ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘এত বড়? সত্যি!’– এই টিজারের চমক আর আতঙ্ক সহজে ভোলার নয়। এ যাবৎকালে টিজার লিখে সবচেয়ে বেশি কলকাতাকে চমকে দিয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের দুর্গাপুজো। কিন্তু এখন তো পুজো নয়। ভোটের বাজার গরম হচ্ছে বটে। ব্রিগেডের আগে তেমন জমাটি কিছু হওয়ার আশা কম। তা হলে দমদমজুড়ে এসব কীসের টিজার? একটায় লেখা ‘কচি মাথা খাবেন না’। একটায় ‘ভোটের আগে কাটমানি খাবেন না’। কোনওটায় আবার ‘মিথ্যা ভাষণ খাবেন না’, কিংবা ‘ভোটের টোপ খাবেন না’। শুরুটা কালোয়। ‘খাবেন না’-টুকু লালে চুবনো।
[শেষ হল ‘অক্লান্ত পদাতিক’-এর পথচলা, শোকের ছায়া চলচ্চিত্র জগতে]
দমদম স্টেশন থেকে একদিকে নাগেরবাজার। উলটোদিকে চিড়িয়ামোড় হয়ে সিঁথি। বড় রাস্তার কানায় কানায়, অলিতে-গলিতে এইসব স্লোগান লেখা টিজার ঝুলছে। বাস, অটো, রিকশা যাতেই চড়ুন না কেন, নজর টানবেই। গোটা রাস্তা ছেয়ে গিয়েছে। পুজো হলেও নয় নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে সবাই ভাবত। ভরা পৌষের নলেন গুড়ে ডুবনো মগজ তো এখন শীতঘুমে। খাটতেই চায় না। তার উপর শীতের সন্ধ্যায় এখন মেলার মরশুম। চলচ্চিত্র, গানমেলা সেরে আমুদে বাঙালির এবার পেটপুজো করার পালা। তার মাঝে এসব চমক কীসের? ব্যাপারখানা কী? একটু নিঃশ্বাস নিয়ে এক গর্বের কণ্ঠ বলে উঠল, “মাথায় কী ঘুরছে?” গলায় উত্তেজনাটা স্পষ্ট। উলটোদিকের গলাতেও। ঘুরছে তো ‘খাবার’। তা হলে কি..? এত ধন্দের মাঝেও একটা জিনিস পরিষ্কার। বারবার কিছু খেতে নিষেধ করা হচ্ছে। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, ব্যাপারটা দমদমের খাদ্যমেলা সংক্রান্ত, তাতেও সন্দেহ যাচ্ছে না। কারণ, মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দেওয়া নামে শোভিত সেই ‘নালে ঝোলে’-র বিজ্ঞাপন তো মাঘের শেষেই পড়ে গিয়েছে দেওয়ালে দেওয়ালে। তারই পাশে পাশে পড়েছে টিজারগুলি। তা হলে নতুন কোনও বিপণি ব্যবসায় নামছে? মগজ যে আর এগোচ্ছে না। গর্বের সেই কণ্ঠ দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনিই চমকটা ভাঙলেন। বললেন, “দাঁড়ান। চমকের আর কী দেখলেন? এর পর তো আরও আসছে।” তার মানে? এসব তবে খাদ্যমেলারই?
[ভারতীয় চলচ্চিত্রে যুগাবসান, প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেন]
“একদমই তাই”– দেবাশিসবাবুর উত্তর। তিনি আরও জানাচ্ছেন, “মন্ত্রী ব্রাত্য বসু আর আমি একসঙ্গে বসে বেশ খাটাখাটনি করে কিছু উপায় বার করি এই চমকটা দেওয়ার।” দমদমের মতো একটা মিশ্র সংস্কৃতির এলাকার মানুষের কাছে এমন ধারালো আইডিয়া এই প্রথম। বলতে গেলে একটা ধাক্কার মতো। এ কথা জানিয়েই টিজার বানানোর প্রস্তাব যায় পেশায় শিক্ষক কৌশিক পালের কাছে। তিনিই মাথা খুঁড়ে একের পর এক এসব টিজার তৈরি করেছেন। যার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি দেবাশিসবাবুকে। শীতলতম কলকাতার পেটে যা দেখেশুনে এবার কার্যত ধোঁয়া ওঠার জোগাড়। ১৭ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হবে দমদমের খাদ্যমেলা। টিজার দিয়ে এই প্রথম তার বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। ক’দিন পর আরও এক দফার টিজার আসবে সব নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা নিয়ে। দেবাশিসবাবু দমদমের খাদ্যমেলা নালে ঝোলের উদ্যোক্তা। তিনি জানালেন, তাঁরা এবার এমন একটা কিছু করতে চাইছিলেন, তাতে বেশ চমক লাগে। তাঁদের প্রচেষ্টা যে জলে যায়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে এই টিজারগুলোর আরও একটা উদ্দেশ্য আছে। দেবাশিসবাবুর টিমেরই এক সদস্যের কথায়, খাদ্যমেলাকে সামনে রাখা হয়েছে বটে। টিজারের চমকে তাকে আড়ালও করা হয়েছে। তবে উদ্দেশ্য রয়েছে নির্বাচনও। যেখানে নিশানায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলাই বাহুল্য, এখানে মেঘনাদের ভূমিকা নিয়েছেন স্বয়ং মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যেহেতু খাদ্যমেলার আমেজ, তাই একটু আড়াল রেখেই প্রচ্ছন্নভাবে মোদির দেওয়া ভাষণ, সিদ্ধান্তের সমালোচনা চলছে কড়া ভাষায়। ‘কচি মাথা খাবেন না’ বলতে যেমন বোঝানো হয়েছে গরম ভাষণ দিয়ে মোদি যেন মানুষকে ভুল না বোঝান। প্রায় একই সুরে ‘মিথ্যা ভাষণ খাবেন না’-টুকু আবার সাধারণ মানুষের উদ্দেশে। রাফাল নিয়ে যে অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বিদ্ধ, তাকে মনে করিয়েই বলা হচ্ছে রাফাল থেকে কাটমানি না খাওয়ার কথা। ভোটের টোপ খেতে নিষেধ করাটা তো পরিষ্কারই। শেষে সকলকে খাদ্যমেলায় দেবাশিসবাবুর আহ্বান, “প্রবল শীতে জমেই তৈরি হোন নালে ঝোলের জন্য। ‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া’।”
The post খাদ্যমেলাকে কেন্দ্র করে ‘উত্তাপ’ বাড়ছে দমদমে, কেন জানেন? appeared first on Sangbad Pratidin.