বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য , শিলিগুড়ি: ভূমিধসে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের চাপে সিকিমের অর্থনীতি বিপাকে! সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং গোলের উদ্বেগ থেকে তা অনেকটাই স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় প্রতিদিন সিকিমের ১০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র সিকিমের অর্থনীতির উপরে বেড়ে চলা চাপ নয়। ভারত-চিন সীমান্ত এলাকায় বেহাল সড়ক যোগাযোগ ঘিরে দেশের নিরাপত্তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন জোরাল হতে শুরু করেছে।
একবার-দুবার নয়। চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে ১১ বার অবরুদ্ধ হয়েছে ওই জাতীয় সড়ক। শেষবার এগারো দিন থেকে বন্ধ আছে। শিলিগুড়ি ও সিকিমের 'লাইফ লাইন' নামে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের এমন অচলাবস্থা নিরসনে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার ওই বিষয়ে দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলেও স্পষ্ট নয় ওই জাতীয় সড়ক কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করবে কিনা। দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা ওই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি। উলটে তিনি দাবি করেন, ভূমিধসে অবরুদ্ধ দার্জিলিংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷ এরমধ্যে শুধু পাগলাঝোরার জন্য খরচ হবে চার কোটি টাকা। সাংসদ জানান, ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের সমান্তরাল বিকল্প রাস্তা তৈরি নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।
[আরও পড়ুন: পাতালপথে জলযন্ত্রণা রোখাই বড় চ্যালেঞ্জ, বর্ষায় কী পদক্ষেপ কলকাতা মেট্রোর?]
কিন্তু সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের কি হবে! উঠেছে প্রশ্ন। কারণ, ছোট বড় ভূমিধসে পুরো সড়ক বিধ্বস্ত। অনেক জায়গায় রাস্তা তিস্তার জলে ডুবেছে। কয়েকদিন আগে কালিম্পংয়ের বিরিকডারা ও সেলফিডারার মধ্যে ভয়ঙ্কর ধস নামে। রাস্তার একাংশ তিস্তার জলে ভেসেছে। সেবক থেকে তিস্তাবাজার যাতায়াতের পথে বেশকিছু এলাকায় জাতীয় সড়ক তিস্তার জলে তলিয়েছে। কালিম্পং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেল্লি বাজার, রবিঝোরা, লিখুবীর, ২৭ মাইল, সেলফিডারা সহ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ভয়াবহ পরিস্থিতি কালীঝোরা থেকে মেল্লি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রাস্তার। এখানে রবিঝোরা, লিকুবির, ২৯ মাইল, গেইলখোলায় অবিরাম ধস নেমে চলেছে। স্বভাবতই প্রশাসনের তরফে জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে ওই পরিস্থিতি কতদিন চলবে? সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কারণ, সিকিম প্রশাসন মনে করছেন ভূমিধস প্রবণ এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ দেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সড়কটি সবসময় সচল রাখা জরুরি। সংবাদমাধ্যমকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্য সরকারের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। কারণ, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ের সংযোগকারী তিস্তাবাজার-পেশক-জোরবাংলো রাস্তার পরিস্থিতিও ভালো নেই। জলকাদায় ডুবে আছে।
কালিম্পং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ জুলাই থেকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কালীঝোরা থেকে তিস্তা পর্যন্ত অন্তত সাত জায়গায় ধস নেমেছে। কিছু জায়গায় রাস্তায় ফাটল ধরেছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে, গোটা সড়ক তিস্তায় তলিয়ে না যায়। জাতীয় সড়কের এমন পরিস্থিতি দেখে ট্যুর অপারেটরা সিকিমের পুজোর বুকিং নেওয়ার ক্ষেত্রে দোলাচলে রয়েছে। ভূমিধস বিধ্বস্ত উত্তর সিকিমে বুকিং না নেওয়ার কথা আগেই জানানো হয়েছে। এবার সিকিমের অন্য প্রান্তের বুকিং নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় লোকসানের বহর আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সিকিম পর্যটনের উপদেষ্টা রাজ বসু।