লোথার ম্যাথাউস: দু’টো সেমিফাইনাল ম্যাচ নিয়ে কিছু বলার আগে কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে দু’চার কথা। এক কথায়, বেলজিয়ামের খেলায় আমি মুগ্ধ। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ওদের ওই ২-১ গোলে জেতাটা এই বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ। কারণ, একটা ভাল ম্যাচে যা যা থাকা দরকার, তার সবই ছিল এতে – ভাল শট, স্কিল এবং নাটক। বেলজিয়ামের এই জয়ে আমার কাছে বড় চমক নয়। এই বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই একটা ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেটা এই ম্যাচেও দেখা গেল। সেটা হল, ছোট দলগুলোর কাছে হেরে বড় দলগুলোকে বাড়ি ফেরা। অর্থাৎ, আগে জার্মানি, আর্জেন্টিনা বা স্পেনের ক্ষেত্রে যা হল, ব্রাজিলের ভাগ্যও সেই একই দিকে এগোল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সেমিফাইনালিস্ট এই চার দলকে শেষ চারে দেখার কথা কেউ ভাবেননি। সুতরাং আমাদের সবাই মাথা ঝাঁকাতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু, এবার আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড এবং ক্রোয়েশিয়া যোগ্য দল হিসাবেই শেষ চারে। অত্যন্ত উঁচু মানের ফুটবল খেলছে। এবং ধারাবাহিকও।
[আজ বিশ্বকাপের এল ক্লাসিকো, নজর কাড়বে দুই কোচের দর্শন যুদ্ধ]
সেমিফাইনালিস্ট চার দলের বিশেষত্বই ওদের এই জায়গায় এনেছে – ইংল্যান্ডের বিশেষত্ব ওদের দ্রুতগতি, ক্রোয়েশিয়ার বুদ্ধি, ফ্রান্সের দলগত সংহতি এবং বেলজিয়ামের অসাধারণ ট্যাকটিক্স। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে লুকাকুকে ডানদিক দিয়ে আক্রমণে তোলা এবং কেভিন দে’ব্রুইনকে ফলস নাইনে ব্যবহার করাটা ছিল ওদের ট্যাকটিক্স। ব্রাজিল রক্ষণ কীভাবে এর জবাব দেবে, খুঁজে পায়নি। এই ট্যাকটিকাল মাস্টারস্ট্রোকের সঙ্গে জুড়তে হবে বেলজিয়ানদের সহজাত প্রতিভা এবং দক্ষতা। যা কিনা সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। হারের জন্য ব্রাজিলীয়দের সেভাবে দায়ী করা উচিত হবে না। বরং আমার মতে ওদের মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়া উচিত ছিল। ওরা খারাপ খেলেনি মোটেই, বরং বলা ভাল তুলনামূলক শক্তিশালী বেলজিয়ামের কাছে হেরেছে। সেই তুলনায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি নিতান্তই সাধারণ দক্ষিণ কোরিয়া এবং মেক্সিকোর কাছে হেরেছে।
[ব্রাজিল টিম বাসে ডিম ও পাথর ছোঁড়ার ভিডিও ভাইরাল, সত্যিটা জানেন?]
দু’টো সেমিফাইনালই সমান-সমান। পরিষ্কার ফেভারিট কেউ নয়। চার সেমিফাইনালিস্ট দলের মধ্যে একমাত্র ফ্রান্সই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফেভারিটের তালিকায় ছিল। আর ক্রোয়েশিয়াকে দেখে আমার অনেকটা ১৯৯০-এর আর্জেন্টিনার কথা মনে হচ্ছে। যারা পরপর দু’টো পেনাল্টি শুট-আউট জিতে ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। ফ্রান্সকে বেশ সংহত দল বলেই মনে হচ্ছে। দলটার বয়স কম। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ওদের শৃঙ্খলা বেশ অবাক করার মতো। বেলজিয়ামের চেয়েও ওদের এই দলগত সংহতি বেশ আমি বলব। রক্ষণের চেয়ে ওদের আক্রমণ ভাল। কিন্তু, এটা মাথায় রেখেও বলব, ফ্রান্সের এমবাপ, গ্রিজম্যান এবং জিরুর চেয়ে বেলজিয়ামের লুকাকু, দে’ব্রুইন এবং এডেন হ্যাজার্ড ত্রয়ী এগিয়ে থাকবে। লুকাকুকে বেশ ভাল লেগেছে। চারটে গোল করেছে। নিজের উপস্থিতিও দারুণভাবে জাহির করছে। ফ্রান্সের আক্রমণভাগ কোথায় পিছিয়ে? আসলে জিরু খুব দ্রুত পাস দিতে পারে। এটা ভাল। কিন্তু, বেলজিয়ান ত্রয়ীর মতো ব্যক্তিগত দক্ষতা ওর নেই। এই সামান্য ফারাকটা বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
[‘লেডিলাক’-এর অনুপস্থিতিতেই হার? রাশিয়া ম্যাচে দেখাই গেল না হটেস্ট ফ্যানকে]
ব্যক্তিগত দক্ষতার নিরিখে কাকে চোখে পড়ল? অবশ্যই আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, বা পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কিংবা ব্রাজিলের নেইমার নয়। ওরা দ্রুত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। মাঝেমধ্যে প্রতিভার ঝলক দেখা গিয়েছে। কিন্তু, তাতে মনে ছাপ পড়ার মতো কিছু হয়নি। ওদের কাছে প্রত্যাশা এতটাই বেশি ছিল যে সেই তুলনায় মেসিকে দেখে হতাশাজনক লেগেছে। রোনাল্ডোকে শুধু স্পেনের বিরুদ্ধেই মোটামুটি লেগেছে। নেইমার নজরে পড়েছে, তবে সেটা সবসময় তার ফুটবলের জন্য নয়। বরং ওদের চেয়ে বেশি ভাল লেগেছে এমবাপে, হ্যাজার্ড, লুকাকু, দে’ব্রুইন, কেন এবং ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচের খেলা।
[এ কেমন স্বাদ! রাশিয়ার বিয়ারে মন মজল না বাঙালিদের]
সুতরাং বিশ্বকাপের আসরে নতুন তারকা, নতুন দল ভেসে উঠছে। এটা কিন্তু বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য। যদি এমবাপে চ্যাম্পিয়ন হয়, সঙ্গে আরও একটা বা দু’টো গোল করে, তা হলে ২৪ সেপ্টেম্বর ফিফা কিন্তু মেসি বা রোনাল্ডোর জায়গায় বর্ষসেরার জন্য অন্য নাম বেছে নেবে। আর বেলজিয়াম জিতলে ওদের ত্রয়ীর যে কোনও একজনকে হয়তো বাছা হবে। রোনাল্ডো হয়তো বেশি গোল করেছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। কিন্তু, ঘরোয়া লিগে তৃতীয়, আর বিশ্বকাপে শেষ ১৬-তেই বিদায়। নেইমারের কথা তো ভাবতেই পারি না। কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিল। আর সঙ্গে ওর প্লে-অ্যাক্টিং। এগুলো কোনওমতেই ওর পক্ষে ভোট দেওয়া যায় না।
The post মিনি ফাইনালে আজ এমবাপে বনাম লুকাকু, তাকিয়ে গোটা বিশ্ব appeared first on Sangbad Pratidin.