সুমিত বিশ্বাস ও অমিত সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: একদিকে মাথার উপর ৪৩-৪৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে জঙ্গলে আগুন (Forest Fire)। প্রখর দাবদাহের মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে পুরুলিয়া (Purulia) জুড়ে একের পর এক বনকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন বিট অফিসার থেকে রেঞ্জ আধিকারিকরাও। ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হয়ে জলশূন্য হয়ে যাচ্ছে শরীর। ঘনঘন ওআরএস খেয়েও দুর্বল ভাব কাটছে না। বারবার যেতে হচ্ছে শৌচাগারে। দিনরাত কার্যত টয়লেটে বসে থাকতে হচ্ছে, এমনও হচ্ছে। প্রখর দাবদাহের মধ্যে পুরুলিয়া জুড়ে আগুন নেভাতে গিয়ে এমনই শোচনীয় অবস্থা এখন বনকর্মীদের।
গত ১৩ এপ্রিল থেকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় তাপমাত্রা বেড়েছে অনেকটাই। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই জেলার বনভূমি (Forest) এবং বনভূমির বাইরে থাকা এলাকায় মোট ৪৬ বার আগুন লেগেছে। ফলে বনভূমি ও তার বাইরে থাকা জমি মিলিয়ে ১০০ হেক্টরের বেশি আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মোবাইল পুকুরে ফেলার কারণ জানিয়েও হল না লাভ, CBI হেফাজতে জীবনকৃষ্ণ]
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে পুরুলিয়া বনবিভাগে। কোটশিলা, অযোধ্যা, আড়শা, বাঘমুন্ডি, মাঠা, বলরামপুর, ঝালদা বনাঞ্চলে বারবার পুড়েছে জঙ্গল। কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের রঘুনাথপুর বনাঞ্চলের গড় পঞ্চকোট, বড়ন্তির কাছে রামকানালি, কাশীপুর, হুড়া ও কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের মানবাজারেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এই ‘গ্রাউন্ড ফায়ার’এ জঙ্গলে থাকা বন্যপ্রাণরা (Wild Animal) লোকালয়ে চলে আসছে। কয়েকদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে। কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের যে জঙ্গলে চিতা রয়েছে, সেখানকার বনভূমিও আগুনে পুড়েছে।
এই ‘গ্রাউন্ড ফায়ার’-এ জঙ্গলে থাকা হাতির দলেরও সমস্যা হচ্ছে। তারাও ক্রমশ লোকালয়ে চলে আসছে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র)মানসরঞ্জন ভট্ট বলেন, “এই প্রখর দাবদাহের মধ্যেই আমাদের কর্মীরা জঙ্গলে আগুন নেভাচ্ছেন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তবুও আমাদের তৎপরতার সঙ্গে কাজ চলছে।” ফায়ার ব্লোয়ার নিয়ে দিনে-রাতে আগুন নেভানোর কাজ করছেন বনকর্মীরা।
[আরও পড়ুন: শিক্ষার পর এবার পুরসভা দুর্নীতিতেও সিবিআই তদন্ত, নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
তবে গত দু-তিনদিন ধরে যা পরিস্থিতি, তাতে আর দিনের বেলায় আগুন নেভানোর কাজে নামতে পারছেন না বনকর্মীরা। সন্ধেবেলা থেকে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। ফলত একের পর এক বনভূমি পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ১৯৮ বার আগুন লেগেছে।এই মরশুমে এখনও পর্যন্ত মোট ২৫৬ বার। এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি প্রখর দাবদাহ ছিল পুরুলিয়াতে। এই সময় ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সর্বোচ্চ ছিল।