shono
Advertisement

‘রাশিয়া-ইউক্রেন ভাই ভাই, যুদ্ধ অসম্ভব’, বলছেন ভারতে খেলে যাওয়া ইউক্রেনীয় ফুটবলার

২০১৮-১৯ মরশুমে আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল ছিল এই ফুটবলারের।
Posted: 04:32 PM Feb 22, 2022Updated: 12:15 PM Feb 23, 2022

কৃশানু মজুমদার ও মণিশংকর চৌধুরী: দ্বিখণ্ডিত ইউক্রেন। ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ যুদ্ধ গন্ধ আসতে শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেন থেকে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পেশি আস্ফালন করছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে হুমকি দিয়ে রেখেছেন রুশ প্রশাসনকে। কোনওমতেই তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে পালানোর জন্য একপ্রকার তৈরি। ইউক্রেনের জাপরজাই শহরে বসে রোল্যান্ড বিলালা সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছেন, ”আমার শহরে সব ঠিক আছে। বিশ্বাস করুন কোনও সমস্যাই নেই।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ইউক্রেনকে দ্বিখণ্ডিত করায় চাপছে নিষেধাজ্ঞা, পাবে যোগ্য জবাব’, রাশিয়াকে মার্কিন হুমকি়]

গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে মুহূর্তে মুহূর্তে ইউক্রেনের পরিস্থিতির আপডেট জানানো হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি তিরুমূর্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর মিনার্ভা পাঞ্জাবে খেলে যাওয়া রোল্যান্ড বিলালা বলছেন, সব ঠিক আছে! মিনার্ভার প্রাক্তন স্ট্রাইকার বলছেন, ”আমি আমার শহরে বসে যা দেখছি, সেটাই বলছি। আমার শহর একদম স্বাভাবিক।”

২০১৮-১৯ মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেন্নাই সিটি এফসি। মিনার্ভা পাঞ্জাবকে ১-৩ গোলে হারানোয় ট্রফি গিয়েছিল চেন্নাইয়ে। চেন্নাই সিটি ও মিনার্ভা পাঞ্জাব ম্যাচের ভাগ্যের উপর নির্ভর করেছিল ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্যও। একই দিনে একই সময়ে ইস্টবেঙ্গল ও গোকুলমের খেলা ছিল। লাল-হলুদ কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেজের ছেলেরা সেই ম্যাচ জিতলেও লিগ খেতাব আসেনি কলকাতায়। কারণ চেন্নাই সিটি এফসিকে পয়েন্ট নষ্ট করতেই হত। মিনার্ভা পাঞ্জাবকে তিন মিনিটের মধ্যে এগিয়ে দেন রোল্যান্ড বিলালা। কিন্তু খেলা যত গড়াতে থাকে ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে যায় মিনার্ভা। সেই ম্যাচ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। পত্রপত্রিকায় কালি খরচ হয়েছিল প্রচুর। অভিযোগ উঠেছিল মিনার্ভা ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছে চেন্নাইকে। সেই বিতর্কিত ম্যাচের অন্যতম গোলদাতা বিলালা এখন ফিরে গিয়েছেন জাপরজাইয়ে। মিনার্ভার প্রাক্তন ফুটবলার বলছেন, ”ইউক্রেন আর রাশিয়া ভাই-ভাই। দুটো দেশই প্রায় এক। আত্মীয়-স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ায়।”

রাশিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বিলালা আঙুল তুলছেন আমেরিকা ও সংবাদমাধ্যমের দিকে। আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলোর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার একটা বাতিক রয়েছে। আর সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। বিলালা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, ”আজকাল ভুয়ো খবরেরই বাজার। সংবাদমাধ্যম এখন বণিক সম্প্রদায়ের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।” অর্থাৎ বিলালা বলতে চাইছেন, যুদ্ধ নয়, ছায়াযুদ্ধের খতিয়ান বিক্রি করছে মিডিয়া।

মলদ্বীপের ক্লাব থেকে ভারতে এসেছিলেন রোল্যান্ড বিলালা। বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ছোটবেলায় তাঁকে খেলতে দেখে ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ভরতি করে দিয়েছিলেন বিলালার বাবা। ইউক্রেনের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়েও কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ইউক্রেনের রাজনীতিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বিলালা বলছেন, ”গোটা পার্লামেন্ট কিনে নিয়েছে আমেরিকা। সেটাই মেনে নিতে পারছে না রাশিয়া। তবে আমার যা মনে হচ্ছে যুদ্ধ হওয়া অসম্ভব।”

একসময়ে ইউক্রেনকে বলা হত ‘ফুড বাস্কেট অফ রাশিয়া’। সেই সূত্র ধরে বিলাল বলছেন, ”আমাদের দেশে সম্পদের অভাব নেই। কিন্তু আমাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কয়েকজনের লোভের জন্য গোটা বিশ্ব আজ ভুগছে। আমরাও ভুক্তভোগী। আপনার দেশেও ঠিক যেমন পরিস্থিতি, এখানেও তাই।”

রাশিয়া ও ইউক্রেনের ইতিহাস বহু পুরনো। এখন দুই ভূখণ্ড আলাদা হয়ে গেলেও ১৬৫৪ সালে ‘পেরেয়াস্লাভ চুক্তি’র শর্ত অনুযায়ী রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয় ইউক্রেন। তবে বিদেশনীতি ছাড়া প্রায় সবক্ষেত্রেই রীতিমতো ‘স্বাধীন’ ছিল দেশটি। এক সময়ে রাশিয়ার জারদের হয়ে বহু আঞ্চলিক বিদ্রোহ দমন করেছিল কসাক বাহিনী। মধ্য এশিয়ায় রুশ ও ব্রিটিশ প্রাধান্যের লড়াই, যা ‘গ্রেট গেম’ হিসেবেই পরিচিত, তাতেও বড় ধরনের ভূমিকা নিয়েছিল এই কসাকরা। সময়ে সময়ে পোল্যান্ড থেকে শুরু করে লিথুয়ানিয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করে। তারা কতটা সফল হয়েছিল সে বিষয়ে আলোচনা এই পরিসরে গৌণ। তবে জাপরজাইয়ে কসাকদের লড়াই ও রঙবেরংয়ের পোশাকে আতামান যুদ্ধপতিদের হুঙ্কার থেকে নাৎসি শাসনের ভয়াবহতার সাক্ষী থেকেছে দেশটি। তারপর নাইপার দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্তির সঙ্গেই দেশটিতে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। মিখাইল গর্বাচেভের ‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরেস্ত্রইকা’র আমলে আরও উগ্ররূপ নেয় ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদ।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভ করলেও রাশিয়ার সঙ্গে নাড়ির টান যেন আজও রয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের। বিশেষ করে পূর্বের দোনবাস অঞ্চলে রুশ ভাষাবাসীর মানুষজন নিজেদের রাশিয়ার অংশ বলে মনে করেন। অনেকেরই রয়েছে রুশ পাসপোর্ট। ঠিক যেমন কাঁটাতারের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ওপার বাংলার প্রতি শিকড়ের টান অনুভব করেন এপারে চলে আসা বহু মানুষ, ঠিক তেমনই কিয়েভ-মস্কোর টানা সীমারেখা যেন ধূসর হয়ে গিয়েছে। ডোনেৎস্ক ও লুহানস্কে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলেও কে যে কার সঙ্গে যুদ্ধ করছে, তা যেন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। বিদ্রোহীই-বা কে, রাষ্ট্রবাদীই বা কারা, প্রচলিত ধ্যান ধারণা যেন গোটাটাই পালটে দিয়েছে সময়। জনশ্রুতি অনুযায়ী যে দু’টি দেশ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ, সেই রাশিয়া ও ইউক্রেন এখন লাল চোখ দেখাচ্ছে একে অপরকে।

[আরও পড়ুন: ইউক্রেনে রুশ ফৌজের প্রবেশ, আটকে থাকা পড়ুয়াদের নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে উদ্বেগ প্রকাশ ভারতের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement