সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২৬ হাজার (আদতে ২৫,৭৩৫) চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ঘটনায় বঞ্চিত যোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে এবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। দেড় পাতার চিঠিতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি। কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, ন্যায্য পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরি বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। চিঠিতে ঠিক কী লিখেছেন রাহুল?
মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডেলে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন রাহুল গান্ধী। লোকসভার বিরোধী দলনেতার প্যাডে সোমবার, ৭ এপ্রিল দ্রৌপদী মুর্মুকে তিনি লেখেন, "আদালত নিয়োগ বাতিল করায় পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার শিক্ষিত স্কুল শিক্ষকেরা রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। 'শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে'র প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে আপনার কাছে চিঠি লিখতে অনুরোধ করেন আমাকে।" কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে রাহুল জানান, শীর্ষ আদালত গোটা প্যানেল বাতিল করায় অযোগ্যদের পাশাপাশি যোগ্যরাও চাকরি হারিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া অযোগ্যদের চাকরি বাতিল হওয়াই উচিত, কিন্তু সুপ্রিম রায়ে চরম অবিচার হয়েছে যোগ্যদের সঙ্গে।
রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে রাহুল জানিয়েছেন, আজ চাকরিহারা শিক্ষকরা এক দশকের বেশি সময় শিক্ষকতা করেছেন। তাঁদের ছাঁটাইয়ের ফলে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছে। অন্যদিকে এভাবে কাজ হারানোয় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন শিক্ষকরা। হঠাৎ কর্মহীন হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে তাঁদের পরিবারও। রাহুল লিখেছেন, "ম্যাডাম, আপনি এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। আমার বিশ্বাস যোগ্য শিক্ষক, তাঁদের পরিবার এবং পড়ুয়াদের উপর এই মানবিক অবিচারকে আপনি অনুভব করবেন। আপনার কাছে আমার অনুরোধ, দয়া করে এদের পাশে দাঁড়ান এবং সরকারকে নির্দেশ দিন যাতে করে যোগ্যদের চাকরি বহাল থাকে।"
রাষ্ট্রপতিকে লেখা রাহুল গান্ধীর চিঠি প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, "অপ্রাসঙ্গিক চিঠি। সমস্যার সমাধানে এর কোনও ভূমিকা নেই।" উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ‘যোগ্য’দের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ”আমরা হৃদয়হীন নই। দায় ঝেড়ে ফেলতে পারি না। ভিক্ষা করে আপনাদের খেতে হবে না। স্বেচ্ছায় কাজ করুন, কেউ বারণ করবে না। যতদিন না সুপ্রিম কোর্ট যোগ্যদের তালিকা দিচ্ছে, যতদিন না নোটিস পাচ্ছেন, ততদিন বাচ্চাদের পড়ান।” তাঁর আরও বক্তব্য, ”আমার প্রতিশ্রুতি, যোগ্যদের চাকরি কারও কেড়ে নিতে দেব না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। যাঁরা ভালো ফলাফল করে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে শীর্ষ আদালত ‘চোর’ বলছেন! এটা হয়? রায়ের পিছনে কোনও খেলা নেই তো? বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে না, তা আমরা আশা করি।”