স্টাফ রিপোর্টার: ইউরোর সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন নিয়ে আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে ঘুরেফিরে আসছে তিন দেশের নাম। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি। কেউ কেউ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন পর্তুগাল আর স্পেনের কথাও।
কিন্তু গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইটালিকে নিয়ে আলোচনা বিশেষ একটা শোনা যাচ্ছে না। অবশ্য সেটা অস্বাভাবিক নয়। শেষ দু’বার বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা, গোলপার্থক্যে এগিয়ে থেকে কোনওরকমে এবার ইউরো (UEFA Euro 2024) খেলার ছাড়পত্র পাওয়া দলকে নিয়ে কেনই বা বেশি আলোচনা হবে? আর এই ছবিটাই বদলে দিতে প্রাণপাত করছেন ইটালি কোচ লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি (Luciano Spalletti)। বছর পঁয়ষট্টির এই কোচ এমনিতেই কড়া ‘হেডমাস্টার’ হিসাবে পরিচিত। দেশের সেরা তারকাদের কোচিং করাতে এসেও একবিন্দু বদল হয়নি তাঁর। যিনি সরাসরি ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, “নিয়ম মানা বা না মানা তোমাদের উপর। তবে না মানলে আমার দলে তোমাদের জায়গা হবে না।” আসলে স্প্যালেত্তির লক্ষ্য একটাই, দল হিসাবে ইতালির পুরনো সম্মান ফেরানো। রবিবার রাতে আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে সেই লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে ‘আজুরি’রা। যে প্রতিপক্ষ অঘটন ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন খোদ স্প্যালেত্তি।
[আরও পড়ুন: ফ্লোরিডায় ভারত-কানাডার প্রতিপক্ষ হতে পারে বৃষ্টি, বল কি আদৌ গড়াবে?]
কী কী নিয়ম চালু করেছেন স্প্যালেত্তি? ইটালি (Italy) কোচের সংসারে পাঁচটি কাজ করতে পারবেন না ফুটবলাররা। এক, টিম মিটিং বা খাওয়ার টেবিলে দেরিতে পৌঁছানো যাবে না। ‘আজুরি’দের টিম মিটিং হয় ঠিক দুপুর ১২টায়। লাঞ্চ ১২.৪৫। ডিনার রাত ৮টা। কোনও অবস্থাতেই এই সময়সীমা পার করা যাবে না। দুই, খাওয়ার টেবিলে বা ম্যাসাজ নেওয়ার সময় ব্যবহার করা যাবে না ফোন। তিন, সতীর্থদের সঙ্গে থাকলে হেডফোন ব্যবহারেও আছে নিষেধাজ্ঞা। বরং কথা বলতে হবে নিজেদের মধ্যে। তাতে কোনও সদস্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন না দল থেকে। চার, অতিরিক্ত হাসি-মজা করতে পারবেন না ফুটবলাররা। আনন্দ করা যেতেই পারে, তবে সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে দলের লক্ষ্যের কথা।
স্প্যালেত্তির শিবিরে সবচেয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ‘প্লে স্টেশন’ খেলার উপর। দায়িত্ব নেওয়ার পরই ফুটবলারদের ঘরে কোনও ‘গেমিং কনসোল’ রাখতে দেননি ইটালির কোচ। কেন? স্প্যালেত্তির বক্তব্য, “অনেকেই ভিডিও গেমে আসক্ত। আর কোনও আসক্তিই ভালো নয়। ফুটবলারদের বুঝতে হবে, ওরা এখানে ইউরো জিততে এসেছে। সেজন্য ফোকাসটা ফুটবল খেলার উপর রাখতে হবে। কারও যদি মনে হয় মাঠের ট্রেনিং যথেষ্ট নয়, আমি তাকে বাড়তি পরিশ্রম করাতে তৈরি। কিন্তু গেম খেলা চলবে না।” কেন এতটা কঠোর স্প্যালেত্তি? জানা গিয়েছে, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচটাই ছিল ইউক্রেনের (Ukraine) বিরুদ্ধে। ‘প্লে স্টেশন’ খেলে ভোরবেলা ঘুমাতে যাওয়ায় কয়েকজন ফুটবলার ম্যাচের দিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপরই গেম খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন স্প্যালেত্তি।
[আরও পড়ুন: একটুর জন্য হল না অঘটন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়েও হৃদয় ভাঙল নেপালের]
মাঠের বাইরের মতো ভেতরেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় স্প্যালেত্তির ছাত্রদের। যেমন, প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা বা ‘প্রেসিং’ চালিয়ে যেতে হবে। বলের দখল হারালে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য লড়তে হবে। বল পজেশন ধরে রেখে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দলের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে দেওয়া যাবে না ম্যাচের মাঝে। গড় রক্ষার কাজটা সবাই মিলে করতে হবে। এবং কোচের বলে দেওয়া ফর্মেশন ধরে রাখতে হবে। তবে স্প্যালেত্তির এসব নিয়ম-কানুনে ভালো মনেই মানছেন ‘আজুরি’-রা। অধিনায়ক জিয়ানলুইজি ডোনারাম্মা যেমন বলে দিয়েছেন, “কোচের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন নয়।” সেই পরামর্শ আজুরিরা কতটা মেনে চলেছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে আলবেনিয়া ম্যাচেই।
আজ ইউরোয়
ইতালি বনাম আলবেনিয়া
রাত ১২.৩০, ডর্টমুন্ড
সোনি টেন নেটওয়ার্ক