সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি আলাদিন। তিনি আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। আশ্চর্য প্রদীপের সন্ধান দিতে পারতেন তিনিই। অন্তত বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের অরণ্যে যখন বলের অপেক্ষায় চাতক হতেন স্ট্রাইকাররা, তখন তিনিই হতেন স্বপ্নের কাণ্ডারি। জনা-তিনেক ফুটবলার তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে। ছটফটে পা প্রতি মুহূর্তে ধোঁকা দিচ্ছে বিপক্ষের চোখকে। এই মনে হচ্ছে তিনি নিজেই দৌড়বেন গোলের দিকে। কিংবা যখন মনে হবে একটা দূরপাল্লার শট স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র, ঠিক তখনই সকলকে অবাক করে তিনি বলের গায়ে ঠিকানা লিখে দিতেন। বাকিটা ম্যাজিক। কখনও মেসির, কখনও দাভিদ ভিয়া। কিন্তু ফুটবল বিশ্বে কত গোলে যে লেখা আছে ইনিয়েস্তার নাম, তার ইয়ত্তা নেই।ফুটবলকে বিদায় নিয়ে আশ্চর্য প্রদীপ ঝোলায় তুলে রাখলেন ম্যাজিশিয়ান।
স্পেনের হয়ে কম ফুল তো তিনি ফোটাননি। দেশের জন্য হোক কিংবা ক্লাবের জন্য। পাশে যে স্ট্রাইকারই থাকুক না কেন, গোলমুখ খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। দেশের ফুটবল সভ্যতায় নদীর মতোই পলি জুগিয়েছেন ইনিয়েস্তা। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে তাঁর অববাহিকা। যার উপর আবার পালটা নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে দেশ। ফুটবল টিম গেম বটে, তবে সময়ে সময়ে এভাবেই একক দক্ষতা হয়ে উঠেছে দেশের সমার্থক। ইনিয়েস্তা তাই অন্য এক ফুটবল সংস্কৃতি। যেখানে স্পেন বা বার্সার সমর্থকের বাস শুধু নয়। সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরাই বেড়াতে যেতে ভালবাসেন। কারণ এমন চোখের আরাম আর কোথায়! এমন মনের শান্তিই বা কে সহজে দিতে পারেন! যেমনটা তিনি দিতে পারতেন চোখ জুড়নো ছবির মতো ফুটবলে।
কিন্তু এখন সে সবই অতীত। এখন তা নেহাতই চর্চার বিষয়। স্পেনের জার্সি ছেড়েছন ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে পরাজয়ের পর। বার্সেলোনার সঙ্গও ত্যাগ করেছেন অনেক দিন। তার পর ভিসেল কোবে হয়ে এমিরেটস ক্লাব। তাঁর পায়ের জাদু বহুদিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে। তবু শেষের ঘোষণা মানে শেষই। সুতরাং ওই আশ্চর্য প্রদীপের মায়া যে আর দেখা যাবে না সেটাই বাস্তব। তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
শেষ পর্যন্ত একটা কথাই বলা যায়, ধন্যবাদ ইনিয়েস্তা। ফুটবলকে তুমি যা দিয়ে গেলে তার পরিমাপ করা সাজে না। ফুটবল দেবতা সযত্নে তুলে রাখবে সে নিবেদন। তবু আক্ষেপ যেন যায় না। ফুটবল তো এগিয়ে যাবে নতুন তারকাদের কাঁধে ভর করে। কিন্তু সেই রাতের মায়া, সেই গ্যালারি ভর্তি মানুষের আশা-প্রত্যাশায় তিরতির করে কেঁপে ওঠা, সেই গোলমুখে দৌড়, সেই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাড়িয়ে দেওয়া ঠিকানা লেখা পাশ, আর শেষমেশ গোলে জড়িয়ে যাওয়া বল...সেই ম্যাজিক আর কোথায়! আর কি কখনও কবে, এমন সন্ধ্যা হবে? হয়তো নয়। তাঁর পাস থেকে আর গোল করেন না মেসি। সেই অধ্যায় পেরিয়ে গিয়েছে বছর ছয়েক আগে। হয়তো আর কিছুই হবে না আগের মতো। প্রজন্মের সন্ধিলগ্নের কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক ম্যাজিক। কেড়ে নিল ম্যাজিশিয়ানকেও। তবু স্মৃতি তো সে কাড়তে না। সেখানেই চিরকাল থেকে যাবে সেই সব অবিশ্বাস্য মুহূর্তরা, জ্বলবে ইনিয়েস্তার আশ্চর্য প্রদীপ।