দুলাল দে: অদ্ভুত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই মরশুমের আইএসএলের প্রথম ডার্বি(Kolkata Derby)। অদ্ভুত সময় এই কারণেই বলা, কলকাতা লিগে রিজার্ভ টিমের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল জয় পাওয়ার পর যখন ডুরান্ড কাপে শক্তিশালী মোহনবাগান পুরো দল নিয়ে পরিকল্পনা করেছে, কলকাতা লিগের ডার্বি হারের বদলা নেবে। ঠিক তখনই শহরের বিভিন্ন ঘটনাসমূহ এমনভাবে উপস্থাপিত হয় যে, ডুরান্ডের ডার্বিটাই ভেস্তে যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শনিবার সন্ধ্যায় মরশুমে প্রথমবারের জন্য ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দু’দলই সম্মানের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে পূর্ণ শক্তিতে। অবশ্য চোটের জন্য একমাত্র মহেশ সিং নাওরেমকেই পাবে না ইস্টবেঙ্গল। বাকি সব ঠিকঠাক।
সেই অর্থে পূর্ণ শক্তির মরশুমের প্রথম ডার্বিতে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, দুই দলের সমর্থকদের কাছে সেই লড়াইয়ের আবহটা শেষ পর্যন্ত তৈরি হল কোথায়? এর একটা কারণ হতে পারে, পাড়ায় পাড়ায় দু’দলের সমর্থকরা পুজো পরবর্তী সময়ের ধকল বা রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবুও শনিবারের ডার্বি ঘিরে দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে মোহনবাগান সমর্থকদের আগ্রহটাই বেশি। এর একটা কারণও আছে।
দলের পারফরম্যান্স খারাপ হতেই পারে। বিশ্ব ফুটবলের বহু উন্নত লিগেও অনেক সময় বড় দলগুলি শুরু করে অত্যন্ত শম্বুক গতিতে। কিন্তু তা বলে লিগের প্রথম চারটে ম্যাচ থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ মাত্র শূন্য! এই তথ্যটাই হজম করতে পারছেন না ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ফলে অনেক লাল-হলুদ সমর্থক বিশ্বাসই করতে পারছেন না, এই অবস্থা থেকে শক্তিশালী মোহনবাগানকে হারানো সম্ভব। কারণ, জোসে মোলিনার কোচিংয়ে এই মরশুমে নানা ঠোক্কর খেতে খেতে চললেও চার ম্যাচ থেকে সাত পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান এই মুহূর্তে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে। সেখানে সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট শূন্য ! লিগ টেবিলে সর্বনিম্ন স্থানে।
মোহনবাগানে শুরুর সেই অগোছালো অবস্থাটাও কাটিয়ে উঠেছেন কোচ মোলিনা। তাঁর সমস্যা শুধু একটাই। প্রথম দল তৈরি নিয়ে। জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রি পেত্রাতোস না জেসন কামিংস? এর সঙ্গে ধরুণ গ্রেগ স্টুয়ার্ট। কাদের খেলাবেন? আর কাদের বাইরে রাখবেন? এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা। সমস্যা রয়েছে ডিফেন্স নিয়েও। দুই বিদেশি ডিফেন্ডারে যাবেন না এক বিদেশি ডিফেন্ডারে? তবে দলের যা অবস্থা, সম্ভবত দুই বিদেশি ডিফেন্ডারেই শুরু করবেন মোলিনা। নাহলে যে ক্লেটন আর দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস কী করে দেবেন, ভরসা নেই। ফলে শক্তিশালী আক্রমণভাগ সাজাতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। সব মিলিয়ে দু’দলের কাছে সমস্যার পাহাড় দু’রকম। একদিকে মাঠের বাইরে একদম অচেনা, অজানা কোচের অধীনে ডার্বি খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল। উল্টোদিকে, কর্তারা কোচের হাকে এত বেশি অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিয়েছেন যে, যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হারানোর পরিকল্পনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মোহনবাগান কোচ। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর আগে লড়াই যতটা অসম মনে হোক, মাঠে বল গড়িয়ে গেলে সবাই এক বিন্দুতে।