ভদ্রলোকের নাম পাবলো আমো আগুয়াডো। ২০১৬ সালে অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতায় জোস মোলিনার সহকারী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউরো জয়ী স্পেনের সহকারী কোচ। হেড কোচ লুইস ডে লা ফুয়েন্তের ছায়াসঙ্গী। ইউরো জয়ের পর যিনি হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে। ফ্লাইটে বার্লিন থেকে মাদ্রিদ যাওয়ার পথে যিনি লামিন ইয়ামাল থেকে মোলিনা–সব কিছু নিয়ে অকপটে কথা বললেন শিলাজিৎ সরকারের সঙ্গে।
প্রশ্ন : ১২ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে ফের ইউরোপ-সেরা স্পেন। আর সেই দলের অংশ আপনি। স্বপ্নপূরণের এই মুহূর্তকে বর্ণনা করবেন কীভাবে?
পাবলো : সত্যি বলতে, আমরা সকলেই গর্বিত। ইউরো জেতার জন্য এ কথা বলছি এমন নয়। চ্যাম্পিয়ন না হলেও এই দলটাকে নিয়ে আমরা একই রকম গর্ব অনুভব করতাম। কারণ এবার ইউরোয় আমাদের পারফরম্যান্স তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহী করবে। ওরা জানতে পারবে, এমন একটা দলের অংশ হওয়ার অর্থ কী! সবচেয়ে বড় কথা, অনুরাগীদের আমরা সুন্দর ও সাহসী ফুটবল উপহার দিতে পেরেছি।
প্রশ্ন : ইউরোর (Euro Cup 2024) সময় স্পেনের ড্রেসিংরুমের ছবিটা ঠিক কেমন ছিল?
পাবলো : আমরা এমন একটা পরিবার হয়ে উঠেছিলাম, যারা যে কোনও পরিস্থিতিতেই একসঙ্গে থাকে। একসঙ্গে জিতেছে। একসঙ্গে কষ্ট পেয়েছে। একসঙ্গে উদযাপন করেছে। আর প্রতিনিয়ত একে অপরকে আগলে রেখেছে। জার্মানি থেকে শুধু ট্রফি নয়, এই পরিবারটা নিয়েও ফিরছি আমরা।
প্রশ্ন : আপনাদের এই পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য, লামিন ইয়ামাল তো স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন। ১৭ বছর বয়সেই প্রচারের আলো কেড়ে নিয়েছেন যিনি। ইউরোয় লামিনের পারফরম্যান্স কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
পাবলো : ওহ! লামিন অসাধারণ, ঐশ্বরিক! ওর পুরোটাই সহজাত প্রতিভা। আমরা শুধু ওকে বলেছি, নিজের খেলা উপভোগ কর। দেখুন, আমাদের দলে ভালো প্লেয়ারের অভাব নেই। আর ফুটবলে সব জয়ই টিম হিসাবে অর্জন করতে হয়। এবারও মাঠে আর মাঠের বাইরে আমাদের সব প্লেয়ারই দুরন্ত ফর্মে ছিল। তবে লামিন নিয়ে বলব, ও দুর্দান্ত একজন মানুষ। এই বয়সেই ইউরো জিতেছে। আগামীতে আরও সাফল্য পাবে। তবে ওর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় সেটা নয়। রড্রি, ড্যানি কার্ভাহাল, জেসুস নাভাসের মতো প্লেয়ারদের পাশে নিয়ে কীভাবে ফুটবলটা খেলতে হয়, লামিন তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
প্রশ্ন : সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে কোচ লুইস এবং তাঁর সহকারী হিসেবে আপনি দীর্ঘদিন স্পেনের (Spain) বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখানে থাকা অনেক ফুটবলারই এখন সিনিয়র দলের সদস্য। সেই অভিজ্ঞতা এখন দল চালানোর ক্ষেত্রে কতটা সাহায্য করেছে?
পাবলো : একটা দলের সংস্কৃতি সবসময় ফুটবলারদের উপর নির্ভর করে। আপনার দলে কেমন ফুটবলার আছে, তার ভিত্তিতে পৃথক পৃথক কনটেক্সট তৈরি হয়। আপনাকে একজন কোচ হিসাবে সেই কনটেক্সটা বুঝতে হবে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আসলে ক্লাব টিমের থেকে জাতীয় দল সামলানো কঠিন। দু’টো একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি। জাতীয় দলে ফুটবলারদের দু’তিন দিনের স্বল্প সময়ের মধ্যে কথা বলে, ভিডিও দেখিয়ে ম্যাচের জন্য তৈরি করতে হয়। একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারকে নিয়ে একটা দল তৈরি করার পাশাপাশি তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করতে হয়। কোচ লুইস-সহ আমাদের অন্য সাপোর্ট স্টাফরা এই কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী। কারণ দীর্ঘদিন এভাবেই কাজ করে আসছি। এই দলের অনেকেই বয়সভিত্তিক ইউরো জিতেছে লুইসের কোচিংয়ে। সেটা আমাদের দল হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
[আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতা এবং খ্যাতি ওকে বদলে দিয়েছে’, কোহলিকে নিয়ে বিরাট বিস্ফোরণ প্রাক্তন সতীর্থের]
প্রশ্ন : কোচ হিসালে লুইস যখন দায়িত্ব নিলেন, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় আপনারা এই রূপকথার দলটা তৈরি করলেন?
পাবলো : আমরা আগেই জানতাম, স্পেনের এই টিম কী করতে পারে। কারণ আগেই বয়সভিত্তিক দলে ওদের পারফরম্যান্স আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। সেসব দিন পার করেই আমরা সিনিয়র দলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তাই জানতাম, দর্শন না বদলেও আমাদের পরিকল্পনায় উন্নতি করা সম্ভব। আসলে কোচ লুইস একজন দুর্দান্ত নেতা। দলের সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়। সে প্লেয়ার হোক বা স্টাফ, কেউই নিজেকে অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বা একেবারে উপেক্ষিত অনুভব করে না। তাই এই দলের সাফল্যের অংশীদার সকলেই।
প্রশ্ন : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কলকাতার কথা মনে আছে আপনার?
পাবলো : মনে থাকবে না? ইন্ডিয়ান সুপার লিগের কথা ভোলা সম্ভব নয়। অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতায় সহকারী কোচ হিসাবে আইএসএলের একটা সংস্করণে কাজ করেছি। ওই দলের অনেক ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ওরা ইউরো জয়ের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছে। ওদের কাছেই শুনলাম আমাদের জয় এবং ইংল্যান্ডের হার আপনাদের দেশের অনেককে খুশি করেছে। আপনাদের দেশের মানুষ সত্যিই অসাধারণ। আমি আপনাদের দেশবাসী এবং জাতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানাই।
প্রশ্ন : আর জোস মোলিনা? যাঁর হাত ধরে আপনি প্রথম কলকাতায় পা রেখেছিলেন, তাঁকে নিয়ে কী বলবেন? তিনি তো এবার মোহনবাগানের কোচ হিসাবে ফের কলকাতায়
ফিরতে চলেছেন।
পাবলো : আমি এই ইউরো ট্রফিটাই মোলিনাকে উৎসর্গ করতে চাই! মোলিনা দুর্দান্ত একজন কোচ। কলকাতায় ওঁর সহকারী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমিও শুনেছি ওঁর কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের খবরটা। মোলিনা এবং ওঁর বর্তমান ক্লাব মোহনবাগানকে অনেক শুভেচ্ছা। মোহনবাগানকে বলতে চাই, তোমরা সঠিক লোকের হাতেই পড়েছ!