প্রসূন বিশ্বাস: সংযুক্ত সময়ে বাঁ-পায়ের দূরপাল্লার শটে ওড়িশার জালে বলটা জড়িয়ে যেতেই উল্লাসে ভেসে গেল গোটা যুবভারতী। নব্বই মিনিটের অপেক্ষার যেন অবসান ঘটল। ওদিকে গ্যালারির দিকে ছুটতে ছুটতে স্টেনগান চালানোর ভঙ্গিতে উচ্ছ্বাসে মাতলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ততক্ষণে তাঁকে ঘিরে ধরেছে সতীর্থরা। যেন নিজেকে খুঁজে পেলেন দিমি। যেন গোটা মরশুমের অপ্রাপ্তির ঘড়া এক গোলে পূর্ণ হয়ে গেল।

আসলে গতবার নিজেকে দারুণ ভাবে মেলে ধরলেও এবারের আইএসএলে সেভাবে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সব সার্চলাইটের আলো যেন গিয়ে পড়ছিল গ্রেগ স্টুয়ার্ট, ম্যাকলারেনদের উপর। ফর্ম ভালো ছিল না। গোল আসছিল না। দল থেকে বাদও পড়তে হয়েছিল। গত বছর যে সমর্থকরা তাঁকে নয়নের মণি করে রেখেছিল, যারা তাঁকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছিল, তারাই এই মরশুমে 'দিমি গো' লেখা পোস্টার সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে গিয়েছেন একের পর এক। তাতে হয়তো একটু অভিমানও হয়েছিল। কিন্তু চেষ্টা থামাননি। যখন যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন মাঠে সেরাটা দিয়ে এসেছেন। অবশেষে ফল পেলেন লিগ জয়ের ম্যাচে।
ম্যাচের শেষে চ্যাম্পিয়ন লেখা জার্সি গায়ে চাপিয়ে কথা বলতে গিয়ে কিছুটা যেন অভিমান ঝড়ে পড়ছিল তাঁর গলা থেকে? গোল পাচ্ছিলেন না বলে তাঁর ঠাকুরদাও দেশ থেকে বারবার তাঁকে তাগাদা দিচ্ছিলেন। এদিন গুরুত্বপূর্ণ গোল করার পরই সেই গল্প শুনিয়ে গেলেন দিমি। বলছিলেন, "গোল পাচ্ছিলাম না বলে দেশ থেকে দাদু বারবার আমাকে বলত গোল আসছে না কেন? গোল কর আবার। আজ গোল পেলাম। তাই এই গোলটা ওঁকেই উৎসর্গ করলাম।” সঙ্গে সঙ্গে আরও বলেন, সমর্থকদেরও উৎসর্গ করছি। পাশাপাশি আমার খারাপ সময়ে যাঁরা পাশে ছিল বিশেষ করে আমার পরিবারকেও এই গোল উৎসর্গ করছি।
ম্যাচের শেষে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা দিমিত্রি পেত্রাতোসদের নিয়ে সমর্থকদের ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন যখন তখনই পাশে দাঁড়িয়ে এদিনের অনুভূতি নিয়ে ছোট্ট উত্তর দিয়ে দিয়ে গেলেন, “প্রত্যেকটা সাফল্যের পিছনেই কঠোর পরিশ্রম থাকে। অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। এই গোলটা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ ছিল। ষাট হাজার দর্শকের সামনে এই জয়টা বিশেষ অনুভূতি।” এই সমর্থকদের কথা বলতে গিয়েই যোগ করেন, এই ম্যাচটায় সুযোগ পেয়েছি। নিজে আনন্দ করার পাশাপাশি সবাইকে আনন্দ দিতে পেরেছি। এটা আমার কাছে বড় পাওনা।”