এছাড়া হাটে-বাজারে কিছু কিছু ব্যবসায়ীও
সিএডিসি থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বাকি মাছ যাচ্ছে কলকাতায় । বিপুল ভাবে মাছ চাষ করায় যে কোন সময় সিএডিসির অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্প ২৫ থেকে ৩০ টন পর্যন্ত মাছ দিয়ে দিতে পারবে।
দেখুন ভিডিও: