দুলাল দে: অবশেষে ৪ কোটি টাকায় প্রাক্তন জাতীয় কোচ ইগর স্টিমাচের(Igor Stimac) সঙ্গে সমঝোতা করল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন(AIFF)। যে কারণে, আর্থিকভাবে সমস্যায় থাকা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আরও সমস্যায়। আর ইগরও ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ কোটি টাকা পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই ইস্যুতে আর ফিফার দ্বারস্থ হবেন না। ফলে ইগর স্টিমাচের জরিমানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে ফেললেন ফেডারেশন কর্তারা। এই ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে যে আর্থিক সমস্যার মধ্যে ফেডারেশন রয়েছে, তাতে আরও সমস্যা বেড়েছে।
চুক্তির মাঝেই ইগর স্টিমাচকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দু’বছরের বকেয়া বেতন দাবি করে বসেন ইগর। হুমকি দেন, দু’বছরের বকেয়া বেতন না পেলে ফিফার দ্বারস্থ হবেন। ইগর স্টিমাচের সঙ্গে আগেভাগে আলোচনা না করে হঠাৎই বরখাস্ত করে দেওয়ায় ফেডারেশন কর্তারা বুঝতে পারেননি, এরকম সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ, ইগরকে বকেয়া ৮ কোটি টাকা দেওয়ার পর নতুন জাতীয় কোচকে বেতন দিতে হবে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ফেডারেশনের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে সব কিছু সামলে ফেলা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে ইগরের দাবি শুনে তখন দ্রুততার সঙ্গে জানানো হয়, তিন মাসের বেতন দিতে ফেডারেশন রাজি আছে। কিন্তু ফেডারেশনের তরফে তিন মাসের বেতনের প্রস্তাব পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখান করেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন জাতীয় কোচ। জানিয়ে দেন, তিন মাসের বেতন নেবেন না। চুক্তি অনুযায়ী ২ বছরের বেতন চেয়ে ফিফার কাছে অভিযোগ জানাবেন তিনি।
নড়ে চড়ে বসে ফেডারেশন। এরমধ্যেই মানালো মার্কুইয়েজকে জাতীয় কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। একদিকে ইগরের বিশাল অঙ্কর জরিমানা দেওয়ার চাপ। অন্যদিকে নতুন কোচের বেতন। আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে মানালো মার্কুইয়েজকে তখন প্রস্তাব দেওয়া হয়, জাতীয় দলের পাশাপাশি আইএসএলের দল এফসি গোয়াতে কোচিং করতে পারবেন মানালো। তাহলে এই মরশুমে জাতীয় কোচ হিসাবে বিশাল অঙ্কর বেতন তাঁকে দিতে হবে না। মানালোকে জানানো হয়, এই মরশুমে যখন যখন তিনি জাতীয় শিবিরে আসবেন, সেইসময় দিন হিসেবে করে তাঁকে বেতন দেওয়া হবে। যার অর্থ, শিবির প্রতি বেতন।
এখানেই অনেকে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। একজন জাতীয় কোচের জন্য শিবির প্রতি বেতন! এক্ষেত্রে ফেডারেশনের যুক্তি হল, আর্থিক সমস্যায় এরকম পন্থা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আরও ভাল কোনও কোচ বেছে নেওয়া হলে কোনও ভালো কোচ এই শর্তে ভারতীয় দলের কোচ হতে চাইতেন না। ফলে মানালো মার্কুইয়েজকে কোচ না করে অন্য কোনও উপায় ছিল না। মূল বেতনটা পাচ্ছেন, এফসি গোয়া থেকে। মাঝে মধ্যে জাতীয় দল থেকে। এই মরশুমে ইগর স্টিমাচের বেতন দিতে হচ্ছে বলেই জাতীয় কোচকে বেতন দেওয়ার জায়গায় নেই ফেডারেশন। তখন ঠিক হয়েছে, এই মরশুমটা এভাবে কাটানোর পর ১ জুন থেকে মানোলো মার্কুইয়েজের সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে চুক্তি করবে ফেডারেশন। পরের মরশুম থেকে আর তিনি এফসি গোয়ার কোচ থাকতে পারবেন না। শুধুই জাতীয় দলে কোচিং করাবেন।
এদিকে, শুরুতে ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হচ্ছিলেন না ইগর স্টিমাচ। বিশেষ করে যেভাবে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। দু’পক্ষের তরফে বেশ কিছু আলোচনার পর ঠিক হয়, এর বছরের বেতন ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করবেন তিনি। আর সেরকমটাই হয়েছে।