নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পুরুলিয়ার পর বীরভূমেও জোটে জট! কয়থার চিকিৎসক আবদুল করিমকে বীরভূম কেন্দ্রে প্রার্থী করছে ফরওয়ার্ড ব্লক। মঙ্গলবার এই তরুণ চিকিৎসক তার অনুগামীদের নিয়ে নলহাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দিলেন। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে বাংলা কমিটির রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় জানালেন, "আমরা কংগ্রেসকে মানি না। যারা গ্যাটচুক্তি করে দেশে কোম্পানিকে নিয়ে এসেছে, তাদের কোনও মতেই সমর্থন করব না।" তবে প্রার্থী বিষয়ে দু একদিনের মধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন।" এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ল কংগ্রেস। কারণ কিছুটা গায়ের জোরেই বীরভূম কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বামফন্টের বড় শরিক সিপিএম তাদের আসন সমঝোতার শর্তে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে নেমেছে। তবে এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা প্রার্থী মিলটন রশিদ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান,"প্রার্থী দেওয়ার পর সে নিয়ে বলব।" তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ দাবি করেন, "এটা একটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। রাজ্যস্তরেই দলীয়ভাবে কংগ্রেকে স্বীকার করছে না ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে যেখানে আমাদের রাজ্য থেকে আসন সমঝোতা হয়েছে সেই প্রার্থীর সঙ্গে আমরা সর্বতোভাবে থাকব।"
বীরভূম কেন্দ্রটিকে নিজেদের দখলে রাখতে চেয়েছিল বামফ্রন্ট। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র জেলা সফরে এসে সে কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তার পরেও তিনি জানিয়ে দেন, "সমঝোতার শর্তে আমরা জেলায় কংগ্রেসকে মেনেছি।" যদিও গত লোকসভায় সিপিএমের প্রার্থী থাকলেও কংগ্রেস আলাদা করে প্রার্থী দেয়। এদিকে বামেরা বীরভূম কেন্দ্র পাবে এবং গতবারের মতন এবছরও এক তরুণ চিকিৎসককে তারা প্রার্থী করবে এই আশা করেছিলেন নলহাটি কয়থার চিকিৎসক আবদুল করিম। সে নিয়ে নাম ঘোষণার আগে তিনি গাড়িতে নিজের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স লাগিয়ে নলহাটি দুই এলাকায় প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই মিলটন রশিদকে প্রার্থী বলে ঘোষণা করে দেয় কংগ্রেস। ফলে কিছুটা আশাহত হন তরুণ চিকিৎসক। জানিয়ে দেন কোনও রাজনৈতিক দল তাঁকে সাহায্য না করলে তিনি প্রার্থী হবেন না। এরই মাঝে ফরুয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। মঙ্গলবার নলহাটিতে দলের দপ্তরে তিনি পতাকা তুলে নেন। তাঁর অনুগামীরা তাঁকে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের ফরওয়ার্ডব্লকের প্রার্থী চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করে দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: প্রচারে বেরিয়ে মহিলাদের চুমু, পিঠে হাত খগেনের! বিজেপি প্রার্থীর কাণ্ডে বিতর্ক তুঙ্গে]
সে প্রসঙ্গে আব্দুল করিম জানান, "পারবই এমন কোনও কথা নেই। পাশে আছি এটুকু বোঝাতে রাজনীতিতে আসা। এলাকার জনগণ আমাকে চাইছে। এটা ভয়েস অফ পাবলিক। কারণ আমি গত কয়েকবছর ধরে যেভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে সেবা করছি। কিন্তু জেলায় আইপিএস থেকে অভিনেত্রী আসছে। গত ১৫ বছর ধরে সাংসদ থেকেও এলাকার কোনও কাজ করেনি। ভোটের সময় ছাড়া আসে না। তাই ভূমিপুত্র হিসাবে আমার রাজনীতিতে আসা। আমি জনসেবক হতে চাই।" ফরুয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় জানান, "তৃণমূল থেকে শ’চারেক লোক এদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। তবে আবদুল করিম সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে রাজ্য নেতৃত্ব।" দীপকবাবু মুখে একথা বললেও জেলা কমিটির তরফে আবদুল করিমকে প্রার্থী চেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাল জেলা ফরওয়ার্ড ব্লক। অন্যদিকে এই যোগদানে নরেন চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত থেকে জানান, "ভারতীয় সংস্কৃতি নষ্ট করছে বিজেপি। কংগ্রেসের গ্যাটচুক্তির হাত ধরে দেশকে বেচে দিচ্ছে তারা। সেই পথেই চলছে দুর্নীতিবাজ রাজ্যের তৃণমূল। এই মৌরসীপাট্টা ভাংতে দু একদিনের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে আমাদের মতামত স্পষ্ট করব।"