মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: চারিদিকে শুধু জল আর জল। মাঝখানে ভাঙাচোরা একটি ছোট্ট নৌকা (Boat)। আর তাতে বসে লাল বেনারসি সাজে কনে এবং আর ধুতি পাঞ্জাবি সাজে সজ্জিত বর। সঙ্গে জনা পঞ্চাশেক বরযাত্রী। দেখেই বোঝা যাচ্ছে নতুন কনে ফিরছেন শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু আসার তো কথা ছিল সাজানো-গোছানো চারচাকা গাড়িতে। উপায় নেই যে। আমতা ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। মাঠঘাট, পথ সবই যেন নদীসম। অগত্যা তাই ভাঙাচোরা নৌকাই ভরসা বরযাত্রীদের। ঝক্কিও কম নেই, কার্যত প্রাণ হাতে নিয়েই ফিরতে হচ্ছে। একটু তালবেতাল হলেই বিপদ ওঁত পেতে রয়েছে যে। এমনই নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়পুরের সেহাগড়ি এলাকা থেকে সেহাগড়ি পাত্র পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে নৌকায় চেপে রওনা দিলেন নতুন কনে সায়নী পাত্র। পাশে নতুন বর চিরঞ্জিত পাত্র।
সায়নীর বাপের বাড়ি আমতা (Amta) ২ নম্বর ব্লকের ভাণ্ডারগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর। কয়েক মাস আগে সায়নী ও চিরঞ্জিতের বিয়ে ঠিক হয়। চিরঞ্জিত পেশায় ব্যবসায়ী। এলাকাতেই তার ব্যবসা। বিয়ের জন্য সব কিছু তোড়জোড় প্রায় শেষের মুখে ছিল। হয়ে গিয়েছে প্যান্ডেল। আত্মীয়স্বজনকে নেমন্তন্নের কাজও শেষ হয়ে যায়। আলোর রোশনাইতে ভরে ওঠার কথা ছিল পাত্র পাড়া। কিন্তু হঠাৎ প্লাবনে বদলে গিয়েছে সব কিছু। আনন্দে কার্যত জল ঢালা হয়ে যায়। চিরঞ্জীতের দাদা স্বরূপ পাত্র জানান, সমস্ত আয়োজনে বাধ্য হয়ে কাটছাঁট করা হয়। বিষয়টি আমরা কনের বাড়িতেও জানায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশি সংখ্যায় বরযাত্রী যাওয়া বা কনে যাত্রী আসা। কোনরকমে শুধুমাত্র বিয়েটুকু হয়েছে এবং যে অনুষ্ঠানটা না করলেই নয় সেটুকুই করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: চাকা ফেটে হাওড়ায় নয়ানজুলিতে উলটে গেল যাত্রীবাহী Bus, স্থানীয়দের তৎপরতায় এড়াল বড় বিপদ]
চিরঞ্জিত বুধবার সন্ধেয় বিয়ে করতে গিয়েছিলেন নৌকায় চেপে। বাড়ি থেকে তারা সাদামাটা পোশাকে নৌকায় চেপে সেহাগড়ি আসেন। পরে সেখান থেকে গাড়িতে করে যান আমতার ১০ নম্বর পোলের কাছে। সেখানে এক বন্ধুর বাড়িতে বর পোশাকে সজ্জিত হয়ে চিরঞ্জিত বিয়ে করতে যান সায়নীর বাড়িতে। সঙ্গে ছিল মাত্র জনাপঞ্চাশ বরযাত্রী। ফেরার সময়ও তারা গাড়ি করে সেহাগড়ি আসেন। তারপর সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন নৌকায় চেপে। নৌকায় ওঠার আগে লাজুক হেসে সায়নী জানান, “এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা, অ্যাডভেঞ্চারও বটে।” পাশে দাঁড়ানো চিরঞ্জিত আর বরযাত্রীরা হো হো করে হেসে ওঠেন।