কৃশানু মজুমদার: ”মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়। লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar) কণ্ঠই তাঁর পরিচয়। এছাড়া আর কীই বা বলতে পারি। ” ফোনের ওপার থেকে একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে উঠলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল (Asif Iqbal)। ”আপনাদের মুলুকের মতো পাকিস্তানেও আজ সকাল থেকে টিভি চ্যানেলগুলিতে লতা মঙ্গেশকরের খবর দেখানো হচ্ছে।” রবিবার বিকেল নাগাদ লাহোর থেকে ফোনে বলছিলেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বসিত আলি (Basit Ali)।
দুই প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারের কথার সুরই বলে দিচ্ছিল সুরের মূর্চ্ছনায় দুই দেশকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী। তাঁর প্রয়াণে এদেশের মতোই চোখের জল ফেলছে ওয়াঘার ওপার। উঠে আসছে জনশ্রুতি, ম্যাডাম নূরজাহানকে ‘দিদি’ বলতেন লতা মঙ্গেশকর।
[আরও পড়ুন: IND v WI: হাজারতম ওয়ানডে ম্যাচে রেকর্ড চাহালের, ভারতীয় বোলিং দাপটে বিধ্বস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ]
রবিবার সকালেই ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়বিদারক খবর। ভারত আজ রত্নহীন। সেই খবরের অভিঘাত কাঁপিয়ে দিয়েছে পাক-মুলুককেও। লতা মঙ্গেশকরের সম্মোহিত সুরে এখনও আচ্ছন্ন পাকিস্তান। পাকিস্তানের ক্রিকেট-জগৎ। বসিত আলি বলছিলেন, ”আমার আট বছরের মেয়ে ফতিমা লতা মঙ্গেশকরের গান শুনে আজ বিস্মিত। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল এই সুরেলা কণ্ঠ কার? মনে হচ্ছে একজন বাচ্চা গাইছে।” ফতিমা এই প্রজন্মের মেয়ে। লতা-ম্যাজিক হয়তো আজই প্রথম শুনছে। কিন্তু তাঁর বাবা বসিত জানেন এই কণ্ঠের জাদু।স্মৃতির পাতা উলটে বলছিলেন, ”একসময়ে যখন বিদেশে ট্যুরে যেতাম, তখন লতার গান শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যেতাম।” বসিতের অগ্রজ আসিফ ইকবালও স্মৃতিভারে কাতর। ইডেন গার্ডেন্সে টেস্ট ম্যাচ খেলে অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এখনও ভারত-পাক মহাযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলে আসিফ ইকবালের অবসরের কথা ওঠে।
সেই আসিফ ইকবাল বলছেন, ”কেবল একটা গান বা একটা সৃষ্টির মধ্যে এরকম এক শিল্পীকে আটকে রাখা যায় না। আজ যদি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে অন্য কোনও ক্রিকেটারের তুলনা করা হয় তাহলে কি ঠিক হবে? তাঁকে ঠিকভাবে শ্রদ্ধা জানানো কি হবে? সুনীল গাভাসকর, হানিফ মহম্মদ এঁরাও গ্রেট। কিন্তু এঁদের সঙ্গে কি কারও তুলনা টানা ঠিক? মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়- একথাটাই আসল কথা। লতা মঙ্গেশকরের গলাই তাঁর পরিচয়। শুধুমাত্র উপমহাদেশকে এক করে রেখেছিলেন তিনি, এ কথা বললে ঠিক বলা হবে না। আমার মতে, গোটা বিশ্ব তাঁর গানে মোহিত হয়েছিল। এরকম এক শিল্পীকে কোনও ভৌগোলিক ভূখণ্ডে আটকে রাখা যায় না। সম্ভবও নয়।”
মরুশহরে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কোচ হয়ে যাওয়া সাকলিন মুস্তাক (Saqlain Mushtaq) হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানালেন, ”বেদনাদায়ক খবর শুনে আমি শোকাহত।” তাঁর অনেক আগে পাকিস্তানের হয়ে খেলা বসিত আবার বলছিলেন, ”আমি তো লতাজি আর মুকেশের গান খুব শুনতাম। তবে জগজিৎ সিংয়ের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের সাজদা আমাকে খুব টানে। গজলের কথা, সুর মন ছুঁয়ে যায়।”
আসিফ ইকবাল, বসিত আলির মতো লতার প্রয়াণ সংবাদ ছুঁয়ে যায় বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকেও। গতকালই তিনি করোনার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। শারীরিক দিক থেকে পুরোদস্তুর ফিট নন এখনও। তবুও ঢাকা থেকে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনেই ঝরে পড়ল বিষাদের সুর, ”কোনও ট্যুরে অবসর সময়ে বা বাসে যেতে যেতে আমরা লতা মঙ্গেশকরের গান শুনতাম। আমাদের ফেভারিট পাসটাইমই ছিল লতা মঙ্গেশকর। আমরা রুনা লায়লা শুনেছি, শুনেছি সাবিনা ইয়াসমিনকে। কিন্তু লতা মঙ্গেশকর সব দিক থেকে আলাদা। তাঁর তুলনা কারও সঙ্গে হয় না। একটা বা দুটো গান নয়, এরকম অসংখ্য গান রয়েছে লতা মঙ্গেশকরের যা ভারতের মতো বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয়।”
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে কপিল দেব বলেছেন, ”লতাজি ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন।” একই সুর আসিফ ইকবালের কণ্ঠেও। তিনি বলছিলেন, ”শারজায় গেস্ট হিসেবে এসেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর ভদ্রতা, মিষ্টি ব্যবহার মন জিতে নিয়েছিল সবার।” বসিত আবার আসিফের কথার সূত্র ধরেই বলছিলেন, ”অস্ট্রেলেশিয়া কাপের সময়ে আমরা তো দেখেইছি লতাজি স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছেন। হোটেলে আমাদের সঙ্গে কথাও হয়েছিল। উর্দুতে বলেছিলেন, তোমাদের সবাইকে মুবারক জানাই।”
লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে এদেশের মতো শোকস্তব্ধ পাকিস্তানও। ছোট ছোট স্মৃতিকথায় ঝরে পড়ছিল অসম্ভব শ্রদ্ধা।