সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”তালিবান (Taliban) বদলায়নি। ২০ বছর আগেও তারা যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে।” নিজের জীবন দিয়ে একথা অনুভব করেছেন তিনি। খাতেরা হাশমি। প্রাক্তন আফগান (Afghanistan) পুলিশকর্মী। ঘরের বাইরে পা রাখা কর্মরতা এই মহিলাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়েও শান্তি হয়নি তালিবানের। শেষে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাঁর চোখদু’টিও উপড়ে নেয় তারা।
এই মুহূর্তে ভারতে রয়েছেন তিনি। প্রিয় স্বদেশভূমি জঙ্গিদের দখলে। সেখানেই রয়েছে তাঁর সন্তানরাও! এতদূরে বসে যাদের জন্য দৃষ্টিহীন চোখ দু’টি থেকে অবিরাম ঝরে পড়ছে অশ্রুধারা। এদিকে খবর পেয়েছেন, তালিবান তাঁর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার খবরে যারপরনাই অসন্তুষ্ট। দেশে ফিরলেই তাদের হাতে খোয়াতে হবে প্রাণ। একদিকে প্রিয় সন্তানদের কাছে ফিরতে চাওয়ার আকুতি। অন্যদিকে তালিবানের রক্তচক্ষু। দুইয়ের মাঝেয় সংশয়ে আচ্ছন্ন খাতেরা। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তালিবান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, ”তালিবানের কাছে একজন মহিলার সবথেকে বড় অপরাধ কাজে যোগ দিতে ঘরের বাইরে পা রাখা। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা এই মুহূর্তে দেশের আরও বহু মেয়ের সঙ্গে হয়ে চলেছে। কিন্তু তারা মুখ খুলতে পারছে না। কারণ তারা ভয় পেয়ে আছে।”
[আরও পড়ুন: নজরে তালিবান! এবার কাজাখস্তানের মাটিতে শক্তিপ্রদর্শন ভারতীয় ফৌজের]
খাতেরা হাশমির জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, তাঁর দুরবস্থার পিছনে হাত রয়েছে তাঁর বাবারও। তালিবানের সঙ্গে সাঁট করে তিনিই মেয়ের দিকে তালিবানকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। সেসব ভাবতে গেলে এখনও শিউরে ওঠেন তিনি। মনে পড়ে, একদিন কাজ থেকে ফেরার পথে বাড়ির একদম সামনে তাঁর উপরে চড়াও হয় তালিবান। প্রথমে গুলি করা হয়। তারপর ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তাঁর চোখ উপড়ে নেয় তারা।
আফগানিস্তান থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন খাতেরা। এরপরই তালিবান একে একে দখল করে নিতে থাকে আফগানিস্তানের নানা প্রদেশ। ক্রমে কাবুল। আফগানিস্তানে ফের শুরু হয়ে যায় পুরোদস্তুর তালিবান যুগ। আর ক্ষমতায় এসেই তারা আগে খোঁজ করা শুরু করেছে সেই সব মেয়েদের যাঁরা তাদের ফতোয়ায় কান দেননি।
[আরও পড়ুন: ডুবছে পাকিস্তান! ইমরানের আমলে বহুগুণ বেড়েছে ঋণের বোঝা, জানাল পাক স্টেট ব্যাংক]
খতেরা জানাচ্ছেন, ”শেষবার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা হয়েছিল দিন দশেক আগে। আমার সন্তানদের কাছ থেকে জেনেছি তালিবান এসে শাসিয়ে গিয়েছে ওদের। জানিয়েছে আমি দেশে না ফিরলে ওরা আমার সন্তানদের ক্ষতি করে দেবে। তারপর থেকে আমার সন্তানদের কোনও খবর পাইনি। হয়তো ওরা পালিয়ে গিয়েছে। কিংবা হয়তো ওরা আর বেঁচেই নেই।” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাতেরা। মনে করিয়ে দেন, তালিবান বদলাতে পারে না। মুখে যতই আধুনিকতা ও নারীর অধিকারের কথা বলুক, ওরা একই রকম নিষ্ঠুর রয়েছে।