shono
Advertisement
Hollong Bungalow

১৫ মিনিটে পুড়ে খাক! রংয়ের দাহ্য তরলে ভয়াবহ রূপ নেয় হলং বাংলোর আগুন?

রংয়ের কাজ চলাকালীন এসি বিস্ফোরণে পুড়ে ছাই হলং বাংলো।
Published By: Sayani SenPosted: 09:49 AM Jun 29, 2024Updated: 12:09 PM Jun 29, 2024

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বনের ছুটির অবসরে নতুন রংয়ে সাজা শুরু হয়েছিল হলং। সেই সাজই তার কাল হল। ছুটিতে বাংলো বন্ধ হওয়ার ৩ দিন পরই বেশ কিছু দরজা, জানলায় নতুন রংয়ের পোঁচ পড়েছিল। বাকি অবশ‌্য ছিল অনেকটাই। ইতি-উতি ছিটেফোঁটা ছড়িয়েও ছিল দাহ‌্য গাঢ় তরল। শর্ট সার্কিট থেকে ফিনকি দেওয়া আগুন ছড়িয়ে প্রথমে মেঝের কার্পেটে পড়ে। দাহ‌্য তরলের গন্ধে গতি বাড়ে আগুনের। সেখান থেকে ধরে যায় জানালার পর্দা। পর্দা থেকে এসির গ‌্যাস পাইপ। আর রোখা যায়নি। প্রথম এসি বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে মজুত রংয়ের ডিবেয় গিয়ে আগুন পড়ে। লেলিহান গ্রাসে চলে যায় প্রায় সম্পূর্ণ দোতলাটা। পরপর ঘরের বন্ধ এসি ফাটতে থাকে। নিগূঢ় অন্ধকার জঙ্গলে যেন দক্ষযজ্ঞ বাধে। দোতলা থেকে আগুন ক্রমে নিচে নামে। সব মিলিয়ে মাত্র ১৫ মিনিট সময় নিয়েছিল ৫৭ বছরের পুরনো গোটা বাংলোটা পুড়ে খাক হতে।

Advertisement

বনদপ্তর ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের কাছে। শিশু আর কিছু লুপ্তপ্রায় প্রজাতির কাঠে তৈরি আসবাব আর দেওয়ালজুড়ে ঐতিহ‌্য আর ইতিহাস লেগেছিল জলদাপাড়ার এই বন বাংলোয়। যাকে ঘিরে ছিল বনকর্মীদের আবেগ আর ভালোবাসা। জঙ্গলে পর্যটকদের বেড়াতে যাওয়া আপাতত বন্ধ। জঙ্গলের নিয়মেই প্রতি বছর তা বন্ধ থাকে ১৫ জুন থেকে ৩ মাস। মেরামত বা রং করার থাকলে এই অবসরে সেসব চলে। সেটাই চলছিল হলংয়ে। বন্ধ ছিল এসি, গিজার, আলো-পাখা সবই। বিদ্যুতের সংযোগ অবশ‌্য ছিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলার প‌্যাসেজের আলোটুকু জ্বলছিল।

[আরও পড়ুন: উল্লেখ নেই ৩৫৬ ধারার, রাজ্যের ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে নাড্ডাকে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় দলের]

প্রাথমিক অনুমান, কোনও ছেঁড়া তার থেকে শর্ট সার্কিট হয়। তার পরের ঘটনা সবার সামনে। ঘটনার সময় জানা যাচ্ছে, দুজন রেঞ্জ অফিসার ছিলেন বাংলোর বাইরেই। বিস্ফোরণ শুনে ঢুকতে গিয়ে দরজা বন্ধ পেয়ে ভেঙে ঢুকতে চান। কিন্তু ততক্ষণে সবটাই আয়ত্তের বাইরে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। দমকলও তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। বাকি রয়েছে ফরেনসিক রিপোর্ট জমা পড়া। তাতেই সম্পূর্ণ ঘটনা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনার দুদিন পর বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা পৌঁছে দাঁড়িয়েছিলেন ভস্মীভূত ঐতিহ্যের সামনে। কথা বলেছেন সারাক্ষণ সেখানে থাকা বনকর্মীদের সঙ্গে। এই বাংলো যাঁদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। জঙ্গলে অন্ধকারের মধ্যে আগুনের সেই ধ্বংসলীলার বর্ণনা তাঁরা মন্ত্রীর কাছে দিতে গিয়েও বারবার ফুঁপিয়ে উঠেছেন। তাঁদের কষ্ট গলা বুজিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীরও। আগুনের তাপ আর ভয়াবহতা এতটাই ছিল, যার জেরে কুঁকড়ে পুড়ে গিয়েছে বাড়িটির সামনে, আশপাশে থাকা গাছের ডালপালা-পাতাও। মন্ত্রীর কথায়, “আমি গ্রামের মেয়ে। কাঠের জ্বালে রান্না হতে দেখেছি। উনুনের সামনে সেই সামান‌্য তাপেই বসে থাকা যায় না। তাতে ওই লেলিহান আগুনের সামনে আশপাশের গাছপালাগুলোর কী অবস্থা হয়েছিল ভেবে দেখুন।”

প্রাথমিকভাবে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল, তা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে বন দপ্তর। তাদের দাবি, আগুন লাগানোর মতো ষড়যন্ত্র যদি হয়েই থাকে, সেক্ষেত্রে দোতলায় উঠে কেউ আগুন লাগাতে যাবে না। সেই আগুন একতলাতেই ধরে যেত। কিন্তু আগুন লেগেছিল দোতলায়। দাউ দাউ করে ধরে যায় গোটা বাড়িটা। তবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দমকল এলাকায় ঢুকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুই আর করা যায়নি। তদন্তে যাই হোক, নতুন করে সেই বাংলোকে সাজিয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনার জেরে বনদপ্তরের অধীনে থাকা সমস্ত বন বাংলো সার্ভে শুরু হয়েছে। কোথায় কোন বাড়ির মেরামতের জন‌্য কী কী দরকার তা খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার ‘বিপন্নতা’ নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট ‘পক্ষপাতদুষ্ট’! তোপ নয়াদিল্লির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • রংয়ের কাজের মাঝে এসি বিস্ফোরণ!
  • দাহ্য তরলের গন্ধে গতি বাড়ে আগুনের।
  • ১৫ মিনিটে পুড়ে খাক হলং বাংলো।
Advertisement