ধীমান রায়, কাটোয়া: দল বেঁধে রীতিমতো গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে চলছিল বন্যপ্রাণী শিকার। বিভিন্ন ধরনের পাখি থেকে গোসাপ। বেজি থেকে কাঠবিড়ালি, খটাশ - কিছুই বাদ যায়নি। নির্বিচারে চলছিল হত্যা। আর যাকে জীবিত ধরা সম্ভব হচ্ছিল, সেগুলিকে খাঁচাবন্দি করে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। প্রায় ৪০ জনের শিকারি দল বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে গ্রামে গ্রামে ঝোপঝাড়ে ঘুরে ঘুরে এভাবেই কার্যত বন্যপ্রাণী, পাখি হত্যা করেই চলেছিল। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় ওই শিকারি দলটিকে পাকড়াও করল বনদপ্তর (Forest Department)। উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক পশুপাখির দেহ। কয়েকটি জীবিতবস্থায় আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ৩৮ জনকে আটক করেছে। আটক করা হয়েছে দুটি মোটরচালিত ভ্যান।
জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের (Ketugram) কুমোরপুর গ্রামের কাছে রেলগেট থেকে কিছুটা দূরে বেশকয়েকজনকে কয়েকটি বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ মোটরচালিত ভ্যানে চাপাতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, কেতুগ্রামের কুমোরপুর এলাকায় কয়েকজন যুবক একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাদেরই চোখে পড়ে। দেখার পরেই তারা ওই মোটরভ্যান দুটি আটক করেন। সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ''এর পর দেখি দু-তিনটি গাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখির দেহ, গোসাপ, বেজি, কাঠবেড়ালি, বনবিড়াল থেকে নানা বন্যপ্রাণীর (Wild Animals) দেহ। কিছু জীবিত ছিল। সবমিলিয়ে কয়েকশো পশুপাখি শিকার করা হয়েছে। দেখার পরেই আমরা বনবিভাগে জানাই।"
[আরও পড়ুন: দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কেজরি, জামিন পেতে সোমবারই শুনানির আর্জি]
বনদপ্তর সূত্রে খবর, স্থানীয়রাই প্রথমে ওই গাড়িগুলি ও শিকারিদের আটক করেন। তার পর কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ৩৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক করা শিকারিদলের অধিকাংশই বীরভূম (Birbhum) জেলার বাসিন্দা। তারা সঙ্গে করে শিকার করার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসেছিল।
উদ্ধার গোসাপ, বেজি, কাঠবেড়ালি, বিভিন্ন পাখি। ছবি: জয়ন্ত দাস।
উল্লেখ্য, মাঝেমধ্যেই এভাবে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বন্যপ্রাণী ও পাখি শিকারের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আবার বিশেষ করে আদিবাসী (Tribal) সম্প্রদায়ের বিশেষ বিশেষ উৎসবের সময় শিকারের প্রথা রয়েছে। এনিয়ে বনবিভাগ থেকে লাগাতার প্রচারও করা হয়। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের (Wild Life Protection Act) তোয়াক্কা না করেই চলছে বেআইনিভাবে পশুপাখি শিকার। তবে সাম্প্রতিককালে এই ঘটনা সবচেয়ে বড় হত্যালীলা হিসাবে মনে করছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। পাশাপাশি একসঙ্গে ৩৮ জনকে আটক করাও বড়সড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়রা দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন।