দুলাল দে: ভারতীয় ফুটবল মহলে এই মুহূর্তে মারাত্মক ভাবে প্রচার হয়েছে খবরটি। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, প্রত্যেকে এই খবরটি নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যর মুখ থেকে যেহেতু সরকারিভাবে শোনা যায়নি, তাই সরাসরি এই ইস্যুতে কেউ বক্তব্যও রাখছেন না। তবে শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী না কি, ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে ফেডারেশন সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার জন্য বার্তা দিয়েছেন। কারণ, দেশের লিগ করার দায়িত্ব ফুটবল ফেডারেশনের। আর আইএসএলের পাশাপাশি আই লিগের আয়োজন করতেও ব্যর্থ ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ফেডারেশন এতটাই ব্যর্থ যে, দেশের লিগ চালু করার জন্য এখন এগিয়ে আসতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রককে। এই কারণেই কল্যাণকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, যদি সমস্যা সামাধান করতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিন। তবে এটাও শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশন সভাপতির দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হননি কল্যাণ চৌবে। জানিয়েছেন, আগস্ট পর্যন্ত পুরো টার্ম শেষ করতে চান। এর মধ্যেই সমস্যার সমাধান করবেন। সেই সূত্রেই ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিশকে সঙ্গী করে ফের এফএসডিএল কর্তাদের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। তবে তাতে চিঁড়ে ভেজেনি বলেই শোনা যাচ্ছে। ফলে সমস্যা সমাধানের জন্য ফেডারেশনকে এখন তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের দিকেই।
ফেডারেশন হাউসে কান পাতলেই যা শোনা যাচ্ছে তা হল, আইএসএল শুরু করার জন্য এফএসডিএলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে গিয়েছিলেন ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস। ৩৭.৫ কোটি টাকা-সহ আরও নানা বিষয়ে এফএসডিএল ফেডারেশনের উপর এতটাই বিরক্ত যে, তারা আইএসএল আয়োজন নিয়ে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তখন এফএসডিএলকে রাজি করানোর জন্য ফেডারেশন সভাপতি জানান, ৩৭.৫ কোটি টাকাতে শুধু আইএসএল নয়, আই লিগও এফএসডিএলকে করতে দেওয়া হবে। তাতেও ফেডারেশন সভাপতির প্রস্তাবে রাজি হয়নি এফএসডিএল। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এইভাবে আলোচনা করে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে তারা কোনওভাবেই রাজি নয়। ফলে ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের মিটিংয়ের কোনও সুফল মেলেনি। ফেডারেশনের প্রস্তাব শোনা মাত্রই পত্রপাঠ না করে দিয়েছেন এফএসডিএল কর্তারা।
যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আইএসএল হওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টকে। এর পর দু'সপ্তাহ পর ফের কোর্টের সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা সবার। এই দুই সপ্তাহের আগেই ফেডারেশন সভাপতি চেয়েছিলেন নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এফএসডিএলের সঙ্গে কথা বলে কোনও পথ বের করার। কল্যাণ চৌবের নেতৃত্বাধীন ফেডারেশেনের প্রতি এফএসডিএল খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। ফলে ফেডারেশন যদি নিজের উদ্যোগ নিয়ে তাদের কাছে কোনও প্রস্তাব নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কল্যাণ চৌবেরা এখন তাকিয়ে আছেন সেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের দিকেই। ভারতীয় ফুটবল নিয়ামক সংস্থার যে আর্থিক সমস্যা তা সমাধান করার কাজ ফেডারেশনেরই। সেই কাজ তারা সমাধান করতে পারছে না বলেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক এগিয়ে এসেছে।
এই মুহূর্তে ফেডারেশন সভাপতিকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় এই পরিস্থিতির সম্পর্কে তাহলে তিনি কোর্টের দিকে দেখিয়ে দিচ্ছেন পুরো বিষয়টিকেই। অথচ এই বিষয়টি কোর্টে যাওয়ারই কথা ছিল না, যদি তিনি সুষ্ঠভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। এমন কী আদালতও একটা সময় ছেড়ে দিয়েছিল এআইএফএফের উপর। কিন্তু দেখা গিয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও ফেডারেশনের দিকে তাকিয়ে কোনও সংস্থাই আইএসএল আয়োজন করতে আগ্রহী দেখায়নি। যার ফলে পুরো বিষয়টি ফের কোর্ট কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে এগিয়ে আসতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক চেষ্টা করছে দু-সপ্তাহের মধ্যে, কোনও একটা পথ বের করে সমস্যা সমাধানের। ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের চুক্তি শেষ হচ্ছে ৮ ডিসেম্বর। তার আগেই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া দু-সপ্তাহ সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আদালতের শেষ শুনানির দিন এফএসডিএল তাদের পক্ষে কোনও আইনজীবীও রাখেনি। তারা আর কোনওভাবেই এই ইস্যুতে পার্টি হতে চাইছে না।
তবে এটাও ঠিক, আইএসএলের আয়োজন করার জন্য এখনও অপেক্ষা করছে এফএসডিএল। এবারের লিগ আয়োজন করার জন্য পুরো বিষয়টিকে স্পেশ্যাল কেস হিসেবেই দেখছে তারা। কিন্তু সেই সমস্যা সামাধান আর ফেডারেশনের পক্ষে করা সম্ভব নয়, সেটা এতক্ষনে সবাই বুঝে গিয়েছেন। তারমধ্যেও ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের জন্য একটাই আশার আলো, সমস্যা সমাধানের জন্য এখন দায়িত্ব নিয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক। ফলে সবাই তাকিয়ে সেদিকেই। সবারই আশা, হয়তো শেষ পর্যন্ত এই মরশুমের লিগ চালু করার জন্য এফএসডিএলকে ঠিক রাজি করিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক।
