নব্যেন্দু হাজরা: চৈত্র মাস মলমাস। এ মাসে বাঙালির বিয়ে-পুজো তেমন কিছুই থাকে না। ফলে ফুলের বাজারও মন্দা। বছর বছর কেজি কেজি ফুল ফেলে দিতে হয় চাষিদের। কিন্তু এ বছরটা আলাদা। ভোটের (West Bengal Assembly Elections) ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলের বাজারে চৈত্রেই বৈশাখের অনুপ্রবেশ। স্থানীয় প্রার্থীর গলায় যত চড়ছে মালার ওজন, ততই পোয়াবারো ফুল ব্যবসায়ীদের। রজনী আর গাঁদার মালার বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। সঙ্গে গোলাপের বিক্রি ভাল। আর তাতেই অসময়েও দাম চড়েছে ফুলের।
ফুল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন,” কোনওবার ভোটে এত বিপুল সংখ্যক ফুলের মালা, বোকে বিক্রি হয় না। কিন্তু এবার প্রায় প্রতিদিনই কাছের নেতা-নেত্রীকে পরাবেন বলে সমর্থকরা ফুলের মালা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিক্রি ভালই। এবার চৈত্র মাসেও যে এত ফুলের মালা, ফুল বিক্রি হবে সেটা ভাবতেই পারিনি। আসলে ভিনরাজ্যের ভোটে নেতা-নেত্রীদের গলায় ১০-১২টা মালা পরানোর কালচার দেখেছি। এখানেও এবার সেটা চালু হয়ে গিয়েছে।”
ফুলচাষিরা জানাচ্ছেন, মার্চ-এপ্রিল মাসে রজনীর ফলন ভাল হয়। গরম হাওয়াতে দ্রুত বৃদ্ধি হয় গাছের। কিন্তু এই সময়টায় তো বিয়ে বা পুজো কিছুই থাকে না। তাই ফুলের দাম স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। এত ফুলের ফলন হয় যে, ফেলে দিতে হয়। এবার তেমনটা হচ্ছে না। আমআদমির নেতা-নেত্রীদের বন্দনায় ফুলের বাজার ভালই। তবে দাম বৈশাখের মতো অতটাও চড়েনি। কিন্তু বাজার হেরফেরে খুব একটা যে কম তেমনটাও না। মাঝারি ছোট রজনীর মালা এই মলমাসেও ৪০-৫০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে। মাঝে থাকছে গোলাপ। বড় মালা সাইজের হেরফেরে দেড়শোর গণ্ডিও ছাড়াচ্ছে কখনও কখনও।
[আরও পড়ুন: দফায় দফায় অশান্তিতে উত্তপ্ত রাজ্য, রাতভর বোমাবাজি নানুরে, বর্ধমানে আক্রান্ত প্রার্থী]
যদিও চাষিদের ঘর থেকে এই ফুলই কেনা হচ্ছে এখনও অনেকটাই কম দামে। মূলত পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, কোলাঘাট এবং নদিয়ার (Nadia) বীরনগর ও নকাড়িতে রজনীগন্ধার চাষ ভাল হয়। শনিবারও সেখানে রজনীর দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা প্রতি কেজি এবং গাঁদা ১০-১২ টাকা প্রতি কেজি। অন্যবার এর অর্ধেক দামও থাকে না এই মাসে। এই ফুলই হাত ঘুরে যখন বাজারে মালা হিসাবে যাচ্ছে, তখনই তার দাম বেড়ে যাচ্ছে। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, “চৈত্র মাসে এমনিতেই ফুল ফেলে দিতে হয়। বেচাকেনা তেমন থাকে না। কিন্তু এবার ভোট ফুলচাষি এবং ফুল ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।”