রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: নাম তার রাজা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটান। নিঃসঙ্গতা গ্রাস করেছে আষ্টেপৃষ্টে। কারণ, দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে তিনিই একমাত্র বাঘ। লেপার্ড আছে ১৫টি। কিন্তু, বনের রাজা বাঘ বলতে সেই একা। এখন বয়স ২৩। তবুও নিয়ম করে সপ্তাহে একদিন উপবাস করেন। ফাস্টিংয়ের দিন ঘন ঘন গ্লুকোজ দিতে হয়।
[আরও পড়ুন- ভাটপাড়ায় কামব্যাকের লড়াইয়ে গোপাল-হীন মদন!]
দেখভালের বিষয়টা ঠিকঠাক থাকলেও অনেক চেষ্টা করে তার নিঃসঙ্গতা কাটানো যাচ্ছে না। তাই রাজার নিঃসঙ্গতা কাটাতে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য বনদপ্তর। এপ্রসঙ্গে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “রাজার নিঃসঙ্গতা কাটাতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এখনও কেন্দ্রীয় জু অথরিটি অনুমোদন দেয়নি। অনুমোদন পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া এখানে আরও গন্ডার আর বাইসন রাখতে চাইছি। প্রয়োজনে আনা হতে পারে রাজার কোনও সাথী। কিন্তু, অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ২০টি সার্কাসের ১৯টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় সার্কাসের বাঘেদের পুনর্বাসনের জন্য এই দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেছিল বনদপ্তর। অলিম্পিক ও ফেমাস সার্কাস থেকে ১১টি আর নটরাজ সার্কাস থেকে ৮টি রয়াল বেঙ্গল টাইগারকে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসনের জন্য আনা হয়েছিল। তারপর ২০০৮ সালে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে আসে রাজা।
[আরও পড়ুন- যুদ্ধের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে পানাগড়ে ‘ব্রহ্মাস্ত্র সেনা’ পরিদর্শনে সেনাপ্রধান]
সুন্দরবনের ঝড়খালি থেকে এই রাজাকে আনা হয়েছিল এখানে। ঝড়খালিতে রাজার সামনের বাঁ দিকের একটি পায়ের থাবা কামড়ে খেয়ে নিয়েছিল কুমির।তখন থেকেই জখম রাজার ঠাঁই হয়েছিল এই দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে। তারপর একে একে সব বাঘ মারা গিয়েছে। কিন্তু, এখনও বেঁচে আছে রাজা। কাটাচ্ছে চরম নিঃসঙ্গতার জীবন।
দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে রাজার দেখভাল করেন বনকর্মী পার্থসারথী সিন্হা। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ও রাজ্য জু অথরিটির নির্দেশ মেনে প্রতিদিন রাজাকে আট কেজি মাংস খেতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ হাড় ছাড়া মাংস। বাকি মাংস হাড় সমেত। সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে উপোস। উপোসের দিন প্রয়োজন মতো গ্লুকোজ। প্রতিদিন দু’বেলা করে স্থান করাতে হয়। নখ খুব বড় হয়ে গেলে কেটে দেওয়া-সহ সব কাজ করতে হয়। এত যত্ন করি বলেই তো ২৩ বছরেও ফিগার ধরে রেখেছে রাজা। তবে তার নিঃসঙ্গতা রয়েছে। অন্যান্য জন্তু জানোয়ার থাকলে ও আরও বেশি রোলিং করত। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত। তাকাত অনেক বেশি।” জীবিত অবস্থায় রাজার এই নিঃসঙ্গতা কাটবে কিনা তা বলবে শুধু সময়।
The post একাকী অরণ্যে নিঃসঙ্গ ‘রাজা’, সঙ্গী খুঁজতে উদ্যোগ বনদপ্তরের appeared first on Sangbad Pratidin.