সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিনের অপেক্ষার শেষ। রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলছে পেরু। যেখানে গ্রুপের বাকি তিন দল ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স। গোটা দেশ যখন উৎসবের মেজাজে, তখন পেরুতে বাদ গেলেন না জেলের কয়েদিরাও। তাদের জন্যও আয়োজিত হল স্পেশ্যাল বিশ্বকাপ। এবং সেখানে রাশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন পেরু।
[এই দুই বছরে জন্ম নেওয়া অধিনায়কের হাতেই উঠবে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ!]
অবাক লাগলেও সত্যি। বাস্তবের বিশ্বকাপে যা স্বপ্ন। কিন্তু ঘটনা গল্প হলেও সত্যির মতো। লাতিন আমেরিকা মানে অপার সৌন্দর্য। সেখানেই অবাধ অপরাধের ব্যাপারটাও কারও অজানা নেই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো পেরুতেও তাই অপরাধীর সংখ্যা প্রচুর। তাদের জন্য কী করা যেতে পারে তা পেরু সরকার অনেকদিন ধরেই চিন্তা-ভাবনা করছিল। অবশেষে তাদের জন্য স্পেশ্যাল বিশ্বকাপের আয়োজন হল। এবং সেটা সত্যিকারের বিশ্বকাপের মতো। উদ্দেশ্য একটাই। কিছুক্ষণের জন্য হলেও অপরাধীদের যেন মনে হয়, তারা মুক্ত। মাথার উপর খোলা আকাশ আবার তাদের সামনে। একাধিক জেল, প্রচুর কয়েদি। কীভাবে হল টুর্নামেন্ট? বিশ্বকাপের মতো সেখানে গ্রুপ, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালের ব্যবস্থা ছিল। প্রাথমিক পর্বের সব ম্যাচ হল জেলের সামনে ছোট মাঠে। তবে ফাইনাল সত্যিকারের স্টেডিয়ামে। লিমার মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে। যার দর্শকাসন ৬০ হাজার।
[প্রাক-বিশ্বকাপে বড়সড় অঘটন, অস্ট্রিয়ার কাছে হার জার্মানির]
ফাইনালে মুখোমুখি লুরিগাঞ্চোর জেলের কয়েদিরা পেরুর জার্সিতে। চিমবোট জেলের কয়েদিরা রাশিয়া নামে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই পেশাদারি মোড়কে সাজানো। কয়েদিরা জাতীয় সংগীত গাইলেন। ব্যান্ড বাজল। বাকি কয়েদিরা দেশের হয়ে চিৎকার করে গান গাইলেন। ৬০ হাজারের স্টেডিয়ামে মেরেকেটে ৩০ থেকে ৩৫ জন দর্শক। তাঁরা কয়েদিদের আত্মীয়-বন্ধুরা। ৯০ মিনিটের ম্যাচ শেষ ২-২ গোলে। তারপর টাইব্রেকার। যেখানে পেরু ৪-২ গোলে হারাল রাশিয়াকে। বিজয়ী টিমের টমাস ম্যানুয়েল আগুইরে বলছিলেন, ‘বিশ্বাস করুন, কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল সত্যিকারের বিশ্বকাপ খেলছি। জানতাম আবার জেলে ফিরতে হবে। কিন্তু ফুটবল খেলে মুক্তির স্বাদ পেলাম। সেটাই বা কম কী? বুক ভরে টাটকা বাতাস তো পেলাম।’
[নামী তারকা অথচ সুযোগ পাননি বিশ্বকাপে, কারা রয়েছেন তালিকায় ?]
টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলি হয়েছে চার জায়গায়। চিমবোটে, অ্যানকন, লিমা ও ইকাতে। ৬৯টি জেলের কয়েদি অংশ নেয়। এবং এক জেল থেকে অন্য জেলে খেলতে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেকের হাত শিকল বেঁধে রাখা হয়েছিল। পেরুর কারাগারের ডিরেক্টর পদে থাকা কার্লোস ভ্যাসকুয়েজ জানিয়েছেন, লাতিন আমেরিকায় এর আগে কোনও দেশে এমন কয়েদিদের নিয়ে বিশ্বকাপ হয়নি। তাঁর কথায়,’ওরা তো এই টুর্নামেন্ট চলাকালীন নানা সমস্যা করতে পারত। করেনি। আসলে ফুটবল ওদের বেঁধে রেখেছিল।’
The post বন্দি জীবনে কয়েক মুহূর্তের জন্য মুক্তির স্বাদ এনে দিল ফুটবল appeared first on Sangbad Pratidin.